আমার লেখাই আমার পরিচয়।
বরফের দেশে এটাও একটা আইটেম। চারিদিকে বরফাচ্ছন্ন সেই বিষন্ন দিনগুলিতে যখন তেমন কিছু করার থাকে না, তখন ঘরে বসে গল্প বলার তালিকাতে সুন্দরমতো ঠাঁই করে নেয় পতনের গল্পও। বোরিং দিন এ কিছুটা স্পাইসি ঝাঁঝ আনার জন্যই হয়তো আমরা একটু শিশুশুলভ আনন্দে মেতে উঠি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি কোনও এক স্বর্ণকেশী চকচকে বরফের মসৃন তলের উপর দিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে হাটতে হাটতেই হঠাত করে মাটিতে ধরাশায়ী।
দেখে মায়া হবে? ধুর! কোত্থেকে যেন পাশবিক মন খলখলিয়ে হেসে উঠে। মন বলে, ধুর এটাতো শিশুশুলভ আনন্দের একটা ব্যপার মাত্র। নাহ, শীতের কঠিন থাবাতেই কি আমরা এমন পাশবিক হয়ে উঠছি নাকি, বুঝতে পারি না। তবে এটাকে পাশবিকতা বলছেন কেন? চোখের সামনে কেউ হঠাত পরে গেলে সবার আগে সবার ভেতর যেই ফিলিংস্টা আসে সেটা হল হাসি। ভদ্রতার খাতিরে আমরা সেটাকে চেপে চুপে গলা টিপে সহানুভুতির একটা মেকি বহিপ্রকাশ নিয়ে আসি মুখে, আহাঃরেঃ! বিশ্বাস না হয় বাজি ধরুন, আমেরিকাস মোস্ট ফান্নিয়েস্ট ভিডিও তো এই ব্যাপারটা নিয়েই হাসির ব্যাবসা করে যাচ্ছে মাসকে মাস, বছরকে বছর।
অবশ্য কেউ বরফে আছাড় খেলে আমরা জখন হাসি তখন আর মনে থাকে না যে আমরাও পড়ে যেতে পারি, যেকন সময়। তা সে যখন পড়ি তখন দেখা যাবে। ভবিষ্যতের ভয়ে এখনকার এই স্বতঃস্ফূর্ত নির্মল আনন্দটা মাটি করে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। আর প্রান খুলে হাসতে পারার মত আইটেম নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছু না। তাই পাশবিক বলুন আর শিশুতোষ, সে যাই হোক আমাদের আজকের পল্পের আইটেম ‘পতন’।
তবে আপনাদের কাছে একের পতনে অন্যের হাসি ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে, কিন্তু এতসব পতনের সাক্ষী হয়ে এটুকু বুঝেছি, যাকে নিয়ে হাসছেন সে যে খুব মাইন্ড করে এরকম না। কারন, হয়তো ঘন্টা দুয়েক আগে সেই হেসেছিল এরকম আরেকটি পতনে। ব্যাপারটা অলিখিত নিয়মের মতো, আরে ইয়ার এয়সা হোতা হ্যায়! কোই বাত নেহি! তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে পড়ে যায় সে নিজেও কিন্ত হাসে (অবশ্য সেরকম ব্যথা না পায় যদি)। আর হ্যা পড়তে পড়তে যখন সেটা নিয়মিত অভ্যাস হোয়ে যায় তখন আর অত ব্যথা লাগে না। বাচ্চাকালে হাটা শিখার মতোই হয়ে দাঁড়ায় ব্যাপারটা।
বরফে পড়া খুবই সহজ় একটা ঘটনা, চোখের নিমিষে এক সেকেন্ডর ও কম সময়ে হঠাত আপনি আবিষ্কার করে ফেলবেন, আপনার নিতম্ব ধরিত্রীকে কেদারারুপে বরন করেছে। পতন যেমন সহজ, তেমনি মুহুর্তেই আপনি উঠে দাড়াবেন, ভাবখানা এমন যে কিছুই হয়নি। বেশীরভাগ পতনগুলো এমনি হয়। আর বলার মতো অমন ব্যাথাও লাগে না। তবে নিয়ম জানতে হবে।
হ্যা, ইউ হাভ টু লারন হাউ টু ফল! আপনি যদি পতনের সময় অতি সতর্ক হোন, তবেই মরেছেন। ব্যাথা পাওয়ার চান্স বেশী। বাচ্চাদের মতো পড়ে যান, পতনের সহজ স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করবেন না, কাপড়ের কি হল? কাদা লাগ্লো না ভিজে গেল এসব নিয়ে ভাবনেন না। কে দেখে ফেল্লো, কে হাসলো, এসবও না। মনের আনন্দে পড়ে যান।
আর ফিজিক্সের, গতিবিদ্যার যতো সুত্র আছে কারো সাথে বিরোধ এ যাবেন না। উনাদের সবাইকে সম্মান দিয়ে, সব কথায় সায় দিয়ে যেভাবে পড়ার কথা সেভাবে পড়ুন। ফ্রী ফল যাকে বলে আর কি। দেখবেন কোনও ব্যাথা নাই, মানে সেরকম কোন ব্যাথা নাই। এবার উঠে পড়ুন, বাচ্চাদের মত ।
