আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সারপ্রাইজ

সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। সময় চলে যায়। স্মৃতি শুধু রয়ে যায়। মুন তোমার কথায় বলি বন্ধুর মতো বহুদিন যখনই ডাক দিতাম ক্যাম্পাসে এসে দাঁড়িয়েছ আমার বিপদে তুমি সবচেয়ে আগে। অনেক সময় দিয়েছ, আমায় সব সময় ভাল পরামর্শ দিতে।

আমি একটু খরচ বেশি করতাম তাই নিয়ে তুমি সব সময় আমায় বকা দিতে। আমারই ভালোর জন্য অপচয় করতে দিতে না। আমার শরীর যেন সুস্থ থাকে তাই নিয়ে তুমি ব্যস্ত থাকতে। তোমার মতো ভাল বন্ধু মনে হয় আমি কোনদিন পাব না। একদিন তোমার ফোন বন্ধ পেলাম।

তুমি কলেজে আসনি। আমার মধ্যে যেন কেমন অস্থিরতা এসে গেল। কোথায় তুমি কিছু না বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি ছুটে গেলে তোমার হোস্টেলের সামনে। তোমার বান্ধবী ঊষার কাছে শুনলাম গতরাতে খাবার টেবিল এ খাওয়ার সময় তুমি নাকি মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলে।

তোমার বান্ধবীরা ম্যাডামকে জানালে তারা ডাক্তার আনেন। তোমার বাবাকে ফোন করে জানালে তোমাকে সেই রাতে তিনি বাসায় নিয়ে যান। ঊষার কাছে আরও শুনলাম সেদিন রাতে তোমার অবস্থা ভাল ছিল না। সারা রাত স্যালাইন চলেছিল। তারপর ঊষার কাছ থেকে তোমার বাসার নাম্বার নিয়ে কল দিলাম।

তোমার মা ফোনটা ধরেছিলেন। তাকে আমার পরিচয় দিলাম। আমি তোমার সাথে পড়ি। তুমি আমার একজন ভাল বন্ধু। তোমার সাথে কথা বলতে চাইলাম।

তোমার কি হয়েছে জানতে চাইলাম। তোমার মা অনেক কাঁদলেন আর বললেন তুমি দেশে নেই, তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। এমন খবর পাব ভাবতেই পারি নি। আমি aunty র কাছে তোমার কি হয়েছে জানতে চাইলাম। aunty বললেন তোমরা নাকি ভাল বন্ধু একসাথে পর আর ওর কি অসুখ সেটাও জানো না? তাহলত কেমন বন্ধু? সেদিন সত্যি আমি লজ্জা পেয়েছিলাম।

তারপর তিনি বললেন তোমার ব্রেইন টিউমার। সেদিন রাতে তোমার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল। বলে কাঁদতে কাঁদতে ফোনটা রেখে দিলেন। কথাটা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এও কি সম্ভব? এত বড় রোগ নিয়ে তুমি কত সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করছিলে।

কখনও কাউকে বুঝতে দাও নি তোমার মধ্যে এত দুঃখ। এখন মনে পড়লো তুমি পিকনিকে আর দিন সবার সাথে মজা করতে করতে মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলে। সবাই ছুটাছুটি করে তোমার মাথায় পানি দিলে তুমি কিছুক্ষন পর সুস্থ হয়েছিলে। তোমার কাছে জানতে চাইলে তুমি বলেছিলে যে গরমের মধ্যে অনেক কষ্ট হয়েছে তাই। সেদিন যদি একটু বুঝতে পারতামা আজ হয়তও এত কষ্ট পেতাম না।

তোমার অসুখের খবর শুনে নিজেক আর ধরে রাখতে পারছি না। কখন তোমার ভাল হয়ে যাওয়ার খবর পাব। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাকে ফোন দিলাম। মায়ের কাছে তোমার কথা বলে অনেক কাঁদলাম।

মা আমাকে অনেক সান্তনা দিতে লাগলেন কিন্তু কিছুই যেন আমার মাথায় ঢুকল না। মাকে বললাম তোমার জন্য দোয়া করতে। তুমি যেন ঠিক আগের মতো আমার পাশে থাকতে পারো। আমি ভাল আছি সেটা তো তোমারই জন্য। মনের অজান্তে এই কথা গুলো মাকে বলে ফেললাম।

