আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বস্তির জীবন যাপন ও আমরা

জাগরী একটি নির্দলীয় মঞ্চ যেখানে বাংলাদেশের যুবসমাজ দেশের রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে সচেতন,সোচ্চার ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে পারে। www.jagoree.org  

হিম কুয়াশার রাত শীত যেন জাকিয়ে পরছে চারিদিক থেকে পাতা ঝরা গাছের ফাক দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে টুপ টুপ করে শিশির বিন্দুগুলি ল্যাম্পপোস্ট এর গা ঘেসে সার সার দাঁড়িয়ে সব পলিথিনের কুঁড়েঘর নীল, সাদা, কিছু বা শতচ্ছিন্ন কাগজ আর ময়লার ধুসর রঙে রাঙ্গানো সারি দেয়া সব ঘরগুলো দাঁড়িয়ে আছে ইস্টিশনের পাশ ঘেসে সমান্তরাল দুটি লোহার দন্ড ঘরগুলির পাশ ঘেসে চলে গেছে রেললাইনের পাত দুটি পড়ে আছে অলস শীতের রাতে মাঝে মাঝে কু ঝিক ঝিক কান ফাটানো শব্দে ঢাকা পড়ে যায় পলিথিনের ঘর থেকে ভেসে আসা কান্না ধ্বনি। একটি ঘরে ছেড়া পলিথিনের গা চুইয়ে আসা শিশির বিন্দুগুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে ছেড়া কাঁথা একপাশ থেকে আরেকপাশে ছোট বাবুটিকে বুকে ধরে মা ওম দেয়ার চেস্টায় কেঁপে কেঁপে ওঠে শীতের রাতে। একটি ঘরে বুড়ো বুড়ি দুটি একে অপরকে চেপে ধরে শুয়ে আছে আর প্রহর গোনে সূর্য ওঠার একটু ওমের আশায়। একটি ঘরে বাবা হারা ছোট ছোট দুটি বাচ্চার কান্না ধ্বনি ভাসে ক্ষুধায় জ্বালায় অধঃনমিত অস্রুসজল মুখে মা বসে আছে তাদের পাশে আজ ভিক্ষা জুটে নি হায়।

আমি হাটিতেছি রেললাইনের পথ ধরে আর দেখি বস্তির দুপাশের জীবন যাপন কুয়াশা ভেজা শীতের রাতে। রেললাইনের ওপারের ঘরগুলিতে একটু উঁকি মেরে দেখি তো! ওখানে কে কাঁদে? কার শব দেহ পরে আছে অসীম অবহেলায়? খোলা আকাশের নিচে ঘন কুয়াশার মাঝে থুথ্থুরি বুড়িটা মরে গেল আজ, যাহ! কাল ও না একটা চাদর চেয়েছিল ফোঁকলা দাতের করুন হাসি দিয়ে শব্দগুলো গুঞ্জরিয়ে ওঠে আজ যেনো মনে - বাবা বড্ড জার পড়ছে এট্টু দয়া কর, একটা কম্বল দিয়া যাইও মোরে। দাদির শব দেহের পাশে নাতনীর কান্না ধ্বনি ছেলে চিন্তিত মায়ের দাফন নিয়ে – কবরেও যে টাকা লাগে। ঠিক তার পাশের ঘর থেকে অসুস্থ বৌয়ের কাতর ধ্বনি ভেসে আসে পোয়াতি বৌটি যে কোন সময় বাচ্চা বিয়োবে পাথর মুখ করে ভাঙ্গাচোরা চেহারায় পাশে বসে আছে খালা বা ফুফু গরম জল বালতিতে করে আর বাঁশ কঞ্চির ছুড়ি হাতে অবহেলায় বিয়ানো সন্তানের নাড়ি কাটবে বলে। ঘরে ঘরে অভুক্ত আর অর্ধভুক্ত নরনারীর কলকাকলী ভেসে আসে খাদ্য জোটাতে পারে নি আজ যারা কেও কাজ পায় নি বলে, কেও ভিক্ষের অভাবে আর কারো কপাল দোষে।

ওইতো দেখা যায় আরেক ঘরে নব বিবাহিত দম্পতি একে অপরকে আবিস্কার করছে ল্যাম্পোস্টের চুইয়ে আসা আলোর ঝলকে ঠোটে ঠোট রেখে, বুকে মুখ গুজে ওম খুঁজে বেড়ায় আদিম নেশায় একে অপরের মাঝে। প্রহর কাটে একে একে বস্তির শব্দগুলো স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে একটু একটু করে রাতের দ্বিপ্রহরের ট্রেন থামে ইস্টিশনের কলকাকলী থেমে যায় এক সময় সারাদিন ফেরি করে আসা ফেরিওয়ালার দল আশনাই এর নেশায় নরমাংসের দোকান খুজে ফেরে; এরই মাঝে সখিনা, জরিনা সকল পসরা খুলে বসে রাতের বন্য খেলার সঙ্গী হতে একই বস্তির কোনো কোনা ঘরে পেটের ধান্ধায় দেহ বেচে যায় কিংবা ক্ষুধার জ্বালায়। শীতের রাত আমি হাটিতেছি রেললাইনের পথ ধরে আর দেখি বস্তির দুপাশের জীবন যাপন বিচিত্র সব খেলাঘর সারি সারি বসে আছে বস্তির রূপ ধরে ল্যাম্পোস্টের আলো ঝলকে ওঠে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা একটুকরো ভাঙ্গা আয়নার মাঝে, আয়নায় নিজেকে দেখি চমকে উঠি কানটুপিতে ঢাকা কার মুখ দেখি? আপাদমস্তক গরম জ্যাকেট গায় ওটা কি আমি? আর শীতের ঘন কুয়াশায় পড়ে থাকা থুথ্থুরী বুড়ির মৃতদেহ খানি কিংবা ক্ষুদার যন্ত্রনায় কাতর ওই শিশুমুখ গুলি কিংবা ছেঁড়াকাথায় ঢাকা মায়ের বুকে শুয়ে থাকা ওই ছোট্ট বাবুটা গরম জ্যাকেট গায়ে, কানটুপিতে ঢাকা আমি ধ্বিক আমায়, ধ্বিক। আমিও হতে পারতেম ওদেরই একজন কিংবা হয়তো আমি ওদেরই একজন তাদের সমাজ থেকে বিতারিত আজ গরম জ্যাকেট গায়ে, কানটুপিতে ঢাকা আমি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.