মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই....
কাজ শেষ করে সায়েম যখন গাজীপুর চৌরাস্তায় এসে পৌঁছাল, ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা নেমে গেছে। দুপুরের পরপরই ঘোষণা হল - আগামীকাল হরতাল; তখনই মনে মনে প্রমাদ গুণেছে সায়েম, আজ বাসায় ফিরতে খবর আছে। চৌরাস্তায় এসে দেখে জনসমুদ্র। ঢাকামুখী কোনও বাস নেই।
ময়মনসিং-শেরপুর থেকে আসা লংরুটের বাস তো নেই-ই, লোকাল বাস-ও খুব কালে-ভদ্রে একটা দুটা আসছে, আর মুহুর্তেই যাত্রী ওভারলোডেড হয়ে ছুটে চলে যাচ্ছে।
এ ধরণের ভীড় ঠেলে বাসে ওঠা সায়েমের পক্ষে সম্ভব না। এনোক্লোফোবিয়া না কী যেন বলে, সায়েমের বোধহয় ওই সমস্যাটা আছে। ভীড়-গ্যাঞ্জামের মধ্যে সে থাকতে পারে না, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সায়েম উল্টাপথে হেঁটে রাস্তা পার হল।
ঢাকামুখী বাস যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে না; বরং যেদিক থেকে বাসগুলো আসছে, রাস্তার সেই পারে গিয়ে দাঁড়াল সায়েম। এই পারে লোকজন বাস থেকে নামে, তখন যদি একটু কম ভীড়ের মাঝে বাসে উঠে পড়া যায়।
প্রভাতী-বনশ্রী নামে বাসটায় সায়েম উঠতে পারল আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট পর। সৌভাগ্যক্রমে একদম পেছনের সারি'র আগের সীটে একটা জায়গাও পেয়ে গেল ! তার পাশে জানালার দিকে মুখ করে বসা এক বাইশ-তেইশ বছর বয়সী তরুণ। সীটের অবস্থা বিশেষ সুবিধার না, তবু বসা গিয়েছে এটাকেই বাঙ্গালী 'ভাগ্যের ব্যাপার' মনে করে অভ্যস্ত।
কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে সায়েম আপাতত জগৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা চেষ্টা নিল।
এতক্ষণ পর্যন্ত নিত্যদিনের আলাপ। আমাদের গল্পটা শুরু হয় যখন প্রভাতী-বনশ্রী বাসটা সায়েমদের নিয়ে টঙ্গী বোর্ড-বাজারের কাছাকাছি আসে। এতক্ষণ প্রায় ফাঁকা রাস্তায় বাস উড়ে আসছিল। বোর্ড-বাজারের কাছটায় এসে বিরতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ইয়ারফোনের চমৎকার পার্ফর্ম্যান্সের কারণে বাইরের হৈ-হল্লা'র আওয়াজ সায়েমের কানে যায়নি খুব একটা। সে চোখ বন্ধ করে গান শোনায় মগ্ন। যখন মনে হল, বাসটা একটু বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছে, সায়েম চোখ খুলে তাকাল - হুড়মুড় করে লোকজন বাস থেকে নামছে ! এতজন এরা সবাই বোর্ড-বাজার আসার যাত্রী? হায়রে, আর ওদিকে কতশত ঢাকা'র যাত্রী এখনও গাজীপুর চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়... মোবাইলে সময় দেখতে গিয়ে সায়েমের চোখ বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওয়ালপেপারে তার স্ত্রী নিশা আর ছোট্ট মেয়ে তিথির ছবিটাতে আটকে রইল। তার ছোট্ট পৃথিবী এরা।
'আপনার পরিবার?', পাশে বসা তরুণ তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, 'স্যরি, কিছু মনে করবেন না, আমিও সময় দেখতেই চাচ্ছিলাম'
সায়েম হালকা হেসে তাকাল, 'হ্যাঁ, আমার পরিবার'
'খুব কিউট বাচ্চাটা আপনার'
'তিথি।
সামনের মাসে ওর বার্থডে, বয়স তিন পূর্ণ হবে...'
বাসটা এখনও যাচ্ছে না কেন বোঝা যাচ্ছে না। সামনের সীটের লোকজন অধিকাংশ দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় কেউ একজন বাস-ড্রাইভারকে গালি দিয়ে ওঠার কথা। কেন যে দিচ্ছে না - সেটাই অস্বাভাবিক। সায়েমের পক্ষে জোর গলায় ধমক-ধামক দেয়া সম্ভব না, পাশের ছেলেটা হয়তো পারবে।
তার দিকে তাকিয়ে সায়েম মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করল, 'এই শালা ড্রাইভার এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে কেন বুঝতে পারছি না। হরতালের আগের রাত তো এমনিতেই রিস্কি...'
