উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি
সমুদ্র দৃশ্যের নর্তকী
আজ সন্ধ্যার নিটোল ঢালুপথ বেয়ে উঠে এসেছে দেবদূত
সমকালের কলঙ্ক মুছে
শূন্যতার শিহরণে কেঁপে উঠছে পেরেক ফোটানো দশটি আঙুল
স্ফীত বাহুতে সুগভীর সহমর্মিতা
ঘন জঙ্গলের অন্তরালও খুলে দিয়েছে তার সমস্ত বিস্তার
পেরেকের কম্পিত সিঁড়িতে
নেচে উঠছে আজ কণ্ঠ থেকে বের হওয়া রক্তের ফিনকি
নিজের উন্মত্ত শিরায় ফুটেছে কোমল রোদন
অগ্নিমত্ত প্রণয়ীর কাছে চুপ করে আছে বিশুদ্ধ ভঙ্গিমা
সে আমার দূরবর্তী অন্ধকার, বিলাপকারিনীর ঘুমিয়ে পড়া দেহ
আজ নেচে উঠবে সমুদ্র দৃশ্যের নর্তকী
কণ্ঠরোধী সকল দৈত্যরা একে একে উঠে আসবে আসরে
আমরা কুহকী পাখির আত্মায় গেঁথে রাখছি নজরানা
রক্তের কণায় কণায় ফুঁসে উঠছে ক্রোধ, রুপ কাতরতা
আকাঙ্ক্ষা
প্রকাশ্যেই চাই
নিঃসঙ্গ কচি পাতার গ্রীবা, দয়িতার শোভায়
ফুটে উঠলে মৃত্তিকার রোদস্নান
ভাবি, দয়মন্তীর রূপ
তার স্নেহের কাছে আমি হাজিরা দিয়ে
জমা রেখেছি
জ্যোস্না সড়কের ধ্বনিবিহীন কোমরের নাচ
অনন্ত যাত্রাপথের চিহ্ন
দণ্ডক রাজার সৈন্যরা
এখনও কবজির ভেতর পুষে রাখে সূর্যদীঘি
দমকা হাওয়া এসে
জানালার পাশ থেকে সরিয়ে দিয়েছে দৈন্যতা
আমিও তাঁবু গেড়েছি অনন্ত জলাধারের পাশে
রূপকানাই এসে বসে আছে
তোমার পিঠে ভেসে উঠা শোভনের ঘাটে
মায়াবী জলের নিচে আমাদের ধুলোরেখা নাই
তীর
সভ্যতার কানা পয়সা আমি ফুটো করে দেখি
আমি হরিণের ঝাঁকে মিশে যেতে পারি
রক্তমাখা সময়ের দাগে আমি মৃত্তিকার শরীর
আমি রূপময়ীর হস্তরেখায় ছায়াবাঘিনীর দিকে
ক্রমে ক্রমে আলো হয়ে যাই
আমি শব্দ তরঙ্গের প্রাণ সৃজনে মত্ত
আমার কোন প্রকাশভঙ্গিমা নাই, আছে সাধুর অন্তর
আছে রূপবিন্যাসের চন্দ্রপ্রণালী
স্তরে স্তরে বলিরেখা
যার সীমারেখা নাই, তার ফুটে ওঠা মুখের আভাসে
তুমি আমার বৃত্তাকার অট্রহাসি
সাজানো রূপময় সিঁড়িগুলি বেয়ে বেয়ে আমি যাই
অনন্ত আধারের কাছে, তার পায়ের পাশে
আমি পড়ে থাকা উপকথা, অসীমে ছুড়ে দেয়া তীর
পড়ে আছি বেহালার করুণ সুরের ভেতর
আমার দূরের আনন্দ নাই, কাছের শবইশকুলে
আমি নাচ শেখাই, আমি নাচের মুদ্রায়
শশীমালার হাত ফসকে যাওয়া দীর্ঘ কালো রাত
পাথরে নিশীত রাত্রিমূর্তি
