আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে www.leoirfan.tk
ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। এ প্লাস পাবার খুশিতে ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে ক্যামেরার সামনে ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছে। আগামীকাল দেশের সকল পত্র পত্রিকাতে হাসিমাখা মুখের এই ছবিগুলো ছাপা হবে। মিষ্টি দোকানে মানুষের ভীঁড় লেগে থাকবে। বিকালের মধ্যেই দোকানের সব মিষ্টি শেষ হয়ে যাবে।
টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির মাঝে তন্নী দূরে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের মাঝখানে নিজেকে একবার কল্পনা করল। কল্পনা করতেই ওর চোখ ভিজে ওঠে। বাসা থেকে বার বার ফোন দিচ্ছে। তন্নী ফোন ধরছে না।
বাসার সবাই নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে। করলে করবে ও কিছুতেই ফোন ধরে রেজাল্টের কথা বলতে পারবেনা। তন্নী ওড়না দিয়ে চোখ মুছল। চোখ মুছে এলোমেলো পায়ে বাসার দিকে হাঁটতে লাগল।
বাসায় ঢুকতেই তন্নী বাবা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
- কাঁদছিস কেন মা?
-- বাবা আমার রেজাল্ট ভালো হয়নি।
- কত পেয়েছিস রে মা?
-- ৪.৩০। বাবা আমি ভালো কোথাও পড়তে পারব না।
- মন খারাপ করিস না মা। চেষ্টা কর তুই অবশ্যই পারবি।
তন্নী তারপরও কাঁদছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তন্নীর মা মেয়ের রেজাল্টের খবর শুনতেই রেগে গেলেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে ঘর গরম করে ফেললেন। এই মেয়েকে আর পড়াশুনা করানোর দরকার নেই।
সারাদিন বসে বসে খাবে আর টিভি দেখবে। এহহহহ বাপের মনে হয় জমিদারী আছে। ওর জন্য ছেলে দেখো ওকে বিয়ে দিয়ে দেই। ঘাঁড়ের উপর বসে বসে আর খেতে হবেনা।
মায়ের চেঁচামেচিতে তন্ময় নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসে।
আহ মা থামো তো। অনেক হয়েছে। ওর এমনিতেই মন খারাপ তুমি চিৎকার করে ওর মন আরো খারাপ করে দিচ্ছো। রেজাল্টই তো খারাপ হয়েছে। এটা এমন কোন বড় ব্যাপার না।
এই আয় তুই আমার রুমে আয়। একদম মন খারাপ করবি না। তন্ময় বোনকে জড়িয়ে ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেয়। ভাইয়ের সাথে কথা বলে তন্নীর মন কিছুক্ষনের জন্য ভালো হয়ে যায়।
রাতে সবাই টেবিলে খাবার খেতে বসেছে। তন্নীও সবার সাথে খেতে বসেছে। আজ বাসায় মুগ ডাল দিলে ইলিশ মাছের মাথা রান্না হয়েছে। ইলিশ মাছের মাথা আবার তন্নীর খুব পছন্দের। তন্নী নিজ হাতে মাছের মাথা নিজের প্লেটে নিয়ে খেতে লাগল।
তাই দেখে মা আবারো খেঁপে গেল, এমন বেহায়া মেয়ে আমার জীবনেও দেখিনি। মাছের মাথাটা তোর বাবার জন্য রেখেছিলাম। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তাই নিয়ে কোন আফসোস নেই। বেশ তো মাছের মাথা খাওয়া হচ্ছে। মায়ের আচরনে তন্নীর চোখে পানি এসে গেল।
তারপরও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খাওয়া শেষ করল। হাত ধুয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
পরদিন সকাল হতেই বাসার সবাই দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে। কিন্তু তন্নী দরজা খুলছে না। শেষমেশ উপায় না দেখে দরজা ভেঙ্গে ফেলা হল।
তন্ময় দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতেই দেখে তন্নীর নিথর দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তন্ময় বোনকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল।
তন্নীর মৃত্যুর পর থেকে তন্ময় আর পড়াশুনা করতে পারেনা। বই খুললে তন্নীর নিথর দেহ চোখের সামনে ভেসে উঠে। তন্ময় প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র ছিল।
কিন্তু সেই ছেলে শেষ বর্ষে এসে পড়াশুনা ছেড়ে দিল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে লাগল।
পঁচিশ বছর পরঃ
তন্ময় বারান্দায় বসে আছে। আজ তন্ময়ের একমাত্র মেয়ে তিশার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। তন্ময় মেয়ের রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছে।
তিশা ঘরে ঢুকতেই বাবাকে জড়িয়ে ধরল।
- কি হয়েছে রে মা?
-- বাবা রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে।
-- কত পয়েন্ট পেয়েছিস রে মা?
-- ৪.৩০
তন্ময়ের বুকটা কেঁপে ওঠে। পঁচিশ বছর আগে ঠিক এই সময়ে তার আদরের বোনটা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছিল। তন্ময় মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল।
খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস রে মা। চল মা বাইরে খেতে যাই। আজ এই খুশিতে সেলিব্রেট করি। তিশা বাবার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে আর বাবা কিনা সেলিব্রেট করতে চাইছে।
এটা কিছুতেই ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা।
তিশা বাবার হাত ধরে হাঁটছে আর আইসক্রীম খাচ্ছে। তন্ময় মেয়েকে খুশি রাখার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তন্ময় চায় না আবারো পঁচিশ বছর আগের ঘটনার পূনরাবৃত্তি হোক। তন্নী ওদের ছেড়ে চলে যাবার পর তন্ময় পড়াশুনা ছেড়ে কিছুদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালো।
তারপর নিজ চেষ্টায় ব্যবসা শুরু করল। আজ তন্ময় দেশের নামকরা একজন ব্যবসায়ী। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়া শিক্ষার্থীরা তন্ময়কে স্যার স্যার বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে যায়। তন্ময় টাকার পাহাড় বানিয়েছে কিন্তু তার কোন ব্যবসায় ডিগ্রী নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কারো কোন ব্যবসায় ডিগ্রী নেই।
কিন্তু তারপরও তারা সফল।
কাগজের একটা সার্টিফিকেট মানুষের ভাগ্যকে খুব একটা পরিবর্তন করতে পারেনা। জীবনে সফল হতে হলে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন, আমি পারব। আমি পারব এই কথাটাই একটা মানুষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। ঠিক যেমনটি পেরেছিল বাংলাদেশের একজন সফল ব্যবসায়ী আকিজ মিয়া।
যার কিনা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিলনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।