জাস্ট প্লেয়িং এ রোল হেয়ার, অন বিহ্যাফ অফ বোকামন [দয়া করে,বোকামনের যেকোনো পোস্টের সমালোচনায় সংকোচ-বোধ করবেন না]
১ ২ ৩
গল্পটি শুরু হল:
যখন লিখছি তখন আমি অনেক দূরে; দূর কোন সবুজ গায়ে নদীর টলমলে দৃশ্য ফ্রেম-বন্দী হচ্ছে আমার লেন্সের সুরে। ফটোগ্রাফি এবং টুংটাং গিটার বাজানো এ দুটি বিষয় আয়ত্ত করার পিছনের পুরো ক্রেডিট আমার অর্ধাঙ্গিনীর। শখ ছিলো তবে সৌখিন হয়েছি তার সাহায্যেই। হাতে কলমে শিখিয়েছেন। বেশ কতক ছবি তুলে আমার জন্মদিনে স্ত্রীর উপহার দেয়া ক্যামেরা বেচারা বড্ড ক্লান্ত।
আমি তখনো ফুরফুরে মেজাজে ধাবমান। অবাক হই এতো এনার্জি কথ থেকে আসে ! হ্যাঁ এজন্যই তো আসা বহুদূরের গায়ে। সতেজ বায়ু নির্মল সবুজ আমাকে রিচার্জ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য।
যান্ত্রিক পোশাক খুলে আসি বারবার ফিরে
আমার সবুজ গায়ের বৃক্ষ নদীর পাড়ে। ।
জানিনা কি সুখ এখানে, খুঁজি শিকড়ের টান
খুঁজি রাখালিয়া বাঁশি আর শৈশব খুশীর বান
মেঠো পথের যাত্রা থামিয়ে বাঁশ-বেড়ার টং চায়ের দোকানে থামলাম কিছুক্ষণের জন্য। চায়ের স্বাদ নেয়া যাক। কি বলেন ?
তাল গাছ আকৃতির দেহ, আর অসবর্ণ চামড়ার অদ্ভুত কিছু একটা দেখে সবাই কেমন যেন নড়েচড়ে বসলো। হাতে থাকা বিশাল একখানা ডিএসএলআর দেখে কেউ কেউ হয়তো ভাবতে শুরু করেছেন বিদেশী সাংবাদিক অথবা ভিনদেশী কোন বাবু হয়তো। তার উপরে আমার চায়ের জন্য আবেদন শুনে, বিশ্বাসটা পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছিলো।
স্বীকার করতে হবে আমার বাংলা উচ্চারণ কিছুটা ওরকমই। কাচা-পাকা চুলের দোকানদার বা চা-বিক্রেতা পরম যত্নে চা তৈরি করছিলো আমার জন্য। যেন তার ভাঙা দোকানে কোন বিশেষ অতিথির আগমন ঘটেছে।
-নেন ছার চা, আলগা চাপাতি দিয়া বানাইছি।
চায়ের কাপখানা পাশে রেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম তার সাথে করমর্দনের জন্য।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি যেন স্বর্গসুখী হয়েছিলাম। ঘামেভেজা শার্টে ভেজা হাত মুছে নিয়ে সরল হাসিতে করমর্দন করলো আমার সাথে। মানুষগুলো এতটা বিনয়ী কেন ! মানুষকে মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে আবার প্রমাণ পেলাম মাটির মানুষগুলোর সাথে কথা বলতে পেরে।
স্যার বলছেন কেন চাচা ! আমি আপনাদেরই একজন। এ দেশেরই সন্তান।
তারপর অনেক অনেক কথা। তাদের বিশ্বাস করালাম আমিও খুবই সাধারণ একজন। তেমন কিছুই নই। অকৃত্রিম হাসিমাখা মুখগুলোর চেয়েছিলাম ছবি তুলে রাখতে। রেখেছিও তবে ক্যামেরার ফেস ডিটেকশন ট্যাকনোলজিতে নয় বুকের বা পাশটাতে।
আমার হৃদযন্ত্রটি ওখানেই অবস্থিত। সরল হাসিগুলো কৃত্রিম ব্যবস্থায় রাখতে ইচ্ছে করছিলো না। হৃদসঙ্গী করতে চেয়েছিলাম। এজন্যই তো সময় পেলেই ছুটে আসি। যদিও সময় পেতে কখনো বছ-রো অপেক্ষা করতে হয়।
মোবাইলে রিং রিং ... ফিরে যেতে হবে।
হাজার ফুট উচ্চতা থেকে আঁকাবাঁকা নদী আমাকে বিদায় জানায় প্রতিবার। এবারো ব্যতিক্রম নয়-
আকা বাঁকা তুমি আমি, আঁকাবাঁকা নদী
আঁকাবাঁকা এ জগতে, আমার প্রিয় মাতৃভূমি। ।
আমার বাড়িতে ছোটখাটো একটা লাইব্রেরী আছে।
যেটাকে আমার সাম্রাজ্য বলে থাকি। আসলে বইয়ের নেশাটা আমার রক্তে। বাবা বই পাগল মানুষ ছিলো। তার ইচ্ছে ছিলো এমনই একটি পাঠভবনের। কিন্তু কখনো সাধ্য হয়নি সখপূরণের।
আমি করেছি এবং পুরো রুমটি সাউন্ড-প্রুফ, যাতে স্টুডিওর কাজটিও হয়ে যায়। তবে টিকটিক একটি শব্দ টিকটিক তরঙ্গে মুখরিত রাখে আমার ক্ষুদ্র আকৃতির লাইব্রেরীটাকে। বাবার ব্যবহার করা একটি টেবিল ঘড়ি, বেশ পুরনো। বাবার ছবির পাশেই রাখা আছে। সাথে একখানা বনসাই।
দুজনের বেশ খাতির। সময়কে ধারণ করে চলছে একজন, সঙ্গোপনে অন্যজন টিক টিক টিক ...
