সারা দুনিয়াতে এরকম নজীর নাই। ২১শে ফেব্রুয়ারী শুধু আমাদেরই অহংকার আর আবেগকেই ধারন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দুনিয়াব্যাপী আমাদের এই অহংকারের স্বীকৃতি মাত্র। কিন্তু আমরা বর্তমানে সেই আবেগ কে কতটুকু ধারন করছি?
ঢাকা শহরের কয়টা বিজ্ঞাপন, সাইন বোর্ড বাংলায়। কোন কোন জায়গায় এমন অবস্থা বাংলা একটা সাইনবোর্ড আপনার চোখেও পড়বে না।
পড়বে কিভাবে? সাইন বোর্ড বাংলা হলে কি জাত থাকে? আধুনিক শপিং মল গুলোতে গেলে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও আপনি একটা বাংলা সাইন বোর্ড খুজে পাবেন না। সে দিন চট্টগ্রামে একটা শপিং মলের ফুড কোর্টে খেতে বসে বহু কষ্টে দেখলাম একটা খাবার দোকানের নাম বাংলায় লেখা। তাদের দোকানেই খেতে বসলাম। খাওয়ার শেষে ভাবলাম ইংরেজির এই ভীড়ে যে লোক বাংলায় নাম লিখেছে তাকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার। আশ্চর্য হওয়ার পালা।
দোকানের মালিক কে নাকি বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার জন্য কৈফিযত দিতে হয়েছে। কারন এতে মারকেটের মর্যাদাহানি হয়েছে বলে মালিক পক্ষের ধারনা। ভাবলাম...... এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।
একটা নতুন ব্যবসা খুলবেন, দোকান দিবেন, শিল্প কারখানা কি ব্যাংক স্থাপন করবেন? ইংরেজি নাম না হলে জমে না। ইংরেজি আধুনিক।
আর বাংলা নিতান্ত ক্ষ্যাত! শাহজালাল আন্তরজাতিক বিমানবন্দরের (জিয়া আন্তর্জাত) নাম যখন আরবিতে লেখা হল তখন এর প্রতিবাদ করে বহু কলমের কালি আর পত্রিকার পাতা নষ্ট করা হয়েছে। বহু বুদ্ধিজীবীর ঘুম তখন হারাম হয়েছিল। একদিন টি এস সি'র চায়ের দোকানে দুই আঁতেলকে বলাবলি করতে শুনলাম এর হন্য কি আমরা জন্য দেশ স্বাধীন করেছি? এই জন্যই কি ৫২ এসেছিল, ৭১ এসেছিল? একটা বিমনা বন্দরের নাম আরবীতে লেখায় এক লহমায় ৫২, ৭১ সব কিছু একসাথে মিথ্যে হয়ে যায় তা আমার এই নিরেট মাথায় ঢুকে না।
বাচ্চারা এখন ইন্ডিয়ান চ্যানেলের কল্যাণে বাংলা শেখার আগেই হিন্দি শিখে। বউ ঝি রা হিন্দি বলতে পারা গর্বের ইংগিত দেন।
টিন এজার রা একে অপরকে ক্ষুদে বার্তা পাঠায় হিন্দিতে। হিন্দি সিনেমা হিন্দি সিরিয়াল, হিন্দি চ্যানেল এই হল আমাদের নগর জীবন। ইশকুলের সাংস্কৃতিক অনুষঠান, ঘরোয়া গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কোন জায়গাটায় বিজাতিয় ভাষা কে বাদ রেখেছি? সেদিনে পুলিশদের এক অনুষ্ঠানে গেলাম। ভাবলাম এখানে হয়ত হিন্দী হতে নিষ্কৃতি পাব। না দেখলাম ইনারাও কম যান না।
নিজের ছেলে মেয়েদের কে আমরা ভর্তি করাই ইংরেজি ইশকুলে। না করাতে পারলে করাতে যেপারিনি এজন্য আক্ষেপের শেষ নাই। ভাবতে অবাক লাগে এই জাতি নাকি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে! কাদের জন্য দিয়েছে? কত অর্থহীন করে দেয়া হচ্ছে এই জীবন দেয়া।
দেশের ব্যাংক বীমা শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবার নাম করে ইংরেজীতে। তা বাজারজাত করে ইংরেজিতে।
বিশেষ করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো এ ব্যপারে এক কাঠি সরেস। ইংরেজী না হলে তাদের সেবা মান যে তলানিতে পড়ে যায়। বাংলা এমন এক অচ্ছুৎ ভাষা একটা সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানে সেবার মান প্রকাশ করতে অক্ষম। কোন প্রতিষ্ঠানের নাম যদি বাংলা হয় তাহলে তা নিতান্তই সেকেলে। আধুনিকতা মানেই হল ইংরাজী।
মাঝে মাঝে আমার প্রশ্ন জাগে যখন ইংরাজীও পুরনো হয়ে যাবে তখন আমরা কি করব? তখন কি এসিরীয় কিংবা গ্রীক ভাষা শুরু করব! বড়ই গতিশীল আমরা। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের গতি পিছনের দিকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।