ফেইস বুক থেকে পাওয়া মেয়েটি । লুবনা । আলো আঁধারিতে তোলা একটি আবক্ষ ছবি ওর প্রোফাইল পিকচার । মেডিক্যাল স্টুডেন্ট । চিটাগং মেডিক্যাল কলেজ ।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেই লুবনা এক্সেপ্ট করল । মেয়েটি দারুন দারুন পোস্ট দিত । সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দিত । মামুনের তিনশোর বেশি ফ্রেন্ড আছে । কিন্তু লুবনার দিকে ওর মনযোগ সবচেয়ে বেশি ।
ওর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ইচ্ছে মামুনের ভেতর মাথা চাড়া দিতে থাকল । কি করা যায় ভাবছিল ও । বিষয়টা অসাধ্য নয় তবে ঝামেলার তো বটেই । ও বুয়েট থেকে পাশ করেছে দু বছর আগে । আর্কিটেক্ট ।
একটা বড় রিয়েল এস্টেট ফার্মে জব করে । ওর নক্সায় ধানমন্ডিতে দুটো অ্যাপার্টমেন্ট নির্মানাধীন রয়েছে ।
কিন্তু ফেইসবুক নিয়ে সে এখন দারুন ব্যস্ত । বিশেষ করে লুবনাকে নিয়ে । কিভাবে যোগাযোগ করা যায় তাই ভাবতে লাগল ।
মামুনের ডিটেইলসে সেল নম্বর দেওয়া ছিল । কিন্তু লুবনাকে সহজে ট্রেস করার কোন উপায় ছিলনা । যাহোক একটা উপায় করতে হবে , ভাবছিল মামুন । এসময় এক অভাবিত ঘটনা ঘটল । উপায় স্বয়ং এসে হাজির হয়ে গেল ।
সেদিন সন্ধার পরও সে অফিসে । গুলশান প্রজেক্টের নক্সাটা নিয়ে কাজ করছিল । অফিস খালি । করিডোরে পিয়নটা বসে আছে । এমন সময় মোবাইল বাজল ।
ওপাশে কিন্নর নারী কন্ঠ ,’ আমিকি মামুন সাহেবের সাথে কথা বলছি ?’
‘ জ্বি মামুন বলছি । কে বলছেন জানতে পারি ?’ অচেনা নারী ওকে খুঁজছে । মামুন বেশ কৌতুহল বোধ করল । ভেতরটা উষ্ণ হতে শুরু করল । নারী কন্ঠ ভেসে এল,’ লুবনা বলছি চিটাগাং থেকে ।
আমি কি আশা করতে পারি আপনি আমাকে চিনতে পারবেন ?’ মামুনের ভেতরে ঝিমাতে থাকা কলি পাঁপড়ি মেলে দিল । সুখের ঝর্নায় জল গড়াল । উত্তেজনায় মাংসপেশী সংকুচিত হল । কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গেল । ওর অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরোল,’ জ্বি অবশ্যই চিনতে পারছি ।
তবে এভাবে আপনার ফোন পাব ভাবতে পারিনি । ‘
‘ আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন ?’
‘ না না কিযে বলেন ? বিরক্ত হব কেন বরং অনেক খুশি হয়েছি বলতে পারেন । ‘
‘ যাক বাঁচা গেল । কেমন আছেন বলেন ? কি করছেন ?’
‘ ভাল আছি । এই যে জব ।
অফিসে আছি এখনো । ‘
‘ তাই , রাতেও অফিস ?’
‘ কি করব বলুন দায়িত্বযে । এবার বলুন আপনি কেমন আছেন ?’
