I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.
বাসটা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লোক নেমে গিয়েছে, খালি হওয়া সীট ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত আগাবে না। প্রচন্ড গরম, পানি পিপাসা পেয়েছে শান্ত’র। জানালার পাশে বসা ভদ্রলোক এর অলমোস্ট গায়ের উপর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে এদিক ওদিক দেখলো কোনও ফেরিওয়ালা পানি বেচে কিনা। এর মধ্যেই হাতের ফোনটাতে ঝংকার বেজে উঠলো।
জিটকে তিতিরের মেসেজ।
“আর কতক্ষণ?”
দ্রুত হাতে টাইপ করতে করতে কোণা চোখে শান্ত দেখলো পাশের লোকের উঁকিঝুঁকি তার ফোনের স্ক্রীনের দিকে। ‘দেরী আছে। বাস থেমে আছে। কিছু খালি সীট ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ার কোনও লক্ষণ দেখছি না।
’
“বাহ, আমি ততক্ষণ কী করবো?”
‘আমার সাথে গল্প করবি। ’
“বেশ, ফোন করো। ”
‘না রে ফোন করা যাবে না। টাইপ করেই বলতে হবে, এখানে অনেক লোক। হুদাই মানুষকে কৌতুহলী করার মানে হয়না।
’
“আমার মন খারাপ হচ্ছে। কতক্ষণ থেকে অপেক্ষা করে আছি!”
‘আচ্ছা তুই কি কখনও লোকাল বাসে উঠেছিলি?’
“কিভাবে উঠবো? আমাকে কি নিয়েছিলে কখনও লোকাল বাসে?”
‘যারা রেগুলার লোকাল বাসে উঠে, তাদের ফিলোসফির সাথে বাকিদের ফিলোসফি’র সিগনিফিক্যান্ট ডিফারেন্স আছে বলে আমার ধারণা। ’
“কিরকম?”
‘যেমন ধর সেন্স অফ টাচ। বাসে যারা রেগুলার চড়ে, তারা শরীরে অন্যের স্পর্শে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে তাদের এই সেন্সটা অনেকখানিই সংবেদন হারায়। যে রেগুলার পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে চড়ে, তার খুঁতখুঁত স্বভাব কম থাকাই স্বাভাবিক, বাকিদের চেয়ে।
একই ভাবে সেন্স অফ স্মেল, স্পেশালি ঘামের গন্ধ’
“উফ, প্লীজ থামবা? অন্য কথা বলো। বাসের মানুষগুলো কেমন?”
‘এই যেমন আমি এই বাসে এখন একজনই, যে বাসে বসে চ্যাট করছি। ’
“হা হা হা, কিভাবে বুঝলে? অন্যদের সব কাজকর্ম বুঝি তুমি দেখতে পাচ্ছ?”
‘ছোট বাসে একনজরে সব দেখা যায়। আমি জানি, আমার পাশের দাড়িটুপিওয়ালা ভদ্রলোক ভাবছেন আমি একজন নাস্তিক শাহবাগী। ’
“হা হা হা, বাড়াবাড়ি।
”
‘উহু, সে বারবার আমার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। সেজন্যই বাংলায় না লিখে ইংলিশে টাইপ করছি। ’
“বাসে মহিলা কয়জন?”
‘মহিলা আছে তিনজন। ’
“আচ্ছা ঐ তিনজন মহিলা কি ড্রাইভারের পাশের কোনও মহিলা রিজার্ভ সীটে বসেছে? আমি একবার দেখেছিলাম সেরকম। ”
‘সরি তিনজন না, চারজন মহিলা।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ’
“মহিলাগুলো কি শাড়ি পরা? ঘুমাচ্ছে? কোলে কি বাচ্চা? সাথে কি হাজব্যান্ড আছে?”
‘ধুত্তর এতকিছু লক্ষ্য করেছি নাকি?’
“ওমা তুমি যে বল্লে ছোট বাসে সব দেখা যায়?”
‘সব দেখা যায় মানে সব মানুষগুলোকে দেখা যায়, ওদের মাথা দেখা যায়। তবে তারা কেউ চ্যাটিং করছে না। আমার বামদিকের এক ছেলে মাত্র ফোনে ফেইসবুক ব্রাউজিং শুরু করলো। ’
“ওরে বাবা, এত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছো? স্টুডেন্ট নিশ্চয়ই।
”
‘হুম। ’
“নাস্তিক শাহবাগী?”
‘মনে হয়না। ’
“আচ্ছা ঐ বাসে যদি আমি তোমার পাশে বসতাম, তাহলে তোমার হাত ধরতে পারতাম?”
‘হুম, পারতি। কেউ দেখতো না। ’
“কি বলো? তারপরও, লোকজন দেখলে?”
‘এত ঘেঁষাঘেঁষি এখানে, কেউ মাইন্ড করতো বলে মনে হয়না।
’
“বাব্বাহ, এমন জায়গাও বাংলাদেশে আছে, ঘেঁষাঘেঁষি করলে কেউ মাইন্ড করে না? চুমু খেলে? ওখানে তোমার পাশে বসে আমি তোমাকে চুমু খেতে পারতাম?”
‘নাহ, সেটা হবেনা। চুমু চলবে না। ’
“ঠিক আছে, হাত ধরে রাখলেই চলবে। বাসের টিকেট কি আগে থেকে করে রেখেছিলে নাকি উঠে করেছ? নাকি টাকা দিয়েছ?”
‘বাসে উঠে টিকেট কাটা লাগে। তুই তো দেখি কিছুই জানিস না।
তোকে নিয়ে একদিন বাসে উঠতে হবে। ’
“জানিনা মানে? আমি জানি ৬ নম্বর বাস মিরপুরে যায়। ”
‘ভুল জানিস। ৬ নম্বর বাস যায় গুলশান বনানীর দিকে। ’
“এটা কয় নম্বর?”
‘জানিনা।
বাসের কন্টাক্টার কে জিজ্ঞেস করলাম, সেও জানে না!’
“হা হা হা, ব্যাটা কি চাকরি পাওয়ার জন্য ইন্টার্ভিউ দেয়নাই?”
‘নির্ঘাত রেফারেন্সের চাকরি, হে হে হে। ’
“আর কতক্ষণ? আর কতদূর?”
‘আমি তো মাত্র নামলাম। হাসপাতালের সামনেই। এখন লিখতে পারছি না। এক থেকে পঞ্চাশ গুনতে থাক।
আমি আসছি। ’
ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে শান্ত বেলীফুলের মালার দাম দিলো। বর্ষার প্রথম বেলীফুলের মালাটা ওকেই কিনে দিতে হয়। একবার ভুলে গিয়েছিলো, তিতির রাগ করে লম্বা চুল কেটে ফেলেছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।