তাং : ১২-১২-০০০০১২
আজ ১২ তারিখ, এখানকার সবগুলো তারিখই ১২, মাস গুলোও ১২, বছরগুলোও ১২, হয়ত কোনদিন ১৩ হবে, তবে সেটা যে কখন তা সঠিক গননা করার মত ক্যালকুলেটর আপাতত হাতের কাছে নেই, কারন এখানকার ১ দিনের সমান পূর্ব জন্মের লক্ষ কোটি বছর। জ্বি হ্যা, ঠিক ধরেছেন, পরজন্মের একদিনের কথা বলছি। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি হাবিয়া দোজখের কোন এক স্থানে অবস্থান করছি। স্থানটা সঠিক নির্দ্দিষ্ট করতে পারছিনা কারন হাতের কাছে এই মুহূর্তে মানচিত্র নেই। তবে অনুমানে সেই আগের জন্মের পরিচিত স্থান তথা দেশটাকেই মনে হয় বারবার, কারন চারদিকে কোলাহল আর গিজগিজ করছে সেই পরিচিত মুখগুলো।
যাক প্রথমেই আজকের আবহাওয়া সম্পর্কে একটা ধারনা নেয়া যাক, এখানকার আবহাওয়া চমৎকার সুন্দর। যানিনা আমার কেন এমন মনে হয়। পূর্বজন্মে শুনে এসেছি আগুনের কুন্ডলিতে নিক্ষেপ করার কথা, সাপ দিয়ে কামড় খাওয়ানোর কথা, হাতুড়ি দিয়ে মাথায় বাড়ি দেয়ার কথা ইত্যাদি। আপনারা কি ভাবছেন?? আমি মিথ্যা বলছি, আমি কি বলতে চাইছি এখানে এসব কিছুই নেই? আসলে ঠিক তা না, এখানে সবিই আছে, লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াসের তাপমাত্রার আগুন, বড় অজগর সাপ, হাতুড়ির বাড়ি, সব সব, কিন্তু এগুলোতে প্রথম-প্রথম সমস্যা হত, এখন সয়ে গেছে, কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়, পূর্ব জন্মের এই কথাটা এই জন্মে এসে উপলব্ধি করছি, কারন এখানে খাওয়া নিয়ে কোন টেনশন নেই, কখনো ক্ষিদেই লাগেনা, তাই পিঠের উপর দিয়ে যা যায় কোন সমস্যা হয়না, পরম করুনাময় ইশ্বর যে কখনো হিংস্র নিস্ঠুর হতে পারেনা এ বোদহয় তারই উদাহরন। ভেবে দেখুন ঈশ্বররা সবসময় আগুন পানি নিয়েই ভয় দেখিয়েছে, শস্তি কাঠামো বানিয়েছে, কিন্তু না খাইয়ে কষ্ট দেওয়ার কথা কোথাও বলেনি।
এখানকার বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা লক্ষ ডিগ্রীর চেয়েও উপরে, কিন্তু সয়ে গেছে, বরং তাপমাত্রা কিছু কমে গেলে অসস্তি লাগে, শরীরে শীত শীত অনূভুতি হয়। মনে হয় পূর্বজন্মে উত্তরান্চলের মানুষরা বুঝি এভাবেই কষ্ট পেত। আর সাপের কামড়-হাতুড়ীর বাড়ি, বহূ দিনের অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন ওগুলো ম্যাসেজের মত মনে হয়। বরং ওটা না পেলে শরীর ম্যাজম্যাজ করে। জানিনা এটাই হয়ত পরম দয়ালুর বৈশিষ্ট।
যে কারনে আজ হঠাৎ অনেকদিন পর লিখতে বসলাম, পূর্বজন্মে আমার লেখালেখির শখ ছিলো, পত্র পত্রিকায় লেখা সম্ভব ছিলনা বলে ব্লগ সাইটগুলোতে লিখতাম, এর মাঝে সামহোয়ার নামে এক ব্লগে মাঝে মাঝে লিখতাম। হঠাৎ করে আজ ওখানকার কিছু পরিচিত মুখের সাথে এই হাবিয়া দোজখে দেখা। বহূদিন পর দেখে আফসোস হল। কারন সবাই আছে সেই আগের মতই, কারো কোন পরিবর্তন নেই, তবে এখানকার আলোচিৎ ইস্যু আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু। সেই তখনকার মতই।
তাদের কথোপকথনের একটা অংশ তুলে দিলেই হয়ত আপনাদের বুঝতে কষ্ট হবেনা :
আস্তিক : দেখেছো, তোমরা তোমাদের অপকর্মের ফল ভোগ করছ, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীদের এই পরিনতিই হয়। এরপরও কি তোমরা বিশ্বাস করবেনা??
