স্বপ্নহীন পথ চলি। এই েতা.... আজকাল মনে হয় মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারলেই বেশ হতো. ......স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট পেতে হতো না.........
আমার বাবার জন্য আমি কিছুদিন আগে রক্তের আবেদন জানিয়েছিলাম সবার কাছে। এ যাবৎ কালে বাবার 'মুক্তিযোদ্ধা ' পরিচয়টি আমি বা আমরা কোন ভাই-বোন ব্যবহার করিনি। আমার বাবাও এই খেতাব নিয়ে কোন বড়াই অনুভব করতেন না বলেই মনে হয়েছে। কারণ খুবই সহজবোধ্য।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই খেতাব প্রাপ্তদের জীবন এবং সম্মান নিয়ে এতটাই টানা-হেঁচড়া হয়েছে যে অনেক বীর যোদ্ধাই নিজেদের কচছপের মত খোলসে মুখ আড়াল করে রেখেছেন।
আমার বাবার মতো অনেকেই আছেন যারা এখনো মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও 'সার্টিফিকেট নামক বস্তুটি নিয়ে বড় ঝামেলায় আছেন। হাহাহাহাহাহাহা। সরকার বদল তো সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর থাকতে হবে নতুন সরকারের প্রধানের !!! আমাদের শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গাঁটের পয়সা খরচ করে স্বাক্ষর আনতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন . . . তবুও সার্টিফিকেট নামক সোনার হরিণ পাননি কিংবা হয়েছেন হয়রানির শিকার এবং সহজেই তা পেয়েছে অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধারা!!!!
এসব সবাই কম-বেশি আমাদের জানি। এসব কথা বলছি কারণ এসব বিভিন্ন কারণে আমাদের পরিবার (এবং আরো অনেক পরিবার) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সুবিধা নিতে চাই নি।
চাই না। গত ২৩ ডিসেম্বর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এর পর পরই ডাক্তার জানায় তাঁর রক্তের মধ্যে তুমুল জটিলতা দেখা দিয়েছে। শরীরের ভেতর স্বয়ংক্রিয় ভাবে রক্ত উৎপন্ন হচেছ না। রোগের নাম "অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া"। এই জন্য তাঁর শরীর রক্ত শুন্য হয়ে পড়ছে।
বাঁচাতে হলে রক্ত লাগবে। ১-২ ব্যাগ নয় প্রতিদিন ৫ ব্যাগ! এই রক্ত আবার সংরক্ষিত হলে হবে না। একদম টাটকা রক্ত লাগবে।
আমাদের বন্ধু এবং শুভানুদ্ধায়ী যারা আছেন তারা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে এগিয়ে এলেন। কিন্তু মাত্র ১০ জন ও পজিটিভ পেলাম।
২ দিন পর কি হবে? তখনি ফেইসবুক এবং পরে এই ব্লগে জানাই সবাইকে। আমার জীবনে এই প্রথম আমি আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি ব্যবহার করি। গত ২৮ তারিখ হতে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ জন করে রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন যাদের আমি কখনো দেখি নি, চিনি না! আমার দ্বারা তারা কখনোই বিন্দুমাত্র উপকৃত হননি। তারপরও বাবার জন্য তারা আমাকে না জেনে, না চিনে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন! একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার এই আনন্দদায়ক প্রাপ্তি কিভাবে প্রকাশ করবো সেটা বুঝতে পারছি না।
আমি খুব একটা গুছিয়ে কথা বলতে বা লিখতে পারি না।
যা বোঝাতে চাই, তা-ই হয়তো অসমাপ্ত রয়ে যায়। এই ব্লগে গত লেখাটি ছাপার সঙ্গে সঙ্গে 'ওমর ফারুক' নামের একজন ভদ্রলোক ফোন করে বলেছেন তিনি রক্ত দেবেন। একজন ল্যা:কর্নেল জানিয়েছেন তিনি ২ জনকে পাঠাবেন। ফেইসবুকে দেখে জাঃবিঃর ১০ জন এসে ২ দফায় রক্ত দিয়ে গেছেন। আমি/ আমরা কাউকেই চিনি না! কিন্তু তাদের সাথে আমার এবং আমাদের পরিবারের যে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হলো তার বোঝানো যাবে না।
আমি জানি না বাবা সুস্থ হবেন কিনা। কিন্তু যে সব সুস্থ-সাদা মনের আমাদের পাশে দাঁড়ালেন এবং অন্যদের প্রয়োজনের সময়ও পাশে দাঁড়াবেন তাদের প্রতি আমার এবং আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা রইলো। আপনারা ভাল থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।