আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এদের মাথা কিসে পরিপূর্ণ ?



প্রথমেই সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা ! আজকের এই বড়দিনেই একটা বড়সড় ধরা খেয়ে এই পোস্ট লিখতে বসা। থাকি সাভারে। চাটগাঁ ছেড়ে এখানে এসেছি বেশীদিন হয়নি – মোটামুটি মাস দেড়েকের মত হবে। এমনিতে কাজের চাপে নাভিশ্বাস, তায় আবার নতুন জায়গা, মাঝে মাঝে টুকটাক ফাঁক-ফোঁকর পেলেও, তেমন ঘুরে বেড়ানোর সময় ঠিক হয়ে ওঠেনা। আজ বড়দিনের ছুটিতে ভাবলাম, ঢাকার দুটি দ্রষ্টব্য স্থান – আহসান মঞ্জিল আর লালবাগের কেল্লা ঘুরে দেখব।

সহকর্মীদের কাছ থেকে কিভাবে যেতে হবে তার একটা মোটামুটি ধরণা নিয়েছিলাম আগেই। দুটো রুটঃ গুলিস্তান হয়ে, আর ভেড়ী বাঁধ হয়ে। হালকার উপর পাতলা ধরণের হলেও, গুলিস্তানে গমনাগমনের অভিজ্ঞতা ছিল। সুতরাং ঐটাই বেছে নিলাম। ওখান থেকে রিক্সায় প্রথমে আহসান মঞ্জিল।

যেতে যেতে মনে হচ্ছিল, নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ দর্শনীয় স্থাপনাগুলো কিভাবে কতটা লুকিয়ে রাখা যায়, সেটা দেখতে হলে বাংলাদেশে আসা চাই! মাশাল্লা, যে ঘোড়েল পথে রিকশাওয়ালা আমাকে নিয়ে গেল, হিন্দু পুরাণে কথিত “চক্রব্যূহ”-এর চে’ দু’পরত চড়া বই নয়! (অবশ্য অন্য কোন সহজ সোজা পথ আছে কিনা জানিনা, প্রথমবার গেলাম কিনা!) কিন্তু হায়! আহসান মঞ্জিলে গিয়ে তো মন-দিল ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল! পশ্চাদ্দেশের হাড়-গোড়ের ওপর যে অত্যাচার চালিয়ে ইঁহাতক এলাম, তা তো পুরাই ফাও হইল! ঐ মঞ্জিলখানা নাকি “সরকারী ছুটির দিন” বন্ধ থাকে !!! অ্যাঁ! বলে কি! ঐটা কি সরকারি কার্যালয়, যে সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকবে!!! কিছুক্ষণ “কি করি আজ ভেবে না পাই” দশা কাটানোর পর ভাবলাম, যাক, লালবাগ কেল্লায় গিয়ে কল্লা ঠান্ডা করি। মঞ্জিলের সামনে থেকেই রিকশা নিলাম। এরপরের যাত্রাটাকে বলা যায় অনন্ত যাত্রা! ডাক্তারেরা রোগীকে বিভিন্ন রোগে বিভিন্নরকম ব্যায়াম করতে বলেন – মাংসপেশীর ব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম ইত্যাদি। যদি কারও ঘ্রানের ব্যায়াম করার খায়েশ থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় এখানে চলে আসুন। এক সফরেই আপনাকে আতর-গোবর-তামাক-প্রস্রাব-পারফিউম-ট্যানারী-মাছপঁচা-বিরিয়াণী-মবিল পোড়া- জিলিবী – সবগুলোর ঘ্রাণ গুলিয়ে গিলিয়ে ছাড়বে! কনফিউসড হয়ে যাবেন – কোথায় শ্বাস আটকাবেন আর কোথায় বুক ভরে টানবেন।

আর রিক্সাওয়ালারা এখানে নিজেদের রিক্সাকে মনে হয় ষাঁড় বা ঐজাতীয় কিছু ভাবে – নইলে সারা পথে এমন ঢুঁষাঢুঁষি কেন? যা হোক, অবশেষে পৌঁছলাম, কাংখিত লালবাগ কেল্লায়। “কেল্লা ফতে” ভেবে গেটের কাছে গিয়েই আরেকটা গোল্লা খেয়ে আমার কল্লার ভেতর হৈ-হল্লা শুরু হয়ে যায়! লালবাগবাবু-ও ছুটির দিনে বন্ধ! এ কেমন তামাশা! আমার মত বেকুবের সংখ্যা নেহাত কম ছিলনা ওখানে। অনেকেই এসে লালবাগের বন্দী, থুক্কু, বন্ধ-দশা দেখে বড়ই আশাহত হয়েছেন। দ্যাখেন, কত্তো লোক জমেছিল ... অতঃপর ঢুকিতে না পারিয়া উনারা দুধের সাধ ঘোলে মেটাইতে প্রবৃত্ত হন এঁরা সব্বাই লালবাগ কেল্লা ভ্রমণেচ্ছু লোকজন। একবার ভাবুন তো, এঁরা সবাই আজকে টিকিট কেটে কেল্লায় ঢুকতে পেলে বাংলাদেশ সরকারের কত কোটি টাকা লোকসান হত!!! যে কোন পর্যটন-স্পট এর আসল কার্যদিবসই হল সাধারণের ছুটির দিনগুলো।

দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলো কি সাধারন কর্মদিবসে অফিস কামাই করে আহসান মঞ্জিল কিম্বা লালবাগের কেল্লা দেখতে আসবে? এইসব স্থান সরকারী ছুটির দিনে বন্ধ রাখার কোন যৌক্তিকতা আছে কি? তখন মনের দুঃখবোধ থেকেই প্রশ্নটা জেগেছিল – যারা এই স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষন, প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত, তাদের মাথা কিসে পরিপূর্ণ ??? শেষ কথাঃ (ছোট মুখে বড় কথা – ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক) ১। ছুটির দিন, বিশেষত সরকারী ছুটির দিনে এই ধরণের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পর্যটকদের জন্য খোলা রাখা হোক। ২। এইসব স্থানে যাতায়াতের জন্য সহজগম্য পথ সৃষ্টি করা হোক। (এটা অবশ্য খুব জোর দিয়ে বলতে পারছিনা – আমি গিয়েছি রিকশায়, তাও প্রথমবার।

সুতরাং, আদপেই যদি কোন সহজগম্য বিকল্প রাস্তা থেকে থাকে, তাহলে সেটা আমার অজ্ঞতা, এর জন্য আবারও ক্ষমাপ্রার্থী) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.