নাস্তিক : তা না হয় মানলাম আমরা এই জঘন্য পরিবেশে আছি, কিন্তু তোমরা, সৃষ্টিকর্তাকে মেনেও তো সেই আমাদের সাথেই আছো।
আস্তিক : আমরা সাজা ভোগের পর স্বর্গে প্রবেশ করব, আর তোমরা চীরকাল এখানেই থাকবে।
নাস্তিক : তোমাদের এই সাজাভোগ কবে শেষ হবে?? পূর্বজন্মেও তোমরা মুলা ঝোলানো প্রথায় বিশ্বাসী ছিলে, এই জন্মেও, তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কোন সঠিক দিনের আভাস পেয়েছো? আর এখানেতো দেন রাত কিছুই দেখছিনা, যেখানে দিন-রাতই নেই, সেখানে বছর কিভাবে হবে, আর লক্ষ বছর পর স্বর্গে পৌছাবে কোন যুক্তিতে?
আস্তিক : আচ্ছা সে নাহয় হোল। কিন্তু এটাতো বিশ্বাস করতে হবে আমাদের ধর্মগ্রন্থসমূহে যেশব আযাবের ইন্গিত ছিলো তার সবিই এখানে সত্যিরুপে দেখছো।
নাস্তিক : পূর্ব জন্মেও তোমরা এমনিই ছিলে। কোনকিছু ঘটে গেলে বলতে সেটাতো আমাদের ধর্ম অনেক আগেই বলে গেছে, এখানকার পরিবেশ ভিন্ন, পূর্বজন্মের সমাপ্তি শেষ আমরা চলে এসেছি অন্য এক ডাইমেনশানে, এখানকার আবহাওয়া, জলবায়ূ সবিই পূর্বজন্মের পৃথিবী গ্রহ থেকে ভিন্ন। এই জলবায়ূ নিয়ে বিগ্গানীরা নিরলস প্রচেষ্টা করা যাচ্ছে, আর তোমরা বসে আছো পূর্বজন্মের কুসংস্কার নিয়ে।
আলোচনা ভালোই চলছিলো, দুপক্ষই যুক্তি পাল্টা যুক্তি দিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলো, আমি অপেক্ষায় আছি কোন দল শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এটা দেখার জন্য, মাঝে মাঝে আস্তিক নাস্তিক উভয় পক্ষের কেউ কেউ পিছলানোর চেষ্টা করছিলো, কিন্তু আবহাওয়া অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকায় কেউই পিছলাতে পারছিলনা, ওখানে সবিই ছিলো শুকনো খড়খড়ে, তাই চাইলেই কেউ পিছলাতে পারছেনা। আলোচনা চরম উত্তেজনাকর অবস্থা, যে কেউ একদল হার স্বীকার করবে।
ঠিক এমন অবস্থায় শশরীরে হাজির হলেন কয়েকজন তালগাছবাদী। তারা দুদলের মাঝখানে রাখা তালগাছ নিয়ে ছুট দিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হল, এবারো কিছুই জানতে পারলাম না।
চলবে..........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।