আকাশ ছুঁব...
মিশরের পুরা-গল্প-৩
ভাগ্যনির্ধারিত রাজকুমার
রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু
অনেক অনেককাল আগে মিশরে বাস করতেন এক রাজা। তার মনে খুব দুঃখ। তার রাজ্য ছিল, ছিল ধন-দৌলত, কিন্তু কোন ছেলে নেই। কে চালাবে রাজ্য! রাজা দিনরাত প্রার্থনা করতেন ইশ্বরের কাছে, তাকে যেন ইশ্বর একটা ছেলে দেয়। ইশ্বর তার প্রার্থনা শুনতে পেলেন এবার।
রানীর কোল জুড়ে এল ফুটফুটে ছেলে। বাচ্চারা জন্ম নেয়ার পর তাদের ভাগ্য নির্ধারন করে ভাগ্য দেবীরা। রাজকুমারের ভাগ্যে কি লিখলো দেবীরা! রাজকুমার মারা যাবে হয় কুকুর অথবা কুমির অথবা সাপের কামড়ে। রাজা শুনে মুষড়ে পড়লেন। হায়, ভাগ্য! কি করবেন রাজা! তিনি এবার ভাগ্যকে প্রতিহত করতে পাহাড়ের উপর লোহার বাড়ি বানালেন।
সে বাড়িতে বড় হতে লাগলো রাজকুমার। কুমারের কিছুই কমতি নেই। তবু কুমারের মন ভরেনা। সে বাইরে বেরোতে চায়। রাজা এবার বাইরে দেখার জন্য পথের ধারে জানালা করে দিলেন।
কুমার বসে থাকে জানালার ধারে। দেখে কতলোক যায় আসে। হঠাৎ কুমার একদিন দেখে নতুন জিনিস।
এক লোক যাচ্ছে তার পিছন পিছন ছুটে যাচ্ছে কি যেন! লেজ নেড়ে নেড়ে ছুটে যাচ্ছে। কুমারের এবার তা চাই।
খবর গেল রাজার কানে। শংকিত রাজা ছুটে এলেন। কে শুনে কার কথা! রাজার সকল অনুনয় বিফল কুমারের দরবারে। কুকুর এল এবার কুমারের ঘরে। কুমার ব্যস্ত থাকে কুকুর নিয়ে।
আস্তে আস্তে রাজার মন থেকে কুকুর ভীতি কমে গেল।
কুমার বড় হয়ে এল। এবারতো আর কুমারের মন ঘরে টেকেনা। রাজার কাছে আর্তি গেল কুমার ভ্রমণে যেতে চায়। রাজা-রানী দুজনেই শংকিত হয়ে উঠলেন।
কিন্তু কুমারকে ঠেকিয়ে রাখে কার সাধ্য! কুকুর নিয়ে যাত্রা করলো কুমার। চোখের জলে বুক ভাসালেন রানী। বুক ভাসিয়ে নীলনদের পাড়ে এসে বিদায় জানাল প্রজারা। কুমারের জাহাজ ভাসলো নীলনদে।
কুমার কত দেশ ভ্রমণ করলো।
কোথাও কুমারের মন থিতু হয়নি। এবার পৌঁছলেন নেহারিনায়(সিরিয়ার এক প্রদেশ)।
নেহারিনা বড় সুন্দর দেশ। নেহারিনার অধিপতির ছিল এক সুন্দর পরীর মত মেয়ে। মেয়ে তখন বিয়েরযোগ্য।
কিন্তু যারতার হাতেতো মেয়েকে তুলে দেয়া যায়না। অধিপতি খুঁজছেন যোগ্য পাত্র। কিভাবে বের করবেন যোগ্য পাত্র! মেয়ের জন্য অধিপতি বানালেন এক উঁচু বাড়ি। একদম মাথার উপর রাখলেন একটা জানালা। যে এই জানালা দিয়ে অধিপতিকন্যার কাছে পৌঁছুতে পারবে তার সংগেই কন্যার বিয়ে হবে।
সিরিয়ার সব প্রদেশের অধিপতির পুত্ররা এসেছে এ খেলায় জিতে অধিপতির কন্যাকে বিয়ে করার জন্য। রাজকুমারও পৌঁছলো সেখানে। মাঠে এত লোক জড়ো! তারা করছে কি? শুনলো সব। সেও খেলায় অংশ নিবে।
প্রতিযোগিতা শুরু হল।
কেউ পারছেনা। তবে কেউ কি যোগ্য নয়! এবার কুমারের পালা।
অবাক করে জিতে গেল রাজকুমার। খবর গেল অধিপতির কানে। ছুটে এলেন তিনি।
কুমারকে শুধালেন, “তোমার পরিচয় কি?” কুমার বললো,“আমি মিশরের এক সৈনিকের ছেলে। আমার বাবা আবার বিয়ে করেছে। সে আমার উপর অত্যাচার করে বলে আমি পালিয়ে এসেছি। ” রেগে গেলেন অধিপতি। কি! আমার মেয়ের বিয়ে হবে এক সাধারন সৈন্যের ছেলের সংগে, তার উপর যে কিনা রিফিউজি! অধিপতি কুমারকে গোপনে মারার চিন্তা করলেন।
-রা এর শপথ, পিতা আপনি যদি বিজয়ী যুবককে মারতে চান সে অন্যায় আমি মেনে নেব না...
