পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
গত দশদিন ধরে চলমান বিক্ষোভের সর্বশেষ খবর নিয়ে কায়রো থেকে আপনাদের খেদমতে হাজির, আমি মাহমুদুল হাসান কায়রো।
মিশরের বিক্ষোভ নিয়ে পানি কম ঘোলা হয় নি, এতে মিশরের যে ক্ষতি হলো তা পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে অনেকদিন। কোন কোন বিষয়ের সমাধান হয়ত কোনদিনই হবে না। হবেই বা কিভাবে? দেশকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হলেও যারা এই গন্ডগোলে মারা গিয়েছে, তাদের তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।
কিন্তু ক্ষমতার লোভে অন্ধ রাজনিতিবীদরা তা কোন দিনই বুঝতে পারে না, হোক না সেই ক্ষমতার লোভি বিশ্বের যে কোন প্রান্তেরই।
দীর্ঘ ৮ দিন শান্তিপুর্ন বিক্ষোভ করার পর হটাৎ গতকাল রাতে হুসনি মোবারকের সাপোর্টারদের প্রায় ২০ হাজারের একদল তাহরীর স্কোয়ারের দখল নিতে চেষ্টা করে। আর তাতেই বেধে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে নিহত হয় ৭জন আহত হয় প্রায় ১০০০। কিন্তু সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেনি মিশরের সরকারি দল।
ফলে আজ আবার দুপুরের পরথেকে পরিবর্তনের দাবিতে তাহরীর ময়দানে জমা হতে থাকে মিশরীয় সাধারণ মানুষ। পরক্ষনেই আসতে থাকে মোবারকের সাপোর্টার বাহিনি। ঘটনা আবার সংঘর্ষের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু আজ মিশরীয় সেনাবাহিনীর সফল প্রচেষ্টায় আজ তেমন গন্ডগোল হতে পারে নি।
আজ সন্ধায় মিশরীয় সময় ৭টায় বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় মিশরের নতুন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট এক টেলিভিষন সাক্ষাতকারে মিলিত হন।
এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন ও তার জবাব ছিল এমনঃ
প্রশ্নঃ গত ৮ দিন শান্তিপুর্নভাবে বিক্ষোভ চলছিল কিন্তু গতরাতে একদল যুবক এসে আক্রমন করে চড়ম সংঘাত বাধিয়ে দেয়, এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কি??
উত্তরঃ এবিষয়ে আমরা খুবই দুখিঃত। এবং এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তাদের কে মদদ দিয়েছে তা আমরা অনুসন্ধান করে বের করব এবং তাদের উপযোক্ত ব্যাবস্থা নিব।
প্রশ্নঃ গত ১০ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে কিন্তু সমাধানের জন্য সরকার তেমন কিছুই করছে না, কিন্তু কেন??
উত্তরঃ সরকার সমাধানের সবরকম চেষ্টাই করছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে, বিরুধি দলকে বার বার ডেকেছে বসে ডাইলগ/মিটিং করার জন্য।
প্রশ্নঃ আপনি হয়ত জানেন হাজার হাজার মানুষ গত সপ্টাহ ধরে তাহরীর স্কোয়ারে বসে আছে, রাত কাটাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে আপনার সরকারের বক্তব্য কি?
উত্তরঃ নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করার পর সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ থেকে চলেগিয়েছে। এখন যারা আছে তারা বিশেষ এজেন্ডাকে সামনে নিয়ে বসে আছে যা পরিচালনা করছে কিছু বিশেষ শক্তি। হতে পারে সেটা ইসলমী ব্রাদারহুড, কিংবা অন্যকোন রাজনৈতিক দল কিংবা বাহিরের কোন শক্তি।
প্রশ্নঃ (আরেকটু স্পষ্টভাবে)। তাহরীর ময়দানে যারা আছে তারা বলছে হুসনি মোবারক ক্ষমতা থেকে না যাওয়া পর্যন্ত তারা ময়দান ছারবে না, এটা এখন সমস্ত রাজনৈতিক দলের দাবি ও অসঙ্খ সাধারণ মানুষের দাবিও, এ ব্যাপারের সরকারের স্পষ্ট অবস্থান কি??
