আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিক্ষুক যখন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং কিছু কথা



দুই দিন ধরে একটি খবর খুব শোভা পাচ্ছে। খবরটির শিরোনাম 'ভিক্ষুক যখন কাউন্সিলর প্রার্থী'। খবরে বলা হয়েছে, মিরপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে চাঁদ আলী শেখ ওরফে ক্যাটু ফকির নামের এক ভিক্ষুক প্রার্থী হয়েছে। এ ব্যাপারে চাঁদ আলী শেখ ওরফে ক্যাটু নামের ওই ভিক্ষুক জানান, তিনি ৩০ বছর যাবত ভিক্ষা করে আসছেন। বর্তমানে এই জঘন্য ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করে তিনি জনসেবার জন্য ওয়ার্ডবাসীর কাছে এই প্রথম বারের মতো ভোট ভিক্ষা চাচ্ছেন।

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে হঠাৎ নির্বাচন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা আলো খাঁন পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকাকালীন তার ভাতিজা জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বিচার দাবি করলে আলো খাঁন আমাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে এবং আমি বিচারের জন্য যেখানেই গিয়েছি সেখান থেকেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, ওই থেকে আমার পৌর নির্বাচনের সাধ জাগে। ইতিমধ্যে ক্যাটু ফকির নির্বাচনের ব্যয়ের জন্য ২০ হাজার টাকা ছাড়াও ব্যাংকে জামানত বাবদ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে। আমি ওই ভিক্ষুককে প্রথমে সাধুবাদ জানায়। কারণ, নির্যাতনের বিচার পায় নি বলে আজ সে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

যদি পাস করেন তবে তো খুবই ভাল কথা। না করলেও কোন দোষ নেই। কারণ, মানুষ কাউন্সিলর নামেই তাকে সম্বোধন করবে ভিক্ষুক নামে নয়। এ ঘটনা জানার পর মনে পড়ে গেলে আমার গ্রামের এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা। তাঁর নাম ছিল গণি মিয়া।

কিন্তু তাদের বংশের নাম ডাকাত। বলে মানুষ গণু ডাকাত বলে সম্বোধন করতো। পাকিস্থান আমলে ৮ম শ্রেণী পাস করে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয় নি। কিছু আগবাগান আর ছেলেরা কাজ-কাম করে সংসার চালাতো। পায়ের সমস্যা ছিল বলে ইউপি মেম্বারগণ তাকে রিলিপ দিতো।

সে তা গ্রহণ করতো। একদিন শুনলাম সে নাকি আম মার্কা নিয়ে ভোটে দাড়িঁয়েছে। ভোটে ফেল করলো। তারপর থেকে তাঁর নাম হলো গণু মেম্বার। ইউপি মেম্বারগণ আর তাকে রিলিপের গম দিতো না।

কারণ, সে মেম্বার প্রার্থী হয়েছে। ঘটনাটি ছোট করে বললাম এ জন্য যে, আমাদের দেশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা সমাজে অবহেলার শিকার। নির্যাতন সহ্য করতে করতে একসময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তখন নেতৃত্বের চেষ্টা করে। কেউ সফল হয় আবার কেউ সফল হতে পারে না।

জানি না ওই ভিক্ষুক সফল হবে কি না। তবে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে একটি কথা বলছি যে, সে সময় বেশি দুরে নয় যে, মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে রাখা যাবে। বাংলাদেশে আগামী কয়েক দশকের মধ্য দেহজীবী, সমকামী, লিঙ্গ প্রতিবন্ধী (হিজড়া) এবং সাধারণ বঞ্চিত মানুষরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে দেহজীবীরা অনেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়।

কিন্তু তারা লাইসেন্সধারী নয় বলে কেউ বুঝতে পারে না। আশে পাশের মানুষই শুধু বুঝে। কারণ, আমার এলাকায় গত নির্বাচনে এক দেহজীবী সুন্দরী নারী মহিলা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু মুষ্টিমে কিছু বাটপার লোক ছাড়া ভোট দেয় নি। এমনকি আমিও তাকে ভোট দেই নি।

অথচ সে যোগ্য ছিল। কারণ, যেমন দেখতে সুন্দরী তেমনি স্মাট। কিন্তু সব লোকের সাথে দেহব্যবসা বা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো না। পুলিশ প্রশাসন, মড়ল-মাতব্বর এবং প্রভাবশালীদের সাথে কাজ করতো। আমার মনে হচ্ছে ওই ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিবে কম মানুষ।

তবে তাকে কাউন্সিলর হিসেবেই সম্বোধন করবে। এতে তার মর্যাদা বহুগুণে বেড়ে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।