গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মুগদায় একটি হাসপাতাল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা জনগণের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম তার অনেক কিছুই পূরণ হয়েছে। এবার যা অবশিষ্ট থাকবে তা আগামীতে পূরণ করা হবে। এ জন্য আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পর যোগাযোগমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ২৬ জুলাই বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারকে পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আসা উচিত।
সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আগামী জানুয়ারির মধ্যে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২৫ অক্টোবর। এসব হিসাবে সরকারের সামনে সময় খুব বেশি নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের পর অনেকেই আশঙ্কা করছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে হয়তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। বলা হচ্ছে, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং তার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের কাছে তারা যে ওয়াদা করেছিলেন তার অনেক কিছুই পূরণ করা হয়েছে। এখন আমরা একটু দেখে নিতে পারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কী ওয়াদা করেছিল এবং সেগুলো কতটুকু পূরণ হয়েছে বলে মানুষ মনে করছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে (যাকে দিনবদলের সনদ বলে প্রচার করা হয়েছে) বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন সম্পর্কে বলা হয়েছিল : '...দেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। সরকারি মদদে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এএসএম কিবরিয়া, শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার, অ্যাডভোকেট মনজুরুল ইমাম ও মমতাজউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মী বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ লাখ লাখ আওয়ামী লীগ সমর্থক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার নারী ও শিশু হয় ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, নারী-শিশু, ব্যবসায়ী_ কেউই ওই ফ্যাসিস্ট বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। জনগণের জীবন হয়ে পড়ে নিরাপত্তাহীন। সরকারি মদদে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান, গ্রেনেড হামলা, বোমাবাজি এবং একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের নতুন টার্গেটে।
পক্ষান্তরে বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। আইনের শাসন ভেঙে পড়ে। ...বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। জোট সরকার ও হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় খাদ্য সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। ...সর্বক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার ফলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট হয়ে ওঠে অসহনীয়। পাঁচ বছরে জোট সরকার ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। ...জোট সরকার জনপ্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, রাষ্ট্র ও সরকারের সব অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। শত শত উচ্চপদস্থ বেসামরিক, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাকে পদচ্যুত, বাধ্যতামূলক অকালীন অবসর প্রদান করার পাশাপাশি দলীয় অনুগত অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ম বহিভর্ূতভাবে পদোন্নতি প্রদান ও নিয়োগদান করে। দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগদানের জন্য কর্মকমিশনের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
...অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বিচারপতি নিয়োগ করে সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও মানুষের শেষ ভরসাস্থলটিকে ধ্বংস করা হয়। '
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে উলি্লখিত বক্তব্যের সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষই হয়তো একমত পোষণ করবেন। মানুষ ওই অপশাসনে অতিষ্ঠ হয়েছিল বলেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটের ফল বিপুলভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষে গেছে। ভোটের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার ছিল : '...সংকটের আবর্তে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী-সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র ব্রত। ...একটি প্রকৃত অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেখানে নিশ্চিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর অধিকার ও সুযোগের সমতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, দূষণমুক্ত পরিবেশ।
গড়ে উঠবে এক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র। '
এই রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করা হয় : '...দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ... দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ...বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।
... আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ... সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমন করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। ... বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে।
... দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। ... জনজীবনে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। ... ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ন করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি আরও অনেক ভালো ভালো কর্মসূচির কথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আছে।