আমি মসজিদ,মাজার সব যায়গায় যেয়ে অন্তরের অন্তস্তল থেকে তোমার জন্য দোয়া করলাম। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। সকাল হতে না হতেই তোমার বাসায় ফোন করলাম। ফোনটা ধরেছিল তোমার ছোট ভাই। ওর কাছে জানলাম কাল তুমি তোমার বাবার সাথে দেশে ফিরবে।

শুনে আমার মনটা ভাল লাগলো। হইত তুমি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবে। রাতে ভাবলাম তোমার সাথে দেখা হলে তোমাকে অনেক বকা দিব কেন তুমি আমার কাছে এত বড় অসুখের কথা গোপন করেছো, আরও অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে সকাল হল। ঊষাকে কল দিয়ে জানতে চাইলাম তোমাকে আনতে ও আমার সাথে এয়ারপোর্ট এ যাবে কি না! আজ তুমি আসবে তোমাকে একটাসারপ্রাইজ দিব। ঊষাকে বললাম তুমি যেমন না বলে গেছ তুমিও জানবে না আমি তোমাকে না বলে আনতে যাব।

ঊষা রাজি হল। এয়ারপোর্ট এ যেয়ে জানতে পারলাম প্লেন আসতে এখন ও এক ঘণ্টা দেরী। ঊষা আমাকে অনেক কথায় বলল, কি ব্যাপার! বন্ধুর জন্য এত পাগল নাকি অন্য কিছু! আমি তো জানতাম শুধু বন্ধু কিন্তু আমার এখন মনে হচ্ছে...। ঊষার কথা শুনে আমার মনে হল সত্যি কি অন্য কিছু! কেন আমার এত মন খারাপ, কেন মায়ের কাছে তোমার জন্য কাঁদলাম, দোয়া চাইলাম? মনের অজান্তে তুমি আমার মনটাকে জুড়ে আছ। ঊষার কথাটা কি ঠিক! এবার তুমি এলে তোমার কাছে জানতে চাইব আমার জন্য কি তোমার মনটা এমন হয়! এয়ারপোর্ট এ ঘোষণা দিল এবার প্লেন ল্যান্ড করবে।

একটু পর আমি তোমাকে দেখতে পাব। এত ভাবতে পারছি না। আমি ঊষাকে সাথে নিয়ে এসেছি। ওর সাথে তোমার বাবা আমাকে দেখলে কিছু মনে করবে না। আমি তো তোমার বাবাকে চিনি না।

আমার আগ্রহ দেখে ঊষা বলল একটু চুপ করে পিছনে সরে দাড়াও। সারপ্রাইজ দিতে হলে আড়াল করে দাড়াতে হয়। এক এক করে সবাই নামলো। সব শেষে একজনকে দেখে ঊষা বলল ঐ যে মুনের বাবা। আমার আনন্দে বুক ভোরে উঠল এবার তোমায় দেখতে পাব।

uncle এর পিছনে তোমাকে দেখতে না পেয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম, আমাকে আর কষ্ট দিল না। মুন তুমি বেরিয়ে আসো। ঊষা দৌড় দিয়ে তোমার বাবার কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করল- uncle মুন এখন কেমন আছে? কোথায় ও? এর মধ্যে uncle পিছন থেকে চারজন একটা কফিন বের করে আনল। তোমার বাবা কফিনের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল তুমি ওটার ভিতরে। ঊষা দৌড়ে আমার কাছে এসে বলল, “ সান, ঐ যে তোমার মুন।

ওটার মধ্যে তোমার মুন আছে। তুমি আর ওকে দেখতে পেলে না। না বলে এসে তুমি ওকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলে, ও নিজে ঐ কফিনে করে এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিল। ” ঊষা কাঁদতে লাগলো। আমি আসতে আসতে এগিয়ে গেলাম।

কফিনের কাছে যেয়ে কফিনে হাত দিতেই বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব হল। আমার নিঃশ্বাসটা যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। কফিনের গায়ে হাত দিয়ে থাকতে থাকতেই একটু পর একটা বড় সাদা আম্বুলেঞ্চ এসে কফিনটা তুলে নিয়ে গেল। আমার আর মুনের কাছে প্রশ্ন করা হল না! লিখেছেন ..... এখানে মেঘে ঢাকা তারা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।