'ড্রাইভার কই দেখলেন? গাড়িতে ড্রাইভার নেই তো !', ছেলেটা জানালার বাইরে চোখ রেখে উদাস গলায় বলল।
'সে কী !', সায়েমও উঠে দাঁড়াল, 'গাড়ি আর যাবে না? আমরা বসে আছি কেন?'
'বেশিরভাগ যাত্রীই নেমে গেছে। সামনে বোধহয় গোলমাল লাগছে কোথাও। ড্রাইভার-হেল্পার দুজনই নিচে দাঁড়ায় খোঁজ-খবর নিচ্ছে, এই একটু আগেও ঐদিকটায় ছিল', ছেলেটা আঙুল তুলে দেখাল, 'আর যেসব যাত্রী দোটানায় আছে, তারা এখনও বাসে বসে।
'
'হুম', সায়েম বসে পড়ল আবার। আর ঠিক সেই মুহুর্তে হঠাৎ বাসে ছোঁয়াছে এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল ! সামনে বসা মহিলা ক'জন প্রাণপণে আর্তনাদ করে উঠল। সায়েম তার মেরুদন্ডে কেমন ঠান্ডা একটা প্রবাহ টের পাচ্ছে। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কোনও নারীকন্ঠের চিৎকার যুক্ত হলে আতঙ্কটা মুহুর্তে বেড়ে ডাবল হয়ে যায় ! মাথা ঠান্ডা রাখার ব্যাপারটা আর মাথায়ই থাকে না !
সায়েম অস্থির গলায় পাশের ছেলেটাকে বলল, 'কী হচ্ছে ভাই?'
'বুঝতে পারছি না। তবে বুঝতে চেষ্টা করছি।
ঐ যে দেখছেন দু'টা লোক ছুটে পালাচ্ছে - ঐ লুঙ্গি পড়া'টা আমাদের ড্রাইভার। আর পাশেরটা কনডাক্টর। '
'এর মানে কী?', সায়েমের গলা কেমন কাঁপছে, 'চলেন নেমে পড়ি'
হঠাৎ তারা খেয়াল করল, বাসের ভেতর চিৎকার-চেঁচামেচি সব থেমে গেছে। কেমন অসহ্য নীরবতা, যেটা ওই চিৎকারের আতঙ্কের সাথে যোগ করে দিয়েছে দ্বিধা - ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ ! সমস্ত শব্দ হারিয়ে গিয়ে যেন কী এক অদ্ভূত শীতল তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে।
সায়েম পাশ ফিরে তাকাল, তরুণ ছেলেটা হালকা হেসে বলে উঠল,
"ছটফটিয়ে উঠল জলে, হারিয়ে গেল কেউ
চিহ্ন পড়ে রইল ঘাটে -- অন্যরকম ঢেউ"
'মানে?', সায়েম বিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে।
'শক্তি চট্টোপাধ্যায়', তরুণ হেসে তার খোঁচা-খোঁচা দাড়িতে হাত বোলালো। এই সময়ে এই ছেলে কবিতার কথা বলছে ! নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে যায়নি তো? দেখে তো মনে হচ্ছে না। দ্বিধান্বিত লোকজন আস্তে আস্তে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিল। মোটে জনাপাঁচেক লোক নেমেছে, ঠিক তখনই বিকট শব্দে বাসের পেছনের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ল ঝরঝর করে ! আবার সমস্বরে চিৎকার শুরু হলে গুমোট পরিস্থিতি যেন একটু স্বাভাবিক রূপ পেল। সায়েমের সামনে আরও ৭-৮জন লোক।
নামছে না কেন? ব্যাপারটা কী? জানালা দিয়ে বাইরে চোখ রেখে সায়েম হঠাৎ আবিস্কার করল, তাদের বাসটাকে কারা যেন ঘিরে ফেলেছে ! সে দ্রুত জানালা দিয়ে মুখ বের করল, সাথে সাথে লাঠি আর মশাল হাতে ক'টা চ্যাংড়া ছেলে ঐ জানালার নিচে এসে দাঁড়াল, তাকে নামতে দেবে না ! সামনে আর দু'তিনটা ছেলে মাম'এর দেড় লিটার বোতলে করে কি যেন একটা তরল বাসের গায়ে ছিটাচ্ছে ! গেট দিয়ে কেউ নামছে না - গেট বাইরে থেকে লক !
কী হচ্ছে? কী হচ্ছে এসব !