পাথরে নিশীত রাত্রি মূর্তির আমন্ত্রণে
ডাকপিয়নের ডুবন্ত দেহ থেকে উঠে আসে কোমলতা
অদেখা মুখের চিঠিতে ভরে ওঠে শহর
কোথাও কাচের জানালায় গভীর নৈঃশব্দ্য ভেঙে পড়ে
জেগে ওঠে বিলি হয়ে যাওয়া চিঠির বিরহ
যে সকল উলুবনে হাওয়ার পাখিতে ছেয়ে যায়
তাদের হাড়ের ভেতর আমাদের দীর্ঘছায়া
কুকড়ানো ফুল
নদী ঢেউয়ের পুরাতন চুম্বন
আমি আতাফলে চোখ রাখি
দেখি পৃথিবীর মতই এক একটা আতাফল আমাদের
হৃদয়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে
আমরা শবাগারে দাঁড়িয়ে এও ভাবি ছাই রঙের
বেড়ালগুলো মাছের আঁশ লোভী
সৌন্দর্য বর্ধন
সৌন্দর্য বর্ধনের জলপাই ট্রাকে বসে আছে
সাধুভাবের জঙলাপনা
তাকে পোষ মানাতে আমরা দেহ খুলে দিই
স্বজনের হাড়-মাংসের উন্মত্ততা
আমাদের ফাঁদে ফেলে ছুঁড়ে দেয় কুসুমের
প্রীতি বন্ধন
দীর্ঘতর পথ
আমাদের করোটির ভৌতিক সেতু বিন্যাসে
মিশতে চায়
আমরা দেখি
রঙফ্রেমের মিউজিক্যাল দেয়ালে
প্রাচীন বংশের কৌলিন্য গ্রাসের ছাপ
মানুষ ও বাঘ
দূরের জানালায় ফুল তোলা হাত
রাতের নিজস্ব আমন্ত্রণ
খোলা দিগন্তে সূর্যান্তের নিচে বিষাদের নটিনী
যখন চোখে সুরমা লাগায়
তখন রাজদরবারে মহিনীর চপলতা বাড়ে
আমাদের ঘাড় থেকে পায়রাগুলো
উড়ে যায় দূরের দেশে
আমরা দেখি গোধুলির নোঙর ছেড়ে চলে যাচ্ছে
গভীর আনন্দ
বিবর্তনের ডানা থেকে খসে পড়া স্বাধীনতা
সভ্যতার গর্ভে ফুটে উঠা টিলার আকাশ
আমাদের তাবুর ভেতর
সার্কাসের বাঘ এসে ঘুমিয়ে রয়েছে
বাঘ জেগে ওঠে প্রতিদিন
আমাদের মত সেও প্রতিদিনই মানুষের রূপ ধরে
বাদামী কাঠের ঘর
আজকে আমারও আরাধনার মাঝরাতে উথলে উঠছে
নৈঃশব্দ্যের প্রসন্ন কিশোরী, তার কাছেই জামিন রাখছি
হাড়ের মালা, পাঁজরের দীর্ঘ নদী।
যার কাছে জমা ছিল অচেনা পাখিদের আকাশ পথ, সেও
হারিয়ে গিয়েছে, শুধু জেগে আছে মলিন জবা।
যাদের কখনও রাত ফুরাই না, তাদের অন্তরে কাছাকাছি
বসে থাকে তোমার আমার নিঃসঙ্গ সহস্র বেড়াল।
প্রতিদিন আমাদের দুঃখগুলো যেই ষোড়শী কোলে নিয়ে
বসে থাকে জলপাই গাছের তলে, তার পায়ের কাছে আজ
বিষাদের শ্রাবণ এসে ঘুমিয়ে গেছে।
আজকে একাকী দাঁড়িয়ে থাকবে তার বাদামী কাঠের ঘর।
শ্রীমতি রাধিকা
দেহ কুঠারে জাগছে অলৌকিক হরিৎ সন্নাসী
প্রথা বিলোপের সিলমোহরে
ভেসে উঠছে বিলুপ্ত পথ, বিলাপের ঋতু।