যান্ত্রিক কোলাহল, যান্ত্রিক শহরকে, পাশ কাটিয়ে প্রায়ই গিটার নিয়ে বসে পড়ি বইগুলোকে গান শুনাতে। এমাজনের পণ্যটা হাতে পাওয়ার পর থেকে লাইব্রেরীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির গতি অনেক কমে গিয়েছে। আমার কথা নয় আমার ওয়াইফের অনুযোগ। বইদের নাকি খুবই মন খারাপ এজন্য।
হাহ হা হা ...
গান নিজের জন্যই গাই, কখনো দু’জনে মিলে গাই। আমার উনি দারুণ গায়। তবে বাংলা গান আমার একাই গাইতে হয়, উপায় নেই। মিউজিক ডিভাইসের প্লে লিস্টে সঞ্জীব’দার গানগুলো আলাদা করে রাখা আছে। আমি ভীষণ সুখী মানুষ অদ্যাবধি, তবুও প্রিয় শিল্পীর গানগুলো খুব ভালোলাগে।
দেশী বন্ধুরা বলেন ওনার গান নাকি মন খারাপের দলের জন্য। আমার মত হাসিখুশি মানুষের জন্য নয়। অথচ তার গান শুনলে চিত্তে সুখের পরিমাণটা আরো কিছুটা বেড়ে যায়। আশ্চর্য তাই না ! প্রেম-ভালোবাসার যুক্তিতে অসফল হইনি তো ! এছাড়াও ভালোবাসার জনদের কাছ থেকে প্রচণ্ড ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়ে যাচ্ছি অবিরত। তাই হয়তো এখন পর্যন্ত কোন কবিতা লিখতে পারিনি।
আর প্রেমের কবিতায় কবির বিষাদ ভর না করলে কবিতা হয়ে উঠে না। এটাও আমি বলিনি, বলেছেন কোন এক কবি....।
সঞ্জীব’দাকে মিস করে তারই একটি গানের সুরে লেখা আমার লেখা লিরিক শেয়ার করছি। দেখি ! কে বলতে পারেন লিরিকটি সঞ্জীব’দার কোন গানের সাথে যায়/কার সাথে মন মিল খুঁজে পায়-
বন্ধু তুমি কথা বলো
বন্ধু তুমি কথা শোন
বন্ধু তুমি কথার মাঝে
আমার আমার কথা জুড়ে দিও
বন্ধু তুমি দেখো আকাশ
বন্ধু তুমি ধরো বাতাস
আকাশ-মাঝে উড়ে যেও
বাতাসের কানে গান গেয়ো
বন্ধু এ পথে হেটে যেও
এ পথে আমার ঘ্রাণ নিও
পথের দ্বারে বসবো রোজ
আড্ডার ছলে প্রাণ দিও
বন্ধু তুমি ঘুমাও যখন
এলার্ম ঘড়ি পাশে রেখো
খুব ভোরের শিশির ছুঁয়ে
তুমি আমি হেটে যাবো
বন্ধু ঐ বৃষ্টিতে
ভেজা কাকের চোখ দেখো
বৃষ্টি শেষে কড়া রোদে
আমায় তুমি মনে করো
বন্ধু তুমি স্বার্থপর
ভেবে না পাই কী দিবো হর
বাদাম-ছোলকা ফেলে দিলে
আমায় শূন্য ঠোঙা দিও
বন্ধু অনেক হলো আলাপ
সময় শেষে সময়ের প্রলাপ
চলছি তবে চড়ে স্ববাক
বিদায় বেলা কেঁদো নাকো
একলা দুপুর নিঃস্ব মন
মনে পড়ে আমায় ভীষণ
নদীর জলে হাত রেখে
আরশি স্মৃতি ধুয়ে দিও
ঝুম ঝুম ঝুম বর্ষণে
কিংবা গাছের মগডালে
কোন পাখিটি গান গেয়ে যায়
বন্ধু আমার সুর চিনো ?
