আকাশ ছুঁব...
মিশরের পুরা-গল্প-২
দেবী আইসিস ও সাত কাঁকড়াবিছা
রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু
দেবী আইসিস ও শিশু হরাস
মিশরের দেবী আইসিসের এক ছেলে ছিল, যার নাম ছিল ’হরাস’। হরাস দেবী আইসিস আর দেবতা ওসীরীসের ছেলে। দেবতা ওসীরীসের এক ভাই ছিল, যার নাম ‘সেত’।
সেত
সেত সাম্রাজ্যের জন্য দেবতা ওসীরীসকে হত্যা করেছিল। সে জানতোনা দেবতা ওসীরীসের কোন ছেলে আছে ।
যদি জানে হরাস ওসীরীসের ছেলে, তাহলে সে তাকেও মেরে ফেলবে। তাই সেতের ভয়ে দেবী আইসিস হরাসকে লুকিয়ে রেখেছিল।
যখন দেবী আইসিস হরাসকে জলের ধারে প্যাপিরাস গাছের ধারে লুকিয়ে রেখে আসতে গিয়েছিল, এটা তখনকার গল্প। দেবীকে পাহারা দিতে সেসময় সঙ্গ দিয়েছিল সাত কাঁকড়াবিছা।
কাঁকড়াবিছা
তারাই দেবীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, হরাসের জীবন বাঁচিয়েছিল।
দেবীর সামনে থেকে পথ চলেছিল পেটেট, তিজেটেট আর মেটেট নামের তিন কাঁকড়াবিছা। তারা আগে আগে পথ চলছিল সামনে কোন বিপদ থাকলে পথ পরিষ্কার করতে। দেবীর দুই পাশে পথ পরিষ্কার রাখতে পথ চলছিল মেসেটেট আর মেসেটেটেফ নামের দুই কাঁকড়াবিছা। পিছনে দেবীর নিরাপত্তা দিতে পথ চলছিল টিফেন আর বিফেন।
প্রত্যেকটা রাতই ছিল তাদের জন্য সতর্কতার রাত।
দেবী কোথায় আছে সেত যদি জেনে যায়! দেবী কাঁকড়াবিছাদেরও সতর্ক করে দিয়েছিল পথে কারও সাথে কথা না বলতে, কেউ কোন প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর না দিতে। বিছারাও সে ব্যাপারে সাবধান ছিল।
এক রাতের কথা। তারা যাচ্ছিল নীল নদের ব-দ্বীপ দুই বোনের শহরের উপর দিয়ে।
নীল নদের ধার
এ রাতে তারা কোথায় আশ্রয় নিবে! এক ধনী মহিলার দরজায় তারা উপস্থিত হল।
বিচিত্র এই দলটা দেখামাত্রই মহিলা দরজা বন্ধ করে দিল। তারা খুঁজতে লাগল আশ্রয়। শেষপর্যন্ত গরীব এক চাষী মেয়ে দেবীকে দিল রাতের আশ্রয়। এদিকে ধনী মহিলার আচরণে খুবই রেগে গিয়েছিল কাঁকরাবিছারা। দেবীকে এ ব্যাপারে তারা কিছুই বলল না।
তারা নিজেরা মিলে ঠিক করল মহিলাকে শাস্তি দেবে। কি শাস্তি দেবে! ছয় কাঁকড়াবিছা নিজ নিজ বিষ দিল টেফেনকে। টেফেন সব বিষ একসাথে নিজের হুলে ভরে নিল। তারপর গভীর রাতে চুপিচুপি বের হয়ে পড়ল চাষী মেয়ের বাড়ি থেকে। দেবী এর কিছুই জানেন না।
ধনী মহিলার বাড়িতে তখন সবাই ঘুমিয়ে। মহিলা আর মহিলার ছেলে ঘুমিযে আছে পরমনিশ্চিন্তে। টেফেন দেখল এইতো সুযোগ। দরজার নিচ দিয়ে দিল হুল ফুটিয়ে। মহিলা টেরই পেলনা যে, তার ছোট্ট ছেলেটিকে হুল ফুটিয়ে দিয়েছে কোন কাঁকড়াবিছা।
বিষের যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল ফুটফুটে ছেলেটি।
সকালে মা যখন দেখল, তখন পাগলের মত ছুটতে লাগল ছেলেকে বাঁচাতে। বিষ তখন ছড়িযে পড়েছে পুরো শরীরে। কিছুই করার ছিল না কারও।
দেবী আইসিস
দেবী আইসিসেসের কানেও গেল মহিলার ছেলের সংবাদ।
দেবী ছুটে গেলেন নিষ্পাপ বাচ্চাটিকে বাঁচাতে। বাচ্চাটিকে ছুঁয়েই দেবী বুঝতে পারলেন কি ঘটেছে। ডাকলেন কাঁকড়াবিছাদের। বললেন, ‘তোমরা মায়ের অপরাধের শাস্তি নিষ্পাপ শিশুকে দিতে পার না! কেন একাজ করেছ?’
দেবীর কথায় নিজেদের ভুল বুঝতে পারল কাঁকড়াবিছারা। তারা ফিরিয়ে ণিল নিজেদের বিষ।
সুস্থ হয়ে উঠল ফুটফুটে ছেলেটি আবার। ধনী মহিলাও বুঝতে পারল নিজের ভুল । মহিলা ক্ষমা চাইল দেবীর কাছে। দেবী ক্ষমা করে দিলেন মহিলাকে। দেবীকে উপহারমরূপ অনেক টাকা-পয়সা দিতে চাইল মহিলা।
দেবী মহিলাকে বললেন তাকে নয় গরীব চাষী মেয়েটিকে দিতে, কারণ গরীব মেয়েটিই আশ্রয় দিয়েছিল দেবীকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।