আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিশরের পুরা-গল্প-৪

আকাশ ছুঁব...
মিশরের পুরা-গল্প-৪ চন্দ্রদেবতা খোনসু ও বেখতেনের রাজকুমারীর গল্প রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু অনেক অনেক দিন আগের কথা। রামেসিস-৩ এর আমলে মিশরের থেবসে চন্দ্রদেবতা খোনসু-র এক বিরাট মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। মন্দিরের তারাপাথরে এ গল্পটি খোদাই করা আছে। এটা সেই গল্পটাই- মিশরে বাস করতেন এক রাজা (সম্ভবত রামেসিস-৩)। তিনি একবার অবকাশযাপনে গিয়েছিলেন নেহারিনায় (সিরিয়ার উত্তর প্রদেশ)।

সেখানে সবসময়আর মত বিভিন্ন রাজ্যের রাজারা এলেন মহমান্য মিশররাজের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে। তারা সংগে নিয়ে এলেন বহু মূল্যবান উপঢৌকন। কেউ নিয়ে এলেন সোনা, কেউবা মহামূল্যবান লাপিস-লাযুলি পাথর, কেউবা অতি মূল্যবান কাঠ; কিন্তু বেখতেনের রাজপুত্র এসব কিছুই আনেননি। তবে কি এনেছেন বেখতেনের রাজকুমার মিশররাজের জন্য? মাথা নুইয়ে মহামান্য মিশররাজকে কুর্ণিশ করলেন রাজকুমার। -শ্রদ্ধা নেবেন মহামান্য রাজন।

সবাইতো সব দিয়ে গেলেন, এবার আমার পালা। মুচকি হাসলেন মিশররাজ। কি বলতে চায় বেখতেনের রাজকুমার! -শ্রদ্ধা নেবেন মহামান্য রাজন। আমি উপহারস্বরূপ আমার বড়কন্যাকে আপনার চরণে দিলাম। রাজকন্যা মজলিশে প্রবেশ করতেই সবার চোখ ঠিকরে এল।

অপূর্ব রূপসী! এমন রূপ কি মানবীর! মিশররাজ নাম দিলেন “রা-নেফেরু” অর্থ্যাৎ রা-এর সৌন্দর্য, সূর্যের দেবী। মহাধুমধামে বেখতেনের রাজকুমারী মিশরের রানী হয়ে এল। বেখতেনের রাজকুমারী হলো মিশররাজের প্রধান রাজপত্নী। এরপর কেটে গেছে বেশ সময়। মিশররাজের রাজত্বের পনেরতম বছর।

গ্রীষ্মের দ্বিতীয় মাসের ২২তম দিন ছিল। হঠাৎ করেই থেবেসে আগমন ঘটলো বেখতেনের রাজকুমারের। শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করলেন শ্বশুড়মশাই। কি কারণে আগমন? বেখতেনের রাজকুমার বললেন আগমনের কারণ। রানী রা-নেফেরুর ছোটবোন বেখতেনের আরেক রাজকুমারী বেন্থ-রেশেট অসুস্থ।

বেন্থ-রেশেট, যার নাম বেন্ট-এন্থ-রেশেট; সে এতটাই অসুস্থ যে সে কারণে বেখতেনের সবাই চিন্তিত। আর তাই চিকিৎসকের খোঁজে মিশরে আগমন বেখতেনের রাজকুমারের। -রাজ, আপনি আমার কন্যা, আপনার স্ত্রীর ছোটবোনকে সুস্থ করে তুলতে একজন চিকিৎসক প্রেরণ করুন। মিশররাজ দরবারে ডাকলেন সব রাজ-চিকিৎসকদের। কে যাবে বেখতেনে? শেষপর্যন্ত ঠিক হলো তিহুতি-এম-বেব যাবে বেখতেনের রাজকন্যার চিকিৎসা করার জন্য।

তিহুতি-এম-বেব পৌঁছলেন বেখতেনে। রাজকুমারীর চিকিৎসাও শুরু হলো। কিন্তু কোন ফল নেই। কি হয়েছে বেখতেনের রাজকুমারীর! মিশরের রাজ চিকিৎসক দেখলেন বেখতেনের রাজকুমারী অপদেবতার সম্মোহনের শিকার। এতো চিকিৎসা দ্বারা সম্ভব নয়! তবে কি রাজকুমারী সুস্থ হবে না! বেখতেনের রাজকুমার পুনরায় মিশর যাত্রা করলেন।

যখন থেবেসে পৌঁছলেন, সেখানে আমোনের উৎসব চলছে। রাজকুমার পুনরায় কন্যার আরোগ্যের জন্য সাহায্য চাইলেন। কি করবেন মিশররাজ! মিশররাজ ছুটলেন নেফারহেটেপ, খোনসুর মন্দিরে। -প্রভু, আমি তোমার দরবারে এসেছি আর্জি নিয়ে। তুমিই পার বেখতেনের রাজকুমারীকে সুস্থ করতে..... পার অপদেবতার সম্মোহন থেকে বাঁচাতে.....প্রভু, তুমিই পার...... চন্দ্রদেব খোনসু চললেন স্বশরীরে।

দীর্ঘ সাতমাস ভ্রমণ শেষে দেবতা পৌঁছলেন বেখতেনে। বেখতেনের রাজকুমারী শয্যাশায়ী। রাজকুমার কন্যাকে নিয়ে এলেন দেবতার কাছে। চন্দ্রদেব একনজর দেখেই বুঝলেন কি ঘটেছে। অপদেবতা চন্দ্রদেবের কাছে চুটকি মাত্র।

রাজকুমারী সুস্থ হয়ে উঠলো। আনন্দে ঝলমল করে উঠলো রাজপ্রাসাদ। খুশীর জোয়ার উঠলো বেখতেনে। বেখতেনের রাজকুমার চাইলেন চন্দ্রদেব থেকে যান বেখতেনেই; কিন্তু চন্দ্রদেব খোনসু ফিরে আসবেন মিশরে। কি আর করা।

বেখতেনের রাজকুমার অনেক উপঢৌকনসহ বিদায় জানালেন দেবতা খোনসুকে। ফিরে এলেন মিশরে চন্দ্রদেবতা, অপদেবতার সম্মোহন ভঙ্গকারী দেবতা - খোনসু; নেফারহেটেপ মন্দিরে। আর সুস্থ হয়ে বেখতেনের রাজকুমারী সুখে দিন কাটাতে লাগলো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।