সুরের ছন্দে কথা হবে
আমার কথা জুড়ে দিও
বন্ধু তুমি কথা বলো
বন্ধু তুমি কথা শোন
বন্ধু তুমি কথার মাঝে
আমার আমার কথা জুড়ে দিও
আমার ভীষণ প্রিয় এই শিল্পীকে যখন খুব মিস করি তখন তার ওই গানের সুরে তাল মিলিয়ে আমার কথাগুলো গেয়ে চলি। সঙ্গী হয় আমার প্রেমিকার গিটারের লয়।
আমার প্রেমিকা আমার বন্ধু আমার স্ত্রী আমার অর্ধাঙ্গিনী একজন ব্যক্তিই। আলহামদুলিল্লাহ। যদিও তার বাংলা না বুঝার কারণে আমার মাতৃভাষায় লেখা ভাবনাগুলোর সাথে তাকে সংযুক্ত করতে পারিনা। কষ্টটা বুঝতে পারছেন আমার প্রিয় আপনারা। তাই অনেক লেখার, আবার কষ্ট করে ইংরেজি ভার্সন তৈরি করতে হয়।
তবুও কী অন্য ভাষায় ব্যক্ত করা যায় মনের শাব্দিক অনুভূতি। হয়তো বা-না।
জীবনে সুখী হওয়ার অন্যতম একটি কারণ আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবেসেছি সবসময়, আজও বাসি ভালো দেখতে স্বপ্ন হাজারো। আরেকটি ভাবনা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে; স্বপ্ন নিয়ে-
এই পৃথিবীর কত মানুষ কত কারিগর
তুমি তাদের স্বপ্ন হাজার স্বপ্ন সওদাগর
দুঃখ চাদর সঙ্গী যাদের, সঙ্গী আশার বালুচর
তুমি তাদের বিষাদ নদীর ডিঙি নৌকার ঘর
কুল হারানো মুকুল যারা, জন্ম সনদ ভুল
তুমি তাদের বাগানবাড়ি, বেঁচে থাকার ফুল
উড়াল-পঙ্খী মেঘের ছায়ায় গঙ্গা নদীর কূল
মুখবন্ধ খুনহাসিতে সোঁদা কিশোরীর দুল
ভুবননদীর পারাপারে বিদঘুটে হুট আধার
তুমি ওদের স্বপ্ন দেখাও, ইষ্টিকুটুম বাজার
একবিন্দু চিরায়ত সুখ,রহস্য কুটিল শহর
স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন বানায়, স্বর স্বপ্নসওদাগর
একটুকরো কাদা-মাটি-জল, টুকরো আঁচল
ঘুমবন্যায় ভেসে যাওয়া ক্লান্ত রাতের বাধন
ও স্বাপ্নিক স্বপ্ন তোমার দুঃস্বপ্নের জলমাতম
তুমি স্বপ্ন দেখো, স্বপ্নে রোজ করো স্বপ্নপুরণ
তমস্বান ভ্রম ভেঙে জাগো, ও স্বপ্নসওদাগর
ও স্বপ্নসওদাগর ওগো স্বপ্নসওদাগর...
অনেকক্ষণ ঘ্যানর ঘ্যানর করলাম। আর নয়, এখানেই সমাপ্তি টানছি।
আমাদের ছোট্ট রাজকন্যার নীল চোখে ঘুম আসবে না যতক্ষণ না তার সুপারম্যান বাবা ওনার ঘুমযাত্রী হচ্ছেন। আমার মেয়ে আমাকে সুপারম্যান ভাবতেই পছন্দ করে। ওর ভাষায় সুপাপম্যান, হা হা হা ... কামনা করি পৃথিবীর প্রতিটা বাবা যেন সুপারম্যানের মতই তার সন্তানকে আগলে রাখতে পারে। বিশেষ করে তার মেয়েকে....
যেতে যেতে বলে যাই, স্বপ্ন শুধু দেখলেই হবেনা কিন্তু, স্বপ্ন পূরণের চেষ্টাও করে যেতে হবে। ভালো থাকুন সবাই।
আস সালামু আলাইকুম।
১x১=৩
গল্পটি শেষ হলো। ।
কোথাও বাঁশি বাজছিলো
হাওয়ারা খুব হাসছিলো
আমার ছিলো বন্ধ কপাট
অন্ধ চোখে রাত ছিলো ...
We Miss You A Million - প্রিয় সঞ্জীব-দা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।