মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
সেদিন ভার্সিটি লাইফের রোমিও রাশির এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রোমিও রাশি বলছি, কারণ আমরা সারা বছর নিয়মিত ক্লাস করে, নোট করে, পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট করতাম ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটির মন পাওয়ার আশায় অথচ এই বন্ধুটি ক্লাস না করে, পড়ালেখা না করে টো টো করে ঘুরত, সিনেমা দেখত। বছর শেষে দেখা যেত যে মেয়েটির মন পেতে এতগুলো ছেলে 'ভালোমানুষ' হয়ে রইল, সেই মেয়েটি এই বন্ধুর গলায় মালা পরিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্যাপন করছে। নতুন বছরেও ডানাকাটা পরীকে নিয়ে একই নায়ক, একই ঢং, একই স্ক্রিপ্টে গল্প এগিয়ে যেত। সেই বন্ধুটিকেই কেমন হতাশ হতাশ লাগছিল।
কারণ জানতে চাইলে বলল, আর বলিস না দোস্ত, পারফরম্যান্সে ভাটা পড়েছে। পুরনো প্রেমিকাকেই এবার নতুন গিফট দিতে হচ্ছে। এই হলো এখনকার প্রেম-ভালোবাসার হাল-হকিকত।
অথচ একসময় ভালোবাসার কথা মাথায় আসতেই আমাদের ভাবতে হতো রঙিন খামে চিঠি, ছোট ভাই বা বান্ধবীকে দিয়ে চুপি চুপি বইয়ের ভাঁজে তা গুঁজে দেওয়া, অতঃপর কী হয়, কী না হয় ভেবে নির্ঘুম রাত কাটানো। প্রেমে পড়তেও যথেষ্ট সময় নিতেন একেকজন।
যাঁর সঙ্গে সারা জীবন কাটাবেন, তাঁকে কি আর যাচাই করে না দেখেই মন সিন্দুকের চাবি দিয়ে দেওয়া যায়? আর প্রেম একবার হয়ে গেলেও তা থাকত গোপন। কবিগুরু তাই বলেছিলেন, 'ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো মনের মন্দিরেতে...। '
এখন প্রেক্ষাপট অনেক পাল্টেছে। প্রোফাইল পিকচারে লাইক দেওয়ার মাধ্যমেও প্রেমে পড়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে।
দু-চার দিন পর অনলাইনে সংসারও শুরু হয়ে যায় ফেসবুক পাসওয়ার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে। আর এই পাসওয়ার্ড আদান-প্রদানই সম্পর্ক ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রে। সম্পর্ক ভাঙতেও খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। ওই যে আবার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস 'ইন এ রিলেশনশিপ উইথ' থেকে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর নাম উঠিয়ে সিঙ্গেল করে দিলেই ল্যাঠা চুকে গেল। তাই এখনকার গানও পাল্টে গেছে, 'দুই দুইডা গার্লফ্রেন্ড লইয়া পড়ছি আমি ফান্দে...।
'
শুধু যে গানের ক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে তা কিন্তু নয়। আগেকার সিনেমায় প্রেমের দৃশ্যে দেখা যেত নায়কের মাথা কেটে গেছে, নায়িকা দ্রুত আঁচল ছিঁড়ে বেঁধে দিচ্ছেন। এখন এমন দৃশ্য দেখা যায় না। কারণ এখনকার মেয়েরা নিজের ব্র্যান্ডেড ওড়নার আঁচল না ছিঁড়ে হয়তো প্রেমিকের শার্ট ছিঁড়ে কপাল বাঁধে। অনেকের প্রেমিকা তো ওড়নাই পরে না।
প্রেমের কথা বলতে চাইলে লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদের পরেই আসে রজকিনি-চণ্ডীদাশের কথা। এই চণ্ডীদাশ ১২ বছর বড়শি ফেলে বসে ছিলেন রজকিনির জন্য। এখনকার এক চণ্ডীদাশ তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করেছে। প্রেমিকের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে প্রেমিকা আনন্দে পুলকিত হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, সে ভাবের রাজ্যে চলে গেছে। এমন সময় প্রেমিক মশাই তাড়া দিচ্ছে, 'হ্যাঁ অথবা না যেকোনো একটা দ্রুত বলো।
মলির ক্লাস ছুটির টাইম হয়ে যাচ্ছে। '
তাই বলে ভাববেন না প্রেমিকারা পিছিয়ে আছে। স্বার্থপরতায় (নাকি শব্দটা স্বার্থনিজতা হবে?) তারাও এগিয়ে যাচ্ছে সমান গতিতে। আসুন, নমুনা দেখে নিই-
এক প্রেমিক বলছে তার প্রেমিকাকে, 'প্রেয়সী আমার, তোমার সঙ্গে আমি আমার সব কথা শেয়ার করতে চাই। আমার সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না- সব!'
প্রেমিকা : শুরুটা তাহলে তোমার এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড দিয়েই হোক।
যা-ই হোক, প্রেমের মধ্যে হিসাব-নিকাশ না টানাই উত্তম, কেননা প্রেম স্বর্গীয়। এটা জানে এবং মানে এমন এক বাবা-ছেলের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
বাবা : আমার ছেলে হয়ে তুই এতগুলান প্রেম করিস, লজ্জা করে না?
ছেলে : না, করে না।
বাবা : তুই জানিস, প্রেম স্বর্গীয়?
ছেলে : জানি বাবা, জানি বলেই আমি স্বর্গটা নিশ্চিত করতে চাই। একটা-দুইটায় যদি ফসকে যায়?
প্রেমের পরেই আসে বিয়ের ব্যাপার।
যাঁরা এবার প্রেম করছেন, আগামীতে বিয়ের চিন্তাভাবনায় মগ্ন, তাঁদের জন্য একটা কৌতুক।
প্রেমিকা : যখন আমরা বিয়ে করব, তখন তোমার যত দুঃখ-কষ্ট, সব আমি তোমার সঙ্গে ভাগ করে নেব।
প্রেমিক : আমার কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই।
প্রেমিকা : আমি তো বিয়ের আগের কথা বলছি না। বলছি বিয়ের পরে যেগুলো হবে।
আসলে বিয়ের পরের জীবন আনন্দের হবে, না দুঃখের হবে তা নিয়ে এত চিন্তা করে লাভ নেই। আসুন, আজ আমরা সবাই একটা প্রার্থনা করি, এ বছর ভ্যালেন্টাইন ডে যার কাঁধে মাথা রেখে পালন করছি, আগামী বছরও যেন একই কাঁধে মাথা রেখে পালন করতে পারি। আপাতত কাঁধ হারানোর চেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন আর কিছু হয় বলে মনে হয় না; না, কী বলেন?
(লেখাটি দৈনিক কালের কণ্ঠের রম্য ম্যাগাজিন 'ঘোড়ার ডিমে' ভালোবাসা সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো। বিস্তারিত লিঙ্ক এ)
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।