উত্তরঃ এই দাবি একটি অযৌক্তিক দাবি।
এটা মিশরীয়দের দাবি না, কারণ মিশরের জনগন তাদের পিতাকে অনেক সম্মান করে, নেতাকে অনেক বেশি মেনে থাকে, আর এটাই যুগযুগ ধরে চলে আসা আরবের মানুষদের গুনও। হুসনি মোবারক গত ৩০ বছর যাবৎ দেশের খেদমত করে আসছেন, তিনি মিশরীয়দের বাবার মত। তিনি মোবারক একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাকে এইভাবে চলে যাওয়ার দাবি মিশরীয়রা কখনো করতে পারে না। কারণ মিশরীয় জাতি শিক্ষীত জাতি, তারা এমন অযৌক্তিক দাবি করতে পারে না।
তবে কিছুলোককে দাবি করতে দেখা যাচ্ছে, তারা অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি এজেন্ডা নিয়েই দাবি করছে যা মিশরের জন্য কখনোই মংগল জনক হবে না।
ঐ সমস্ত শক্তিকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না।
এইছিল বিশেষ কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর। এছাড়াও অভান্তরিন আরো অনেক গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নের জবাব দেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সবশষে সে তিনি বিক্ষোভাকারীদের ঘড়ে ফিরে যেতে আহ্বান করেন এবং বিরুধিদলকে মিটিং এ বসার আহ্বান জানান।
------
এই বক্তব্যের পর মতামত জানতে চাওয়া হয় প্রথমেই দেশটির সর্ববৃহৎ বিরোধি দল মুসলিম ব্রাদার হুডের নেতাদের নিকট।
তারা ভাইস প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল বলে উল্ল্যেখ করেন, এবং একটি একটি করে তার বক্তব্যের জবাব দেন।
উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলেন-
১) এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে কারা গতকাল বিকেলে তাহরীর ময়দানে এসে শান্তিপুর্ন বিক্ষোভের উপর আক্রমন চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তারপরও তিনি বলছেন অনুসন্ধান করা হবে। এখানে বিষয়টি অতি স্পষ্ট যে তারা এর কতটুকু বিচার করবে, আর কার বিচার করবে!!
২) সরকার সমাধানের কোন চেষ্টাই করে নি। তারা জন গনের সাথে কোন কথাই বলে নি। আমাদের কোন ডাইলগের জন্য ডাকা হয় নি, হলেও বা কার সাথে মিটিং করব?? কোন রুলের উপর মিটিং করব?? কারণ সাধারণ জন গণ বর্তমান সরকারের তৈরি কোন আইনই মানে না।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ৬ মিলিয়ন মানুষের দাবিই ছিল সরকারি নিজাম পরিবরর্তন করার জন্য।
আর যেই সরকার ও তার নিজাম আপার জনতা প্রত্যাক্ষান করে তাদের নিজেদের মনগরা মন্ত্রিসভা কি আর জনগন মেনে নিয়েছে। নেয় নি!! এতএব অন্যায় ভাবে ক্ষমতায় থাকা সরকারের পদত্যাগ আগে চাই, তারপর আমরা বসব দেশের নতুন আইন প্রনয়নের মিটিং এ।
৩) সরকার নিজেকে বলবৎ রাখতে দুষ এখন বিদেশীদের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। তিনি গত ৩০ বছর যাবৎ ক্ষমতায় আছেন তখন কোন বিদেশী শক্তি দেশে এল না, এখন মানুষ তার ব্যাপারের মুখ খুলছে তখনই বলতে চাচ্ছে বিদেশীদের হাত আছে।
বিদেশিদের কিংবা বিরুধিদলের উস্কানি থাকলে অল্প সঙ্খক মানুষই বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করত, এইভাবে ৬ মিলয়ন মানুষ কখনোই রাস্তায় নেমে আসত না। তারা সবাই রাস্তায় নেমেছে জাতিয়তাবোধ থেকে, দেশের মায়ায় মাঠে নেমেছে, পাটের ক্ষোধায় অতিষ্ঠ হয়ে তারপর তারা মাঠে নেমেছে। সরকার দলের মানুষের অনুভুতির সাথে খেলা করার সুযোগ দেয়া হবে না।
৪) তিনি যদি নিজেকে শাবাব/যোবক'দের পিতাই মনে করেন তবে কেন ক্ষমতা ছাড়তে তার এত দেরি হচ্ছে?? তিনি আরো বলেন, আরবরা যেমন নেতাকে শ্রদ্ধা করে বলে নাম আছে ঠিক তেমনি আরবদের বীরের জাতি হিসেবেও নাম আছে। তার কোন কৌশলই এবার কাজে আসবে না।
এবার তাকে বিদায় দিয়েই তারপর সাধারন মানুষ ঘড়ে ফিরবে।
দকটির মোখপাত্র আরো বলেন, আমরা সবসময় সরকারের সাথে, বিরুধিদলের সাথে, দেশের জনগনের সাথে বিদেশীদের সাথে, মুসলিমের সাথে অমুসলিমদের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
----
এই যখন পরিস্থিতি তখন তাহরীর ময়দান থেকে ঘোষনা আসছে কালকের জুম্মা হবে ''জুমাতুল রাহিল'' বা ''চলে যাবার জুমা''। এ ব্যাপারে ব্রাদারহুডের নিকট জানতে চাওয়া হলে তেমন কোন পরিকল্পনার কথা বলেন নি।
---
ছবিদুটি তে তাহরীর ময়দানের ডানের ও বামের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
--
কারো কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।