নিতান্তই আজাইড়া মানুষ আমি। দশ মিনিট হয়ে গ্যাছে, সজীব চুপচাপ বসে আছে। নামিরাও চুপচাপ বসে আছে সজীবের মুখোমুখি। সজীবের কেন যেন মনে হচ্ছে নামিরা ওর সাথে দুষ্টুমি করছে। নামিরা নিরবতা ভেঙে বললো, “ সজীব ভাইয়া, আমার ওপর প্লিজ রাগ করবেন না।
অফিসের এইচ আর হিসেবে আমাকেই এই কথাটা আপানাকে বলতে হচ্ছে” সজীব কিছু না বলে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে উঠে পড়লো, ফিরে এলো নিজের ডেস্কে। এটা কিভাবে সম্ভব! সজীব গত একটা বছর ধরে এই অফিসে কাজ করে যাচ্ছে। সবাই মোটামুটি ওর কাজে খুশি। নিরব তো প্রায়ই বলে যে সজীবের খুব শিঘ্রী প্রমোশন হবে এতে সে নিশ্চিত। কিভাবে ওর চাকরী চলে যেতে পারে! হাতে ধরা খামটা খুলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না।
নামিরা বলেছে রাশেদ স্যার ওর নামে কমপ্লেইন করেছে! সজীব একটা দিনও ঠিক সময়ে অফিসে আসেনি। কিন্তু কোন ওয়ার্নিং ছাড়া শুধু এই কারনে রাশেদ স্যার এমন করতে পারলো! সেই রাশেদ স্যার যার সাথে সজীবের এতো বন্ধুত্বপূর্ন একটা সম্পর্ক! কিছুতেই কিছু মেলাতে পারলো না সজীব! কাল সকালে এসে ওকে সব কাজ গুছিয়ে দিতে হবে। একটা দিন আগে কিভাবে ওরা স্যাক করতে পারে? নাহ, মাথাটা পুরো গরম হয়ে গেছে সজীবের। কাউকে কিছু না বলে সজীব চলে এলো বাসায় তিনটার দিকেই।
বাসায় এসেই গোসল করে ফেললো ও যাতে মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়।
কিন্তু কিসের কী! উল্টো আরো গরম হয়ে গেলো মাথাটা। ইচ্ছে করছে কাচের গ্লাসগুলো ভেঙে গুড়ো করতে। সব রাগ কেন যেন লাগলো রাশেদ স্যারের ওপর। উনি এভাবে অপমান করতে পারলেন! এর আগে দুইটা অফিসে কাজ করেছে সজীব। দুটোতেই চলে যাবার আগে সবাই ফেয়ার ওয়েল দিয়েছে।
ওরা কেউই সজীবকে যেতে দিতে চায়নি। আর এরা এতোটা অপমান করার সাহস পায় কিভাবে? রাশেদ স্যার আজ ওর সাথে একটা কথাও বলেনি। অথচ প্রতিদিন ওরা একসাথে লাঞ্চ করে। কোন যোগ্যতা ছাড়াই এই লোকটা অফিসের এতো বড় একটা পোষ্ট দখল করে আছে, আর এই সত্যটা সজীব জানে। অফিসের বাকি একটা লোকও জানে না রাশেদ স্যারের পোষ্ট গ্যাজুয়েশন ডিগ্রীও নেই।
উনি এখন ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটিতে ইএমবিএ করছেন। সজীবকে এতোকিছু খুলে বলার একটাই কারন, স্যার সজীবকে দিয়েই তাঁর সব অ্যাসাইনমেন্ট করিয়ে নিত। আর সজীব এই গোপনীয়তাটা খুব ভালোভাবেই বজায় রাখতো এতোদিন পর্যন্ত। তাহলে কি এই জন্যই রাসেদ স্যার ওকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? এতোটা ছোটলোক হতে পারে কেউ! কাল যদি অফিসে ওর শেষ দিন হয়, তবে, কালই হবে সব গোপনীয়তার ধর্ষণ। এটা ভেবে একটু মাথাটা ঠান্ডা হলো সজীবের।
পরদিন সকালে অফিসের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো সজীব। সবাই এতোক্ষনে নিশ্চই জেনে গেছে যে সজীবকে স্যাক করা হয়েছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা। ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো সজীব। সবাই খুব স্বাভাবিক আচরন করছে দেখে বেশ অবাকই লাগলো ওর।
মানুষজন এতো ভালোভাবে মনের ভাব লুকোতে পারে আজকাল! ডেস্কের কাগজপত্র, ল্যাপটপ এর মধ্যেই উধাও। সজীব রনিকে ডেকে পেনড্রাইভটা তার হাতে দিয়ে বললো, “ রনি, এখানে রাশেদ স্যারের এম বি এ এর অ্যাসাইনমেন্ট আছে, একটু প্রিন্ট করে দেন” রনির মুখের ভাব দেখে খুব আনন্দ পেল সজীব। ও ঠিক যেরকম আশা করেছিলো তেমনই ছিলো রনির মুখটা। লাঞ্চ এর সময় রফিক ভাই আর মনিকা এসে চুপিচুপি সজীবের কাছে এ ব্যাপারে যখন জানতে চাইলো তখন সজীবের ষোলকলা পূর্ণ হয়ে গেছে। আজ আর কোন ক্ষোভ নেই ওর।
নামিরাকে ডেস্কের চাবিটা দেয়ার সময় শেষ ঝামেলাটা বাঁধলো। রাশেদ স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন সজীবকে। নিশ্চই উনার কানে কোনভাবে ব্যাপারটা চলে গ্যাছে। তাতে কী? ভয় পায় নাকি সজীব? চাকরীটা তো আগেই চলে গ্যাছে। তবু স্যারের চোখের দিকে কেন যেন তাকাতে পারছিলো না সজীব।
স্যার বসতে পর্যন্ত বললেন না। হাত ধরে যখন রুমের বাইরে নিয়ে গেলেন তখন পা কাঁপছিলো সজীবের। তারপর যা হলো তা সজীবের কল্পনার বাইরে... নামিরা ততক্ষনে অফিসের সবাইকে ডেকে এনেছে। স্যার সজীবের কাঁধে হাত রেখে অ্যানাউন্স করলেন, এখন থেকে সিনিয়র এডিটর হিসেবে কাজ করবে ও। গতকাল যে ছোট্ট একটা নাটক সাজানো হয়েছিলো সজীবকে আজকের সারপ্রাইজটা দেয়ার জন্য এটা বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর।
কিন্তু আজ সকাল থেকে ও যা করলো তার সারপ্রাইজটা রাশেদ স্যার যখন পাবেন তখন কেমন লাগবে সজীবের?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।