-কিন্তু কোন সাধারন যুবকের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হতে পারে না।
-পিতা, সে বিজয়ী। রা এর শপথ, তাকে মারলে আমাকেও মৃত দেখবেন।
মেয়ের জিদের কাছে হার মানলেন অধিপতি। মহাধুমধামে বিয়ে হল অধিপতি কন্যার।
সুখের অন্ত নেই। অধিপতি কুমারকে দিলেন অনেক সম্পদ, ধন-দৌলত।
কেটে গেছে বেশ ক’বছর। মিশরের জন্য মন কাঁদছে কুমারের। কুমার এবার অধিপতিকন্যাকে জানাল সে মিশরে যেতে চায়।
সংগেসংগে ভাগ্যের কথাও জানালো কন্যাকে। স্বামীর ভাগ্যের কথা শুনে কন্যাও শংকিত। জেদী স্বামীকে ঘরে আটকে রাখার সাধ্য কন্যার নেই। কি করবে কন্যা?
-ঠিক আছে যাবে যাও, তোমার সাথে আমিও যাব।
অধিপতির কন্যাকে সহ মিশরের অভিমুখে যাত্রা করলো কুমার।
কত পথ! নীলনদের ওপার মিশর। শেষে এসে পৌঁছলো মিশরে। কুমার ফিরে এসেছে। আনন্দে ভরে গেছে মিশর। কুমারের ভাগ্যের কথা সবাই জানে।
তাই নীলনদের কুমিরকে বন্দী রেখেছে মিশরবাসী। কুমিরকে পাহারা দিতে ঠিক করলো এক বিশাল শক্তিশালী দানবের মত লোককে। দানব মানুষটি পাহারা দেয় কুমিরকে। সারাদিন কুমিরের পাশে বসে পাহারা দেয় ,আর রাতে যখন কুমির ঘুমায় সে বাইরে বের হয় বাইরের বাতাস দেখতে। এভাবেই কাটছে দিন।
আর স্বামী যখন ঘুমায় পাশে বসে পাহারা দেয় অধিপতিকন্যা। প্রতি রাতে স্বামীর মাথার কাছে দুধের বাটি রেখে পায়ের কাছে বসে থাকে কন্যা। কখন আসে সাপ!
এক রাতে সত্যিই এল সাপ। দেখামাত্র অধিপতিকন্যা ডাকলো চাকরদের। সবাই মিলে সাপটিকে মেরে ফেললো।
কুমার এদিকে নিশ্চিন্ত ঘুমাচ্ছে। সকালে যখন উঠলো দেখলো মৃত সাপটা। যাক, ভাগ্যের একটি ফাড়া কাটলো! অধিপতিকন্যা স্বামীকে বললো,“ তোমার কুকুরটা মেরে ফেল। ” “না, কুকুরটা আমার সংগে অনেক বছর ধরে আছে। এ আমার কোন ক্ষতি করবে না।
”
দিন কেটে যাচ্ছে। কেটে গেল দুই মাস। মনিব বাইরে গেলে কুকুর পিছন পিছন পাহারা দেয়।
একদিনের ঘটনা। কুমিরের পাহারাদার সেদিন সকালে ফিরতে একটু দেরী করলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কুমারের কুকুর দৌড়ে বাইরে চলে এল। কুমারও ছুটলো কুকুরের পেছন পেছন। কোন এক শিকারের পেছন পেছন কুকুর নীলনদের পাড়ে চলে এল। কুমারও এল। পাড় হতে কিছুটা নিচে নেমে এল দুজনই।
আর যায় কোথায়! বেরিয়ে এল কুমির।
-আমি তোমার ভাগ্য। আমার হাতেই তোমার মরণ...
ছুটে এল পাহারাদার। কুমির কুমারকে ছেড়ে পাহারাদারের দিকে ছুটলো।
-আমি আগে পাহারাদারকে মারবো... দাঁড়াও ফিরে তোমাকে মারবো।
আমি তোমার ভাগ্য...
বৃটিশ মিউজিয়াম লণ্ডনে মূল প্যাপিরাসের উপর লেখা এটুকুই পাওয়া গেছে। বাকীটুকু খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তবা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দুইটা রূপকথা ছিল। আরেকটা ছিল “দ্য ক্যাপচার অব দ্য সিটি অব জোপ্পা”।
তাতে কি! বাকি অংশটুকু এভাবে ভাবা যায়-
কুমির পাহারাদারকে আক্রমণ করলো। কুমার আর কুকুর বাঁচাতে গেল। ঠিকই মরলো কুমির কিন্তু বেখেয়ালে কুকুর মনিবের গায়ে কামড় দিয়ে বসলো। শেষে ভাগ্যই ঠিক হল! কুকুরের কামড়ে প্রাণ গেল কুমারের!.... কিংবা অন্যভাবেও ভাবা যায়... ভাগ্য মিথ্যে হয়েছে...কারণ মূল লেখা পাওয়া যায়নি..
[এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়, ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।