মানবতাই ধর্ম !
জব্বার মিয়া কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছে তার বউয়ের দিকে পাশের বাড়ির নূরুলের ফটকা ভাই ফারুক কুনজরে তাকায়। কুনজরের সংজ্ঞা অনুযায়ী তার পর্যবেক্ষণ সঠিক। এই নিয়ে জব্বার মিয়া কয়েকবার তার বউকে না করেছে যেন বাইরে কম বের হয়,কল থেকে পানি নেয়ার সময় যাতে গায়ের কাপড়-চোপড় ঠিক থাকে,বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় যাতে দরজা জানালা বন্ধ করে নেয়। বেশকিছুদিন পরের ঘটনা, জব্বার মিয়া বাড়ি ফিরেছে সারাদিন পর রিকশা চালিয়ে। অন্যান্য দিনের মতো ঐ দিন দুপুরে সে বাড়ি ফিরেনি ভাত খেতে।
ঘরে ঢুকে সে দেখে বউয়ের হাত ভর্তি চুরি আর কপালে তার চোখে জ্বালা ধরছে এমন একটা টিপ। জব্বার মিয়া সাজগোজের উপলক্ষ জিজ্ঞেস করতেই তার বউয়ের তৈরী জবাব-নূরুল ভাইয়ের বউ আমার লাইগা কিন্যা আনছে।
-কেন কেন,তোর লাইগ্যা হঠাৎ তার এতো দরদ উথলায়া পরলো কেন? নূরুল মিয়ার এমনিতেই তার বউয়ের সাজগোজ পছন্দ না। তার কথা হল-রিকশায়ালার বউ তুই কেন নবাবের বেটির মতো সাজবি। সেদিনও ঐ রকমই একটা কথা বলায় তার বউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল-আমারে দুই ট্যাকা দিয়া চুলের ফিতা কিনন দেয়ার মুরোদ নাই আবার হের জ্বলতাছে! হেডম দেহায়া একটা ফিতাই কিন্যা দাও না।
জব্বার মিয়ার হাত নিশপিশ করছিল এতক্ষণ, সুযোগে ছিল কখন মারা যায়। সে তার বউকে এহেন দাম্ভিক কথার জবাবে চড় মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে ক্ষান্ত হল না কোমরে কয়েকটা লাথিও মেরে বসল। বলল- মাগির দেমাগ দেহ,আমার খায়া আমার পইড়া আবার তক্ক করে,এক্কেরে মাইরা লামু। বলেই তার বউয়ের গগণবিদারী চিৎকার যেন না শোনা লাগে সে জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। গলির মুখের চায়ের দোকানে গিয়ে সে বনরুটি ছিড়ে খেতে খেতে দোকানদারকে চা দিতে বলল।
পাশেই একদল যুবক তার ভাষায় ‘চ্যাংরা পোলাপাইন’ চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিল। এখন এই নির্বাচনের সময় বস্তির ছেলেগুলোর একটাই কাজ হল যে যখন বলবে মিছিলে যেতে তারা যাবে,বিনিময়ে কিছু মৌসুমী আয় হয় আর কী। জব্বার মিয়ার শরীরে নাঁচন উঠে এদের মিছিল দেখে। সেও মাঝে মধ্যে যেত তবে একবার পুলিশের বাড়ি খাওয়ার পর সে আর কোন মিছিলেই যায় না। অবশ্য নির্বাচনের মিছিলগুলায় পুলিশের আক্রমণ না হলেও অনেক সময় বিরোধী পক্ষের আক্রমনের আশঙ্কা থাকে।
সে ভাবে এর চেয়ে তার রিকশা চালানো অনেক ভাল,টাকাটা হালাল হয়। পাশের বাড়ির নূরুলের ভাই ফারুকও এখন মিছিলে যায়,মারামারির দরকার হলেও তার ডাক পড়ে। একবার সে ফারুকের হাতে ইয়া লম্বা এক রামদাও দেখছে। যখন যে সরকার সেই নেতাদের হয়েই কাজ করে সে। বস্তির সবাই ফারুককে ভয় পায়।
জব্বারের মনে হচ্ছে ফারুকই তার বউকে লুকিয়ে চুরি দিয়েছে। কিভাবে ব্যাপারটা ধরা যায় তা চিন্তা করতে করতেই জব্বারের পাশে নূরুল এসে বসে। নূরুলকে দেখে জব্বার সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে আসলেই তার বউকে নূরুলের বউ চুরি দিয়েছে কিনা। জবাবে নূরুল বলে-হেইডা বেডিগো ব্যাপার,হেরাই ভালা কইতে পারব। আমি ইতান জানিনা।
নূরুল এরপর স্ব উদ্যোগে বলা শুরু করে-আমার খাডনিডা একটু কমছে ফারুক মানুষ হওয়ায়। হের কামাই অহন ভালই। নূরুল আরো জানায় ফারুক এখন দিনে হাজার পনেরশ টাকা কামাই করে। নির্বাচনের জন্য বস্তির সব ছেলেরই আয় ভাল। মিছিলে গেলেই পাঁচশ টাকা নগদ আর মিছিল শেষে এক প্যাকেট বিরিয়ানি বা তেহারি তো আছেই।
এটাই এখন পেশা অনেকের। চা-নাস্তা খেয়ে জব্বার ঘরে যেতে যেতে ভাবে -ফারুকরে কিছুই কওন যাইব না,হের ম্যালা পাওয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।