আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুর শেয়ার বাজার, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি দলবাজদের উলংগ উপহাস, তাতে দেশের কল্যাণ বয়ে আনেনা, কেবল সরকারকেই বিব্রত করে।

www.theeconomist2011@yahoo.com

শেয়ার বাজার নিয়ে সামুতে ইতিমধেই অনেক গুলো লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও আলোচনাটি চলছে। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হযেছে, তারা মুলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। যাদের মূলধণের পরিমান মোটামুটি কয়েক লক্ষ্ টাকার মতো। এই বিনিয়োগকারীদের টাকাটি হয়ত যোগার হয়েছে বাবা=১০০০০০, মা=৫০০০০, আপা দুলাভাই=৫০০০০, খালামামা=৫০০০০, নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব=১০০০০০, নিজের চাকুরী ও অন্যান্য থাত থেকে সংগ্রহীত=১০০০০০ টাকার মতো। এসবই ধার করা বা কিছু সময়ের জন্য নেওয়া।

অনেকেই বলছেন, লাভের লোভে জুয়াখেলে এখন হায় হায় করে সরকারকে দোষারোপ করা কেন? যারা অর্থনীতি জানেন তারা বলেন এটি কোন জুয়াখেলা নয় এটি একটি বিনিয়োগ-যা উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় হবে। জুয়াখেলাতে কোন উৎপাদনশীলতা নেই। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগটি করাই হলো উৎপাদনশীলতায় বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডার তার বিনিয়োগকৃত কোম্পানীর বাৎসরিক লাভ পারেন তার শেয়ারের পারসেন্টেজ অনুয়ায়ী-এটাই প্রকৃত পথ। এর বাইরে নিত্যদিনের শেয়ার কেনা বেচা হয়, তা মুলত সেকেন্ডয়ারী শেয়ার-যা বেচাকেনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষঠান ব্রোকার হাউস, মেইনটেইন,আইন-কানুন ও অন্যান্য বিষয়াদি তদারকির প্রতিষ্ঠানটি হলো এক্সটেঞ্জ কমিশন।

আজকের শেয়ার বাজার যদি বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা এভাবে দরপতন হতে থাকে তাহলে সরকারকে একটি চরম আর্থিক অব্যবস্থপনা ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সরকারকে বিব্রত করতে অনেক মহল তৎপর থাকলে-তারা হয়ত শান্তি পাবেন। কিনতু সরকারের ক্ষতির সাথে সাথে আমাদের যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী গোষ্ঠিটি সৃষ্টি হয়েছিলো তারা পথে বসবে, সামাজিক সম্মান হারাবে, সংসারে সরাসরি অশান্তি আসবে-এটা নিশ্চিত। একই সাথে দেশের অর্থনীতির একটি বিপর্যকর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসছে, তাহলো, যদি বিনিয়োগ না থাকে, তাহলে উৎপাদন কমে যাবে, উৎপাদন কমলে বা বিনিয়োগ না থাকলে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে, ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের অনেক নিয়োগকৃতরাও কমর্হীন হবে। এতে সমাজের সাবির্ক ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে, ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেলে বাড়তি উৎপাদন হবেনা, এমনকি উৎপাদনও কমে যাবে, ফলে একই ভাবে আবার নিয়োগ কমে গিয়ে বেকারত্ব বাড়বে।

আর বেকারত্ব বা কর্মহীনতা সমাজের জন্য কেমন বুঝা তা সরকার ও জনগণ উভয় ভাল করেই জানে। অর্থনীতি নামাজিকেও ক্ষমা করেনা। ১৯৯৬ সালে শেয়ার ব্যবসার ধ্বস নামার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি জনাব আমিরুল ইসলামকে প্রধাণ করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়, কমিটি তার রিপোর্ট জমা দিলেও তৎকালীন সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি অজানা কারণে। আবার ২০১১ তে এসে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে কেন? সরকারের তো অনেক বদনাম তখন হয়েছিলো, তাহলে এবার কেন আগেই ব্যবস্থা নেয়া হলোনা? এরকম প্রশ্ন অবান্তর নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের কান্না ও প্রতিবাদও অর্থহীন নয়। কিন্তু এসবের মধ্যেও অনেক মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে অনেকেই বিশ্সাস করেন।

তাদের কাছে প্রশ্ন হলো, এটা তো সরকারের মাথায় সব সময়ই থাকতে হবে, এদেশে যে বিরোধপূর্ণ রাজনীতি সেখানে তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে। নাকি সকল রোগের মেডিসিন হিসাবে যুদ্ধাপরাধকে ব্যবহার করা হবে? যার পেটে ভাত নেই, ক্ষুধার্তের কাছে কোনআন হাদিস বা যদ্ধাপরাধের কোন মূল্য আছে? আজ যারা সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তারা কিভাবে বাসায় ফিরবে, কার কাছে যাবে, সরকারের কাছেই তো তারা দাবী জানাবে, প্রতিবাদ করবে। আমরা বিগত দিন গুলোতে কতগুলো চাকুরীর পদ সৃষ্টি করেছি? কতজনকে খালি পদে নিয়োগ দিতে পেরেছি? আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখেছি। সেখানে কর্মহীন এই ক্ষুদ্রপূজির ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছে, নিজেদের ভালো করছে, দেশের ভালও করছে, সরকারকেও যন্ত্রণাহীন রাখছে। সেখানে তাদের প্রতি চড়াও হওয়া কিংবা তাদের দাবীকে দমিয়ে রাখা সরকারের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবেনা।

