আমার লেখালেখি এবং চিন্তাভাবনা নিয়েই আমার ব্লগ।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পণ্যের দাম বেশি0
মাথাপিছু আয়ও তুলনার যোগ্য নয়0
এ বি সিদ্দিক : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের তুলনা করা অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল এবং মাথাপিছু আয় একেবারেই কম। চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকা, এমনকি ভারতের মাথাপিছু আয় আর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের মধ্যে বিশাল ব্যবধান।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক বাজারদর তুলনা প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার দরের সাথে বাংলাদেশের বাজারদর তুলনা করা অপ্রাসঙ্গিক।
আমাদের অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত আর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত এক নয়। চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার মতো দেশে মাথাপিছু আয় বার্ষিক ৪০/৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় মাত্র কয়েক শত ডলার। বিশ্বের সিংহভাগ দেশের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে শতভাগ বেশি। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আয়-ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য।
আয় সীমিত, ব্যয় বাড়ছেই। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে যত কথাই বলুক না কেন, দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা বুঝেন সরকারের কথা। তিনি আরো বলেন, মানুষের কাজ নেই, বেকারত্ব বাড়ছে। পাশাপাশি লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে।
বেসরকারি বাজার গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাব-এর সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের বাজার মূল্যকে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সাথে তুলনা করছে যা অযৌক্তিক। কারণ- বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দেখতে হবে। দেখতে হবে টাকার মূল্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের ১ ডলার বাংলাদেশের ৭০ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের আর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক নয়।
বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত সেটা সরকারকে দেখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থান নেই, বাড়ছে বেকারত্ব আর দারিদ্র্য, শিল্পায়ন নেই, কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে। আয়-ব্যয়ের বৈষম্য বেড়েই চলছে। তিনি আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে মনে হয়- সরকার ব্যবসায়ীদের সাথে পেরে উঠছেন না। বাজার সিন্ডিকেটের হাতেই রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে যেটা অস্বাভাবিক, মানুষ যেন অসহায়।
বার বার বাণিজ্যমন্ত্রী যে কথাটি বলছেন বা বলতে চাইছেন তা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি তাই বাংলাদেশেও পণ্যের দাম বাড়ছে। আসলে এই কথা কতটুকু সত্য? ধরা যাক ডালের কথা। কারণ ডাল সিংহভাগই আমদানি করতে হয়। সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া গেছে (ইন্টারনেটের মাধ্যমে) তাতে বাংলাদেশী মুদ্রায় কানাডায় ১ কেজি ডাল ২৮/৩০, আমেরিকায় ৭০/৭৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৫৩/৫৪, ভারতে ৯০/১০৫, তুরস্কে ৬০/৬২ টাকা।
ভোজ্য তেল (সয়াবিন) কানাডায় ৪৫/৬৫, আমেরিকায় ৭০/৭২, নেপালে ৮৫/৮৬, মালয়েশিয়ায় ৩৩/৩৫ টাকা। বাংলাদেশের বাজারে ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ডালের দাম ৪০-৪৫, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ১০০-১০৫, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১১০ থেকে ১২০ শতাংশ বেড়েছে। তেলের দাম ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৪৫-৪৮, ২০০৯ সালে ৯০ থেকে ৯৫ এবং ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৮০-৮২ শতাংশ বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে কত বেড়েছে? রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্য সংস্থা টিসিবির গতকাল বৃহস্পতিবারের বাজার মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয়- গত এক বছরে ঢাকার বাজারে মোটা চাল ৩৩.৩৩, সরু ১৮.৯৯, মাঝারি ২১.৯৫, খোলা আটা ৫৫.৮১, খোলা ময়দা ১৯.৩৫, সয়াবিন (লুজ) ৪৭.৯২, পাম তেল ৬১.৬৭, রসুন ৫০.০০, হলুদ ৭৫.৩৬, চিনি ৭.০২, শতাংশ বেড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কত বেড়েছে?
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নেই। আসলে একথা কতটুকু সত্য? দেশে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এবং মাইডাস নামক একটি বেসরকারি সংগঠন যৌথ সমীক্ষা চালায় বাজার মূল্যের ওপর।
এতে বলা হয়- চার কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে ১. ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ২. চাঁদাবাজি ৩. মধ্যস্বত্ব ভোগীর দৌরাত্ম্য এবং ৪. অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়। এসব কারণে যদি দাম বাড়ে তা হলে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ে যে অভিযোগ সেটা নতুন কিছু নয়। এটা সরকার ইচ্ছা করলেই ভাঙতে পারে।
চাঁদাবাজি বন্ধ করতে ব্যবসায়ীরা বার বার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো সুফল পায়নি। সরকার তেলের দাম বাড়ায়, দলীয় চাঁদাবাজ আর পুলিশের সালামীর কারণে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য শেষ হতে পারে।
ভোক্তাসাধারণ মনে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার নানা কথা বলছে, যা অনেকটা অন্ধকে হাতি দেখানোর মত। বাণিজ্যমন্ত্রী গত বুধবার তার দফতরে বলেছেন, তাদের সরকারের দুই বছরের শাসনামলের দেড় বছরই বাজার স্থিতিশীল ছিল।
গত ছয় মাসে নাকি দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া তিনি বহুবার বলেছেন যে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে। অর্থাৎ তিনি এক এক সময় এক এক কথা বলছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।