যদি কেউ হাসে তো আপ্নিও হাসুন। পতন হল ন্যাচারের সেন্স অফ হিউমার! হেহে! আর আপনি সেই হাসির নায়ক! তবে পাঠক, আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি যেসব পতন কাহিণী বলছি সব, এটা ইয়াং লোকজনের, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পতন নিয়ে হাসাহাসি করার কথা বলছি না। আশা করি অতটা পাশবিক আমাদের সেন্স অফ হিউমার না, আর ন্যাচারের ও না।
ভাবছিলাম আপনাদের মুল গল্পে নিয়ে যাব যেখানে কিছু চরিত্রের পতন কাহিনী শুনাবো, কিন্তূ শুরুটা এমন কিম্ভুতাকার বিশাল্কায় হয়ে গেল যে, অনেকে হয়ত পল্পের এখানেই শেষ ভেবে উঠে পড়ার পায়তারা করছেন।
নাহ ! এবার যেহেতু আর কিছু মনে আসছে না, তা হলে আপনাদের মুল পল্পে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
সেদিনের কথা। নবকুমারের সাথে হাটছিলাম। বরফ পড়েছে বেশ কিছুদিন আগে। মাঝে গত দুই দিন বৃষ্টিতে সব বরফ প্রায় ধুয়ে মুছে যাবার মত অবস্থা।
কিন্তু পুরোটা না যেতেই হঠাত শুরু হলো কঠিন মাইনাস সংক্রান্তি। আর যাবে কোথায়! পাতলা যেই বরফের আস্তরণ ছিলো, সেটাই এমন সুন্দর স্বচ্ছ কাচময় পিচ্ছিল একটা আকার ধারন করে যে, জুতার নিচে সজারুর কাটা দিলেও সে জিরো ফ্র্যাকশানে পুরা পুলসিরাত পার হয়ে যাবে! পতনের জন্য এটা হলো সবচেয়ে ভয়াবহ সময়, আর ব্যথা পাবার নিশ্চ্যয়তা এখানে গ্যারান্টিসহ দেওয়া হয়। বুঝতেই পারছেন, এটা পোজ পোজ তুলার মত বরফ না। ঠান্ডায় জমাট বাধা বরফের ছুরির মত, মসৃণ খুনী। নবকুমার আর আমি পাশাপাশি হেটে যাচ্ছি।
পথে অনেক নুড়ি পাথর ছিটানো হয়েছে, হাটার সুবিধার্থে । অনেক জায়াগায় নুড়ি পাথরের লেয়ারের উপরে এত পাতলা বরফের এত মসৃন আবরণ, দেখে মনে হবে আরে! বরফ কোথায়? স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নুড়ি পাথরের স্তর। এরকম গোলক ধাঁধাময় রাস্তা পেরিয়ে বলা যায় নিরীহ গোছের ভদ্র রাস্তাতে উঠলাম, সামনের দিকে বেশ একটু ঢাল, তবে প্রায় বরফ বিহীনই বলা যায়। বেশ গতিতেই হাটছি। নবকুমারের এটা প্রথম উইন্টার।
আমার চার। কি বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম ঠিক মনে নেই, কিন্তু হঠাত কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি আমি মাটিতে বসে আছি। মনে মনে গালি দিলাম, ধুর শালা! সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এ যেন ডাঙ্গায় এসে আছাড় খাওয়া। এমন শুকনাতে কেউ পড়ে? নবকুমার জুনিয়র ছেলে। বুঝতে পারছে না, হাসবে না সমবেদনা জানাবে।
আমি চটপট উঠে গেলাম। কাধে কম্প্যুটার ব্যাগ। নাহ! কোখাও তেমন লাগে নি, একমাত্র তলদেশ ছাড়া। যাক তবু বাচা গেল, এমন শুকনাতে আছাড় টা ব্যথা ছাড়াই কাটানো গেল। ঘুরে গিয়ে জায়গাটা পরীক্ষা করে দেখলাম।
এটা সেই পাতলা আবরন, মসৃণ খুনী! কিন্তু এত পাতলা যে বলতে হবে গুপ্ত ঘাতক!
নবকুমার ছেলে ভালো। সে হাসলো না, কিংবা বলা যায় হাসি ভালোমতোই সামলে নিতে পারলো। নবকুমার বলে চল্লো, এই পথে সে প্রতিদিনই যাতায়াত করে। তাও প্রায় দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একবারও পড়েনি।
সে ত খুবই অবাক, আমি কিভাবে পড়লাম ! আমি গুপ্ত ঘাতক দেখালাম। আর মনে মনে বললাম, চাইলে তো ঘন্টা ধরে এটার বিশ্লেষন করতে পারো, কিন্তু একবার পতন হলে বুঝবে, এক সেকেন্ডর কত ভাগের এক ভাগ সময়ে তুমি কোনও কাজ সার্থকভাবে সম্পাদন করতে পারো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।