এক
: এসেছ ?
অন্ধকারে ঢিল ছুড়ার মতো করে বললাম আমি ।
: হু ...
একটু পরেই কাছে ,খুব কাছে থেকে একটা উত্তর এল । লাজুক একটা কন্ঠ । লজ্জা আমিও পেলাম । ওর সাথে আমার আজ প্রথম দেখা ।
কিন্তু কি আজব বলুন তো ? যেই দুজনে অন্ধকার পেরিয়ে একটু এই ল্যাম্পপোস্টটার নিচে এলাম ,অমনি ফটাশ করে একটা শব্দ !
বাতিটা ফেটে চৌচির !একরাশ অন্ধকার নেম এলো আবার !
এই অন্ধকারে কখন যে এতোটা কাছে এসে দাড়িয়েছে সে ,বুঝতে পারলাম না ।
সে কি জেনে এত কাছে এসেছে ?
নাকি না জেনে ?
ইচ্ছায় ? নাকি অনিচ্ছায় ?
প্রশ্নগুলোর একটাও তখন জাগেনি মনে ।
কথা ঐ টুকু পর্যন্তই থেমে রইল ওর সাথে ।
নিরব রাত গভির হয়ে আসছে আরও । রাস্তায় গাড়িগুলো যেন চলতে ভুলে গেছে ।
দুদিক থেকে আটকে যেন এই জায়গাটুকুকে আঁধার থেকে আঁধারে ঠেলে দিতে সচেতন তারা ।
আমি অন্ধকারে স্থির ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! কেন জানি মনে হল ও আমার দিতে তাকিয়ে নেই । ওর চোখ আকাশে ! মেঘের ভেতর থেকে দু একটা তারা খোঁজে ওখানে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারলে যেন বাচে ও ।
এটা কেবল মনে হওয়া পর্যন্তই ..নিশ্চিত নই আমি । একটা বলার মত সময় পেরোল ।
ঠিক সেসময় !হাতে একটা ছোয়া অনুভব করলাম । নাকের উপর একটা ছোট্ট কামড় !
খুব কাছ থেকে একটা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ !
ভু ..করে একটা গাড়ি ছুটে গেল পাশ দিয়ে ।
আবছা আলোয় ওর মুখটা দেখলাম । সরল ,শুভ্র ,ইতস্তত কেমন একটা বেখেয়ালী ভাব ।
সাথে যেন একটু প্রশ্রয় ,নিষিদ্ধ একটা কিছুর আকর্ষন ।
এক তীব্র হাতছানি ।
আমি তাতে মজে গেলাম । এক মুহুর্তে দীর্ঘ একটা সময়ের কথা ,দিনের আলোয় সভ্য সমাজের কথা ভুলে গেলাম । কেমন একটা ঘোর ঘোর ভাব ।
এক টানে তাকে তুলে ফেললাম গাড়িতে ।
একটু পরে গাড়িটা এসে থামলা আমার বাড়ির সামনে ।
ওকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম আমি ।
তারপর ... । দীর্ঘ একটা রাত পেরোলো । জানালার পর্দা ভেদ করে উকি দিল দিনের আলো ।
আলোয় আলোয় ভরে গেল রুমটা । চোখের কাছে একটা কুত্সিত ,কদাকার মুখ দেখলাম । এটাকে এখানে আনল কে ?
এখুনি এটাকে ছুড়ে ফেলতে হবে রাস্তায় !
নাহ ! এখানে আর এক মিনিটও রাখা যাবেনা এটাকে । ছিঃ ছিঃ কি করেছি আমি !
সহসা শত কোটি ধিক্কারে ছেয়ে ফেললাম নিজেকে ।
তক্ষুনি হাতে কয়েকটা টাকা তুলে দিলাম ওর !
তারপর .. এক লাথিতে রাস্তায় ।
এ রাস্তার জঞ্জাল ,রাস্তায়ই থাকুক ।
এ অন্ধকার রাতের আকর্ষন ,অসভ্য উন্মাদনা নিভারনের মহৌষধ ।
দিনের আলোয় সভ্য সমাজে এর কোন দাম নেই ,থাকতেও পারেনা ।
দুই
তারপর .. ! একটা আলোকিত দিন কাটলো আমার । সভ্য একটা দিন ।
সুশীল সমাজের মানানসই একটা দিন ।
এরপর আবার ঘনিয়ে এলো সন্ধা । সুর্যটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলে মাটির নিচে !
আর ফেলে গেল একরাশ অন্ধকার ,একটা অসভ্য সমাজের জন্য ঘৃনা !
সেই লজ্জায় যেন চাঁদটাও মুখ ঢাকল মেঘের পেছনে ।
রাত ঘনিয়ে এল । ক্রমেই হতে লাগল গভির ।
ধীরে ধীরে আমার এই সভ্য সুশীল দেহটা থেকে বেরিয়ে এলো একটা অসভ্য মানুষের ।
গাড়িটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম আমি । একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দেখলাম সে দাড়িয়ে আছে ।
স্বল্প স্বল্প আলোয় তাকে দেখাচ্ছে চমত্কার !
বড্ড আকর্ষন তার চোখে ,মুখে ,ঠোটের কোনায় লুকিয়ে থাকা একটা বেদনাময় হাসিতে !
একটা বড় অঙ্কের টাকা তার হাতে গুজে দিয়ে তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম ।
গাড়ি ছুটে চলল দ্রুত ।
মনে তখন আমার অদ্ভুত ,অসভ্য ,অশ্লীল উন্মাদনা ।
তারপর .. এবং তারও তারপর এভাবেই পুনঃপুনঃ লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া আবার তুলে আনা চলতেই থাকল !
শুধু আমি নই ? অনেকেই !দিনের সভ্য বেশ ছেড়ে অসভ্যতার টানে অনেককেই দেখা যায় কাওকে না কাওকে গাড়িতে করে তুলে নিতে !
কে জানে সেটা ,আমি ,আমরা কিংবা তোমরাও হতে পারো !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।