‘ ভাল আছি । বলতে পারেন বেশ ভাল । অবসর সময় কাটাচ্ছি ।
ফোর্থ ইয়ার ফাইনাল সবে শেষ হল । ‘
মেঘ না চাইতেই যে জল গড়াল তা মুষলধারে চলতে থাকল । ওতে ভিজে দুটো মানব মানবী একাকার হল । এরই মাঝে কয়েকবার মামুন চিটাগাং গেল । একসাথে ঘোরাঘুরি , সময় কাটানো ।
পতেঙ্গা বীচ , নিউমার্কেট , ফয়স লেক । লুবনাও একবার ঢাকা এল । ওর বড় আন্টি ঢাকা থাকেন । সেন্ট্রাল রোডে । সেখানে দুদিন বেরিয়ে গেল ।
দুদিনই মামুনের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছে । ঢাকা ইউনিভার্সিটি , ক্রিসেন্ট লেক , মিডনাইটসান ।
মামুনের জন্য বিয়ের বেশ প্রস্তাব আসছে । ও মাকে লুবনার বিষয়টা বিস্তারিত বলেছে । ছবি দেখিয়েছে ।
মা মোটামুটি রাজী হয়েছেন । তবে বাবার কাছে এখনো গোপন আছে । তিনি সদ্য অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা । মেজাজ খানিক রুক্ষ । তাঁকে বলার দায়িত্ব মা নিতে চাচ্ছেন না ।
তবে বলাটা জরুরী । যেভাবে বিয়ের প্রস্তাব আসছে !
লুবনার লেখাপড়ার পাট চুকতেও দেরী নেই । সে অবশ্য মা বাবার সাথে যথেষ্ট ফ্রী । সবকিছুই তাঁদের জানিয়েছে । এই মেয়েটিকে তাঁরা বিশেষ স্নেহ করেন ।
আস্থাও রাখেন ।
গুলশানের ড্রয়িংটা ফাইনাল হওয়ার পর বসের কাছ থেকে দুদিনের ছুটি নিল মামুন । লুবনাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে । চিটাগং রওনা হল ও । লুবনাকে আগেভাগে কিছু জানাল না ।
সারপ্রাইজ দেবে । সোহাগ প্রিমিয়াম বাসটা মালিবাগ থেকে ছাড়ল দুপুর সোয়া একটায় । ও জানালার পাশের সি১ সীটটি বুক করেছিল । পাশের সীটে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক বসলেন । মামুন তাকাতেই প্রাণবন্ত হাসি দিলেন ।
যথা সময়েই বাস ছাড়ল । তবে সায়েদাবাদ পৌঁছেই কোঁকাতে শুরু করল । নিদারুন জ্যাম । ফ্লাইওভারের কাজ চলছে । পাশের লোকটি বাচাল প্রকৃতির মনে হল ।
একাধারে বকে চলেছেন । স্বজাতিকে গালাগাল সেরে রাজনীতি নিয়ে পড়লেন । বেশ চালাচ্ছেন । আশে পাশের সীট থেকেও উৎসাহ ব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছেন । ধলপুর থেকে যাত্রাবাড়ি পার হতে এক ঘন্টা লাগল ।
এবার তিনি মামুনের দিকে মনযোগ দিলেন । পই পই করে নানান কথা জিজ্ঞেস করে চললেন । প্রথমে মামুন বেশ আড়ষ্ট থাকল । শেষে সেও জমে গেল । দারুন মজে গেল আড্ডায় ।
কাঁচপুর ব্রীজ পেরোতে যে আরো দেড় ঘন্টা লাগল তা টেরই পেল না । গল্পে গল্পে মামুন তার পারিবারিক বিস্তারিত ইতিহাস ভদ্রলোককে বলেছে । তিনিও এক নম্বর স্রোতার মত ওর মুখের দিকে চেয়ে শুনেছেন । ভদ্রলোক বললেন,’ বিয়ে করছোনা কেন । আরে বাবা এটিইতো বিয়ের উপযুক্ত সময় ।
‘ মামুন মৃদু হাসল । এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না । লোকটির মুখে রহস্যময় হাসি দেখা দিল । গলার স্বর নামিয়ে মুখ মামুনের দিকে ঝুকিয়ে নিলেন । বললেন,’ আছে নাকি পছন্দের কেউ ?’ মামুন তাঁর দিকে চেয়ে মৃদু হাসল ।
কিযেন বলতে চেয়েও বলল না । ভদ্রলোক বললেন,’ বুঝেছি বুঝেছি ঘটনা আছে । তা মেয়েটি কে ? নাম কি ওর ?’