এখন সরকারের মেয়াদকালের শেষে এসে বাস্তবে কি দেখা যাচ্ছে? অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচির একটি একটি ধরে যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে সরকারকে খুব বেশি নম্বর দেওয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী কথা বেশি বলছেন, কাজ করছেন কম। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার অঙ্গীকার রক্ষায় সরকার সফল হয়েছেন বলে মেনে নেবেন না সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রবণতা মানুষকে দুঃসহ চাপের মধ্যেই রেখেছে। ঘুষ-দুর্নীতি জোট আমলের চেয়ে কমেছে বলেও কেউ মনে করেন না। দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করার পরিবর্তে অনুগত রাখার আগ্রহই সরকারের মধ্যে লক্ষ করা গেছে।
দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান গোলাম রহমান একে নখদন্তহীন কাগুজে বাঘ বলে উল্লেখ করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। 'চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নিমর্ূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ' করার কথা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি-দখলবাজি-টেন্ডারবাজির খবর প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় ছাপা হচ্ছে। ছাত্রলীগ একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
অপ্রতিরোধ্য, ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া ছাত্রলীগ সরকারকে নাজেহাল করে ফেলেছে। এদের অপকাণ্ড রুখতে না পারলে সরকারের অন্য সব সাফল্য চাপা পড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সরকারের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের দিন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। আর ২০১৩ সালের ২০ জুলাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই বাড়াতে পারেনি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে সরকার দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য স্বীকার করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব থাকলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ছয়জনের বিচারকাজ শেষ করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এই সরকারের মেয়াদকালের মধ্যেই দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন আছে। বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় না এলে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে যে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে তার জন্য সরকারের যে প্রশংসা পাওয়ার কথা সেটা তারা পাচ্ছে না বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে না পারার কারণে। বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে বলে নির্বাচনী ইশতেহারে ওয়াদা করা সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়া অতীত আমলের মতোই অব্যাহত থাকতে দেখা যাচ্ছে। পরিমাণ হয়তো কমেছে তবে একেবারে বন্ধ হয়নি।
নিরপরাধ মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা করছে বলে অভিযোগও বন্ধ হয়নি। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় দেশে মাঝে-মধ্যেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের নীতিই অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা এ সরকারের আমলেও অগ্রাধিকার পেয়েছে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে বলে সরকার সমর্থকরাও মনে করেন না।
পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার অঙ্গীকারও পূরণ হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন না। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিরীহ নাগরিকদের হয়রানির খবর এখনো শোনা যায়। ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের অপকাণ্ড সরকারকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি পুলিশ এই সরকারের আমলেও যে ধরনের আচরণ করেছে, তা বিএনপি-জামায়াত জোট আমল থেকে মোটেও আলাদা নয়। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পুলিশকে শক্তিপ্রয়োগ করে ভণ্ডুল করে দিতে দেখা গেছে একাধিকবার, যা কাম্য ছিল না।
জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পেরেছে এই দাবি করা যায় না। বিএনপির একজন নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী অপহৃত হওয়ার পর তাদের কোনো খোঁজ নেই। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্পৃহ ভূমিকা নিন্দনীয়। সাংবাদিক সম্পতি সাগর-রুনি এবং নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী ত্বকি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অর্থাৎ খারাপ দৃষ্টান্তের সংখ্যা কমেনি।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ওয়াদাও পূরণ করা হয়নি। উপজেলা পরিষদকে সরকার কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিতে গিয়ে উপজেলা পরিষদকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা একবারেই অনুচিত কাজ হয়েছে। এটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ধারণার পরিপন্থী।
সরকারের এসব কাজের সমালোচনা বিভিন্ন সময়েই করা হয়েছে।
কিন্তু সরকার চোখ-কান বন্ধ রেখে কোনো কিছু না দেখা ও না শোনার ভান করে সময় পার করে দিয়ে এতদিন স্বস্তিবোধ করলেও এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে এগুলোই সরকারের জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার চোখ-কান বন্ধ রাখলেও মানুষের চোখ-কান খোলা ছিল এবং তারা সবই দেখেছে ও শুনেছে। সরকারের অনেক বড় সাফল্য হয়তো আছে কিন্তু মানুষের কাছে সেগুলো বড় হয়ে দেখা দেয়নি। জোট সরকার থেকে মহাজোট সরকারকে আলাদা করে চেনা সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেক সময়ই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। বর্তমানে তা ২৭ শতাংশের নিচে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করলেও গত চার অর্থবছরেই বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চার শতাংশের বেশি ছিল; কিন্তু সরকারের এই সাফল্য ভোটারদের কেন প্রভাবিত করতে পারেনি তার জবাব সরকারকে খুঁজতে হবে নির্মোহভাবে। না হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যত স্বপ্নই দেখা হোক না কেন তা পূরণ হওয়ার আশা ক্ষীণ।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
ই-মেইল : নরনযঁ৫৪@ুধযড়ড়.পড়স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।