দেশের সকল নাগরিকই এই শেয়ার বাজার ধ্বসের ক্ষতির সম্মুখীন হবে, কোননা কোন ভাবে। সরকার বিপদে পরলে আমাদের বিপদ চলে যাবে-এটা ভাবার কারণ নেই। সরকার বিপদে পড়া মানেই এখানে জনগণকে বিপদে ফেলা। সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীরা কি টাকা পয়সা চেয়েছে, চাঁদা চেয়েছে? কেবল সরকারের কাছে উপযুক্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করে-এতে সরকার রা কোন মহলের গায়ে ফোসকা পড়ারতো কিছু নেই। সরকারের দায়িত্বই হলো অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করা।

আজ শেয়ার বাজারের বিপর্যয়, প্রবাসীদের দেশে ফেরত, রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস, বিদেশে নতুন কোন জনশক্তি রপ্তানী করতে নতুন নতুন বাজার তৈরী করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য- জনগণ সরাসরি সরকারকেই দায়ী করবে। সরকার যে এ বিষয় গুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা তা কিন্তু কেউ বলেনি। তাই সরকারের কাছে ন্যায্যতা আশা করা, প্রতিবাদ জানানো, প্রতিকার চাওয়াকে সরকার বিরোধী কাজ বলে মনে করার কারণ নেই। এসব ন্যায্য দাবীর প্রতি অবিচার বা গুরুত্ব না দিলে জনগণতো সরকারকে গণবিরোধী বলবেই। সরকারের দলীয় লোকদের কথা বার্তা শুনলে ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখ আরো বাড়ে-কমেনা।

আমাদের শেয়ার বাজার ধ্বংস হলে, প্রবাসী ফেরত আসলে, রেমিটেন্স কমলে ক্ষতি হবে জনগণের, সরকারের, সরকারী দলের, বিরোধী দলের, দেশের ভিক্ষুকের, কৃষকের, মজুরের-এক কথায় সবার। তাই এ পরিস্থিতিতেও যখন দেখি দলমার্কা আলোচনা, তর্ক, প্রতিবাদ, ঠেংগানো-তখন ক্ষতিগ্রস্থদের কোথাও যাবার জায়গা থাকেনা, কেবল সুইসাইড করা ছাড়া। তাহলে এখন উপায় কি? শুধু ধৈর্য্য? ঠিক আছে, জনগণ না হয় বাধ্যতামূলক ভাবেই ধৈর্য্য ধরলো, তাতে কি আমাদের ক্ষতি পূরণ হবে? যদি হয় তাহলে আমরা উপায়হীন হয়েই ধৈর্য্য ধরবো। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে নিশ্চিত করতে হবে, শেয়ার বাজারকে স্থিতিশীলতা দিবেন। যাদের সিদ্ধান্তের কারণে, যাদের কারসাজির কারনে আজ এই পতন, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনবেন।

অবশ্য এটিও বিশ্বাসযোগ্য নয়, বিগত ৯৬ সরকারের সময়ের অভিজ্ঞায়। তারপরও আমাদেরকে সরকারের ব্যবস্থার প্রতিই আস্থা রাখতে হবে। সরকার সর্মথকদের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি যেন শত্রুতায় রূপ না নেয়, এটা দলবাজদের বুঝতে হবে। এখানে হারজিতের কিছু নেই, সবার আগে দেশের জনগণ, দেশের কল্যাণ। তারপর আমাদের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, স্বপ্নপূরণ, ট্রানজিট, বাধঁনির্মান, চুক্তি ইত্যাদি।

ঘরে ঘরে চাকুরীর কথা বলে তার বদলে বেকারত্ব চাইনা, দ্রব্যমূল্যের ফাসেঁ অতিষ্ঠদের বিনিয়োগকৃত টাকার নিরাপত্তা চাই, করুনা চাইনা, নিজের টাকায় নিজে উপার্জন করে বাচঁতে চাই-স্বাভাবিক জীবন যাপন ও সম্নান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমরাই সরকারকে বিশ্সাস করে ভোট দিয়ে যে দায়িত্ব পালনের জন্য ক্ষমতা দিয়েছি, সেই দায়িত্ব পালনে নড়চর হলে জবাব চাইবো, প্রতিবাদ করবো, প্রতিকার চাইবো, আমার পিটে আঘাতের আগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের/দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের কি পিএম একবার জিজ্ঞাসা করবেন, ”তোমরা কি সবাই ঘুমিয়ে আছো, সব সিন্ডিকেটের অন্তরে?””

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.