কবি-মতন ছেলেটা তখনও শান্তভাবে সীটে বসা। সায়েম সামনে যেতেই শুনল ছেলেটা বিড়বিড় করে বলে চলেছে,
"মায়াবী এই আলোয় ওড়ায় মায়া ভাঙার ফানুস
যেজন ছিল গোড়ায় তাকে পুড়িয়ে মারে মানুষ..."
নিশ্চিত এই ছেলের মাথায় ডিফেক্ট আছে। পালানোর একটা পথ বের করে এই ছেলেকেও বাঁচাতে হবে। সায়েম পাগলের মত বাসের সামনে-পেছনে ছুটছে, সবক'টা দিক ঘিরে রাখা। জানালার কাছে মুখ নিলেই সেই জানালায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে ! সামনের দু'জন মহিলা আর ছ'সাতজন লোক তাদের বয়স ইত্যাদি ভুলে কান্না-পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছে ! পাশ থেকে এখ বয়স্ক লোক হঠাৎ সায়েম'কে বলে উঠল, 'বাবা, আপনার ফোনটা একটু দিবেন? বাসায় একবার কথা বলতাম...' বৃদ্ধের গলা কাঁপছে।
এর মানে কী? ওরা মারা যাচ্ছে? ফোনের কথা খেয়াল হতেই সায়েমের চোখে ভেসে উঠল নিশা-তিথি ! অনেক চিন্তা করেও সে আর কিছু ভাবতে পারছে না। অনেক আগে মারা-যাওয়া বাবা-মা'র চেহারা তেমন মনে ভাসছে না। কিন্তু সে এসব কেন চিন্তা করছে? সে কী সত্যি মারা যাচ্ছে?
না, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারলেই এখন মরণ। বৃদ্ধের কথা ভুলে গিয়ে সে ফোন বের করে নিশা'কে কল করল।
'কল' রিসিভ করছে না কেউ। উফ, নিশা মোবাইলটা বেডরুমে রেখেই রান্নাঘরে চলে যায়, তারপর আর খেয়াল-খবর থাকেনা এই মেয়ের। এ নিয়ে কত কথা শুনিয়েছে সায়েম...
ফোনে আরেকবার চেষ্টা করে সায়েম আবার বাসের পেছন দিকে চলে গেল। এদিকটায় এখন কেউ নেই, পাগলাটে ছেলেটা ছাড়া। সায়েম চারপাশে হন্য হয়ে খুঁজতে লাগল, বাঁচার একটা পথ তো থাকবেই।
কাছে যেতেই শুনল, ছেলেটা তখনও আবৃত্তি করে চলেছে,
"মানুষ কাকে বাঁচায়?
................ যদি এমনি ক'রে খাঁচায়
পোরে পাখির চেয়ে খালি
................ নিবিড়, নরম গেরস্থালি?"
সায়েমের আর সহ্য হল না। সে ছেলেটার দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিল, "ওয়েক আপ, ম্যান ! আমরা ভয়ানক বিপদে আছি!"
ছেলেটা হঠাৎ প্রথমবারের মত সরাসরি সায়েমের চোখের দিকে তাকাল। কী অদ্ভূত এক দৃষ্টি। সে তখনও আবৃত্তি করছে,
"আমার ভয় করে, ভয় করে
কেবল ভয় করে, ভয় করে
................ যদি নিজেই তাকে মারি...
এবং এটুকু তো পারিই, আমি ভাঙায় গড়া মানুষ"
সেই দৃষ্টি সায়েমের কেন জানি সহ্য হল না ! কী অদ্ভূত অস্বাভাবিক নিস্পৃহা ! যেন এই পৃথিবীর মানুষ না সে ! ছেলেটা অদ্ভূত হেসে যখন আবার বলল, "আমি ভাঙায় গড়া মানুষ", সায়েম ছিটকে বেরিয়ে সামনের দিকে চলে গেল।
তার সমস্ত কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
একটা স্বাভাবিক ঘটনাও ঘটছে না, নাকি সে নিজেই অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে ! বাসের একপাশে আগুন জ্বলে উঠল ! দু'জন মহিলা'র গগণবিদারী আর্তনাদে বাইরের ছেলেগুলো যেন উৎসবমুখর হয়ে উঠল ! সায়েম আগুন দেখছে - আর কিছু নেই তার মাথায় এখন। যেন কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেল সে জানে না, হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ফোন'টা বের করার জন্য পকেটে হাত ঢোকাল। ফোন'টা নেই ! কোথায় পড়ে গেছে, কোথায় খুঁজবে সে? এদিক ওদিক ফিরে বাসের পেছনের দিকটায় তাকাল - পাগলাটে কবি'টা নেই ! সায়েম পুরো বাসে চোখ বোলালো, ছেলেটা কোথাও নেই ! তার মানে পালানোর পথ নিশ্চয়ই আছে !
