পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
মিসরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে সংঘর্ষে দুই বিক্ষোভকারী ও এক পুলিশ নিহত হয়েছেন। দেশটির রাজধানী কায়রোয় বড় ধরনের বিক্ষোভ চলাকালে গতকাল এ ঘটনা ঘটে।
কায়রো ছাড়াও আলেকজান্দ্রিয়াসহ বেশ কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সরকারবিরোধীরা বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার দু’দিনের হরতালের ডাক দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন হোসনি মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ‘ফেসবুক’র মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক তরুণ জড়ো হয়ে রাস্তায় নেমে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার জন্য প্রধান বিরোধী দল ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে দায়ী করলেও ব্রাদারহুড এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জানা যায়, কয়েকদিন দেশটির যুবসমাজ প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের দুর্নীতি, অত্যাচার, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে। দেশটির ৮০ হাজার তরুণ ‘ফেসবুক’র একটি গ্রুপে সরকার পতনের আন্দোলনে জড়িত হওয়ার অঙ্গীকার করে একটি গ্রুপের সদস্য হয়।
অনলাইনের মাধ্যমেই তারিখ নির্ধারণ করে মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থল তাহরির স্কয়ারে হাজারও মানুষ জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয় ও পুলিশের সঙ্গে দিনব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দিনশেষে তারা ঘরে না ফিরলে বুধবার ভোরে নিরাপত্তাকর্মীরা জোর করে আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের কয়েকজন পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করে। পুলিশ টিয়ারশেল ও জল কামানের মাধ্যমে এর জবাব দেয়। পুলিশ এ সময় রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে শহরে পুলিসসহ তিনজন মারা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত এক বিক্ষোভকারী ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে ও আরেকজন নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে মারা যায়। এ সময় আন্দোলনকারীদের হাতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয় বলেও তিনি জানান।
আল-জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়, আন্দোলন প্রথম অবস্থায় শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে পুলিশ তাদের স্থান ত্যাগ করতে বল প্রয়োগ করায় সহিংসতার রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ ডজনখানেক কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এ ঘটনায় আল-জাজিরার ক্যামেরাম্যানসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। মাদুদ কায়রাত নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা কার্যকর সরকার চাই, আমরা মোবারকের পদত্যাগ চাই, আমরা জরুরি আইন চাই না। ’ আরেক আন্দোলনকারী বলেন, তিউনিসিয়ানরা যদি পারে তবে আমরা নয় কেন?’ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘হোসনি মোবারক তিউনিসিয়ার জয়নাল আবেদিনের চেয়ে আলাদা কিছু নন। তবে আমরা তাকে পালাতেও দেবো না। ’ এদিকে সংঘর্ষের এক ঘণ্টা পরে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার জন্য প্রধান বিরোধী দল নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডকে দায়ী করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
তবে ব্রাদারহুড সরকারের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ঘটনার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক সংবাদ সম্মেলনে মিসরের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে তিউনিসিয়ায় সাম্প্রতিক আন্দোলন ও এর সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসমাজ এ আন্দোলন শুরু করেছে বলে বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কে (সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম) প্রচারের মাধ্যমে জড়ো হওয়া হাজার হাজার কায়রোবাসী মিসরের সরকার উত্খাতের দাবিতে বিক্ষোভে নামে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮১ সাল থেকে মিসরের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ধরে রাখা হোসনি মোবারককে উত্খাতে ফেসবুকে একটি পৃষ্ঠা খোলা হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া কথা ওই ফেসবুক পৃষ্ঠায় নিশ্চিত করে হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার কায়রোর সংসদ ভবন, সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়া ও ইসমাইলিয়ায়ও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। অত্যাচার, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ—ফেসবুক পৃষ্ঠায় এই আহ্বান জানিয়ে মিসরবাসীকে বিক্ষোভে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে এর আয়োজকরা।
বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, তাহরির স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি জলকামানেও হামলা চালিয়েছে। এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আজকে আমি মরতে এসেছি। কিছুতেই ভয় নেই আমার। ’ এদিকে মিসর সরকার বুধবার আবারও হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, সরকার আর কোনো প্রতিবাদ মিছিল সহ্য করবে না এবং প্রতিবাদীদের গ্রেফতার করা হবে। সব ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও গতকাল মিসরের হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
মিসরের হোসনি মোবারক সরকারের বিরোধীরা তার কয়েক দশকের ক্ষমতার ইতি টানতে দুই দিনের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।