আত্ম মর্যাদার পেন্ডুলামে উঠে আসছে
সড়ক চিহ্নের ধূসরতা, মমিদের ভ্রমণ সঙ্কেত।
বৃক্ষদের প্রণয়ী খুলে দিচ্ছেন
গ্রীবার পৌরাণিক আঁধার, কেঁপে উঠছে
আমাদের হাড়ের মন্দিরা
ঈশ্বরসাধকের চিবুক ও স্বভাবের শ্রীমতি রাধিকা।
দেবতা ঘর
এখন দিনের বেলায়ও
দূরের নৈশতা চিন্তার কুয়াশায় ঢেলে দিচ্ছে বৈধ কাম
মৌনতার দেয়াল ভেদ করে সূর্য উঠছে
অপরিসীমার মাদলে বেজে উঠছে ঘড়ির দেহ
রাত আসবে যখন তখন শ্রীমুগ্ধ দেবতার ঘাড়ে
ঝোলানো থাকবে সর্পরানীর ঘনিষ্ঠতা
আমাদের দেহমন্থনকৃত অভীপ্সা উড়ে গিয়ে বসবে
রন্ধনশালার জানালায়
ভোরের দিকে দেবতা ঘরে চূড়ির শব্দে দিন ফুটবে
বসন্ত বরণ তৈলচিত্র
বসন্ত হাওয়ায় ভেসে আসছে
মন মোহিনী
কুয়াশা ভেদ করে দুলে উঠছে
আমাদের অন্তর জননী
তাঁর স্তনে নতুন এক পৃথিবী
রক্তমাখা মৃত্তিকার জঠর থেকে
উঠে আসছে
সহস্র সন্তানের রূপবতী
শিকলের ঢেউ
আমি অসংখ্য হলুদ পাতার স্তূপ
মাড়িয়ে
ছুঁয়ে আছি জননীর গ্রীবাধার
যতই রাত গভীর হয়
মৈথুনের নৌকাগুলো একাকি
ভেসে ভেসে দখিনে যায়...
খুলিসুন্দর লিমিটেড
নিজের দৈন্যতা ছুঁয়ে ফিরে যাই নীলাজ্ঞ্চলে
বসে থাকি নিজেরই তৈরি করা ছকের কেশরে
মালাবদলের ক্ষণ পেরিয়ে যায়
কপাটের ধূসর দাগে হেসে ওঠে আমার দুর্গ
উজ্জ্বল ভোজসভায় কেঁপে ওঠে আমার দস্তানা
আমি বার বার অন্তরালের পাতালে
অধীর হয়ে বসে থাকি
নিঃসঙ্গ রেলের চাকায় পিষ্ট হওয়া রোদ
আমাকে চিরমুক্তির দেশে নিয়ে যাবে বলে
বসিয়ে রেখেছে ধনুকের বাঁকা অন্তর
আমি পরাজিত হয়ে তার কাছে খুলে দিয়েছি
আমার পজ্ঞ্চইন্দ্রীয়
ঝড়ের দূতাবাসে সেও পাঠিয়েছে অনুগত
সমুদ্র ছায়ার তরুনী পাসপোর্ট
আমি পাসপোর্টে স্পর্ধার কফিন, খুলিসুন্দর
ডানা
এখন আমার সূর্যবন্দী মেঘ
কোমরে বন্দী জননী, তাঁর হাড়ের শব্দে
সিঁদুর ফোটে প্রতিদিন
বোধজাত মোহিনী ও মেঘের গভীরতায়
আমাদের অন্তর্লীন বৈপরীত্যে
মুখোমুখি বসে থাকে সাপ ও ময়ূর
নিশুতি বৈঠার হাড়ে যখন বেজে উঠছে
কামাক্ষীর বেহালা ধ্বনি
তখন মায়া বেণীর ঘাটে ফুটে ওঠে
অজস্র পাখিদের মিলিত ডানা
ধারণ করেছে যে আমার বিষ ও মধুর
আক্রোশ, তাকেই প্রতিনি
দেহ থেকে খুলে দিই মৃত্তিকার শ্বাস
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।