প্রিয়তমেষু,
ছেঁড়া কাঁথায় তো শীত মানছিলোনা তোমার,
তোমার ছোট্ট শরীরখানি
তিরতির করে কাঁপছিলো বারবার,
তারপরও কী স্বপ্নকাতর ছিলেনা তুমি?
ঐ ভিনদেশের কোন এক যুবকের সামনে তোমায় অসংকোচ হতে হবে,
ভেবে কি লজ্জায় লাল হওনি একবারও?
আহা!
রোদ মাখা ছোট্ট একটি উঠান,
ধূলো মাখিয়ে তাতে খেলছে ছোট্ট শিশু, তোমার সন্তান,
আর এককোণে উনার মাথাল...
হিংসা লাগে জানো?
কেন যে তোমার মত এত সুন্দর করে স্বপ্ন দ্যাখতে পারিনা!
আপনমনে হাসোনি একবারও তুমি?
প্রাসাদোপম বিউটি পার্লারগুলো যে তোমার জন্য নয়
বোনটা আমার,
ওখানে গেলে যে তোমাকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেবে!
ও আচ্ছা, তুমি তাহলে নিজের মতই সেজে নিবে?
গালে এক পরত হলুদ, আর পায়ে দু’টাকার আলতা।
এত্তো কিছু ভেবে রেখেছিলে আগে থেকে!
বাবার হাত ধরে ভোরসকালে সীমানা পার হবে তুমি,
পাহাড়ি শীতের হাওয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে হাড়গুলোও,
শতচ্ছিন্ন ওড়নাখানি আরেকবার জড়িয়ে নাওনি গায়ে?
বুকটা ঢিপঢিপ করেনি যখন হাঁটছিলে পায়ে পায়ে?
ওই ওড়নাখানিই তোমাকে আটকে দিলো
অনিকেত প্রান্তরের কাঁটাতারের বেড়ায়,
সূর্যটা তখন একটু একটু আলো ছড়ায়।
অসহায়ের মত দেখছিলে তুমি,
তোমার উদভ্রান্ত বা’জান,
আর উর্দিপরা বি এস এফের কোন হিংস্র জওয়ান,
এবং শিশির ভেজা রাইফেলের উদ্ধত নল।
দ্যাখতে তো পারোনি
আলোর বেগে ছুটে আসা ওই তপ্ত বুলেট
যাতে বিঁধে গেল তোমার ছোট্ট শরীর,
একটা রোদ মাখা উঠান
ধূলোমাখা শিশু, তোমার সন্তান,
এবং একটা মাথাল।
এইটুকুন লোহার টুকরো, ধূসর এবং নিরেট,
কি অসম্ভব ক্ষমতা তোমার, ছোট্ট বুলেট!
ফেলানি জানো,
নিজেকে অনেক বড় অপরাধী লাগে আমার,
যখন কাঁটাতারে উলটো ঝুলে শরীর তোমার,
মৃত্যুতে নিভু নিভু চোখে তৃষ্ণার ঝড়
আমি তখন লেপের নিচে উষ্ণতার সাগরে বিভোর!
ফেলানি,
আজকে এই পউষের ভোরে, দ্যাখোনি আমায় তুমি?
আমার চোখের কোণে ওটা কিন্তু শিশিরবিন্দু ছিলোনা।
তুমি বিশ্বাস করোনা?
ওটা যে অর্বাচীন অশ্রুজল,
বাঁধ মানেনি, এতোই বন্য।
তোমারই জন্য।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।