গল্পের নেশা মামুনকেও পেয়েছে । বলবনা বলবনা করেও শেষাবধি ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিল । চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় লুবনার বাসার ঠিকানা পর্যন্ত বলল ।
ভদ্রলোকের রহস্যময় হাসি আরো বিস্তৃত হল । ‘ তুমি মেয়েটির বাসা চিন , গেছ কখনো ?’
‘জ্বি না । চিনিনা । যাইওনি । লুবনা বেশির ভাগই হোস্টেলে থাকে ।
মাঝে সাজে বাসায় যায় । ’
‘ আমি ওদের বাসা চিনি । তুমি চাইলে নিয়ে যেতে পারি । ‘ মামুন চমকাল । জোশের চোটে সব কিছু বলে দিল ! ভদ্রলোকের কোন খোঁজই নেয়নি ।
এখন দেখা যাচ্ছে তিনি লুবনাদের বাসা চিনেন । তাহলেতো ওদের পরিবারের সবাইকেই চিনেন । কি দাঁড়াল বিষয়টা ? নিজের আহাম্মকির জন্য রাগ হল । এখন আর কি করা ! বলল,’ আমিতো বাসায় যাব না । চক বাজারের কাছে কোন একটা হোটেলে উঠব এমন ইচ্ছা ।
‘
‘তা উঠ । আগেতো বাসায় গিয়ে দেখাটা কর । ‘
‘ এটা ঠিক হবে না । আগে কখনো যাইনি । তাছাড়া লুবনা জানেওনা আমি এসেছি ।
‘
‘ আরে বোকা ছেলে এটাইতো সারপ্রাইজ । তোমাকে দেখে কেমন অবাক আর খুশি হবে দেখ লুবনা । ‘
‘ আপনি ওদের চেনেন ?’
‘ চিনি মানে ভাল করেই চিনি । ‘
‘ কিন্তু আংকেল আমি যাবনা । দয়া করে অনুরোধ করবেন না ।
‘
‘ তুমিতো দেখছি আসলেই বোকা । নগদ নগদ সারপ্রাইজ দেবে । এর মজাই আলাদা । ‘
‘ ওর মা বাবা কি বলবে বলুনতো ?’
‘ আরে ওর বাবাতো ঢাকা গেছে । ওর মা নিতান্তই সিধা মহিলা ।
‘
দামপাড়ায় বাস থেকে নেমে দেখা গেল ভদ্রলোকের জন্য গাড়ী অপেক্ষা করছে । একপ্রকার জোর করেই মামুনকে তুলে নিলেন । মিনিট পঁচিশেক পরে একটা সুন্দর চারতলা বিল্ডিংএর সামনে গাড়ী থামল । ভদ্রলোক বললেন,’ এটিই লুবনাদের বাসা । ‘ মামুন ছোট হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে নামল ।
ভদ্রলোকও নেমে এলেন । মামুন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চাইল । তিনি হেসে বললেন,’ চল তোমাকে পৌঁছে দেই । তুমিও সাহস পাবে । ‘
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে কলিং বেল চাপলেন ।
লোকটির পেছনে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মামুন । দরোজা খুলে দিল লুবনা । সাথে সাথে তার চোখ বড় গোল গোল হয়ে গেল । থ হয়ে রইল । একবার ভদ্রলোকের দিকে আবার মানুনের দিকে তাকাতে লাগল ।
মেয়েটির আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে । অনেক কষ্টে সে লোকটির মুখের দিকে চেয়ে বলল,’ বাবা !’ বাবা! মামুনের পিঠে কে যেন কষে চাবুকের বারি দিল । হতভম্ব হয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইল । ভদ্রলোক বললেন ,’ কি হল ? আগেতো ভেতরে যাও । আমার বাসায় তুমি থাকার মত যথেষ্ট রুম ফাঁকা আছে ।
তারপরেও মন চাইলে হোটেলে চলে যেও । এখনতো ভেতরে ঢোক । ‘ দেহের শক্তি বল কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা । তারপরো কোথ্থেকে ধার করা বলে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল মামুন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।