সে দ্রুত বাসের পেছনে চলে এল। ছেলেটা যে সীটে বসে ছিল, তার জানালার আশপাশটায় কেউ নেই ! রুদ্ধশ্বাসে লাফ দিয়ে সায়েম জানালায় উঠতেই কোত্থেকে যেন ক'টা ছেলে ছুটে এসে আবার এ পথ বন্ধ করে দিল ! কী অপরাধ করেছে সে? প্রথমবারের মত সায়েমের বুক ভেঙে কান্না আসল।
তার দোষটা কী?
সামনে তাকাতেই দেখে বাসের গেট খুলে মহিলা দু'জনকে নামিয়ে নেয়া হচ্ছে। সায়েম ছুটে যেতে যেতে সেই গেট-ও আবার বন্ধ !
সায়েম জানে না, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়ে গেছে ! তবে তার অপরাধ অনুসন্ধান করার মত অধিকার তাকে দেয়া হয়নি।
বৃদ্ধ লোকটা চোখ বন্ধ করে সীটে পড়ে আছে। বেহুঁশ হয়ে গেছে বোধহয়। চারপাশ থেকে অসহ্য গরম আঁচ এসে লাগছে।
সায়েম হুঁশ হারাতেও ভুলে গেছে। সে বিহ্বল চোখে বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের লাঠি-মশাল হাতে ছেলেগুলো কী এক আদিম উৎসবে মেতেছে। সায়েমের চোখে একবার তিথি আর একবার নিশা'র চেহারা ভেসে তারপর সব শূণ্য হয়ে গেল। তার মাথায় এখন একটা প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই,
এত সহজে একটা মানুষকে মেরে ফেলা যায়? কোনও কারণ ছাড়া, এভাবে হাসতে হাসতে...?
এত সহজে?
********************************************************************
তিথি'রা গত তিনদিন ধরে তার নানু'র বাসায় আছে।
আম্মু'র কী যেন হয়েছে, সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছে, নানুও সারাক্ষণ কাঁদছে। তিথি কিছুই বুঝতে পারছে না।
তিথিকে সবচেয়ে বেশি আদর করত ছোটখালা। এখন সেই ছোটখালাকেই সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগছে। কিছুক্ষণ পরপর এসে তাকে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠছে।
তিথি বুঝতেই পারছে না, কী কারণ !
পাপা আসছে না কেন? তিথি ভাবল, পাপা আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চয়ই। পাপা কবে আসবে? একবার ছোটখালাকে এই প্রশ্ন করতে গিয়ে ডাবল-কান্না শুনতে হয়েছে তাকে। কাউকে প্রশ্ন করার সেই চিন্তা তাই আপাতত বাদ দিয়ে তিথি আম্মু'র মোবাইল'টা খুঁজে বের করল।
স্পিড-ডায়াল বা ইত্যাদি বিষয়গুলো এতটুকু মেয়ের বোঝার কথা না, সে শুধু জানে, আম্মু'র মোবাইলে একটা বাটন অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখলেই পাপা'র কাছে ফোন চলে যায়। কিন্তু ইদানিং কী যে হয়েছে, পাপা'র কাছে ফোন করলে অন্য একটা মহিলা ফোন ধরে কঠিন কঠিন কথা বলতে থাকে, আর তিথিও ভয় পেয়ে ফোন রেখে দেয়।
পাপা'র উপর অভিমানে আজ তিথি'র কান্না চলে আসছে। পাপা এতদিনেও আসছে না কেন? সে আবার আম্মু'র মোবাইল থেকে পাপা'কে কল করল। সেই একই মহিলা, সেই একই কথা, "আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না..."
তিথি কিছু বুঝতে পারছে না। তার খুব কান্না আসছে, বুক ভেঙে কান্না আসছে। ঐ মহিলা তখনও কথা বলে যাচ্ছে।
আর যে সহ্য হয় না...
ফোন কানে চেপে ধরে ছোট্ট তিথি ভাঙা-ভাঙা গলায় ফিসফিস করে বলে উঠল,
"পাপা...? তুমি তুথায়...?"
ঢাকা নগরী'র উত্তপ্ত বায়ুমন্ডলে এক ঝাঁক ছোট ছোট পরী ভাসতে ভাসতে অসীমের উদ্দেশ্য কী এক হাহাকার ছড়িয়ে দিল। অলস গল্পকার কান পাতলেই যেন এখনও শুনতে পায় শুধু সেই প্রতিধ্বনি,
তুমি তুথায়...?
তুমি তুথায়...?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।