ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথা, ‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না'। বহু বছর পর আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা হাজার হাজার বছর ধরে এটা প্রত্যক্ষ করে আসছি যে, আমাদের দেশে গুণের কদর না থাকা সত্ত্বেও এ দেশে হাজার হাজার গুণী জন্মগ্রহণ করেছেন। এই গুণীদের তালিকা অত্যন্ত বিশাল ও বিস্তৃত। সে তালিকা উপস্থাপন করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
কারণ তা অনেকেরই জানা। তবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সময়-সুযোগমতো গুণীদের গুণাগুণ জাতির সামনে তুলে ধরা। এটা একটা গুরু দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে কোন রাগ-বিরাগ বা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোন গুণীজনের গুণগান করা উচিৎ নয়। এতে করে উক্ত গুণীর আলোকচিত্রটি কোনরূপ সম্পাদনা মানে কাটছাট করা ছাড়াই সমাজের সামনে নিখুঁতভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়।
যে কাজটি করে থাকে দর্পণ। এতে করে ব্যক্তিত্বের আসল চেহারাটা সবার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তবে এই কাজটি করা খুব সহজও নয়। আমরা এখন যে সময়ে এসে পড়েছি, তা পুরোপুরি একটা মোসাহেবি সমাজ। আমি দেশের অনেক গুণীজনকেই কাছ থেকে দেখেছি।
অনেকের সাথেই আছে আমার সুগভীর সম্পর্ক। অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান তাদের একজন। সমাজ-সংসারে অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান একজন অতি সতর্ক মানুষ। তার প্রতিটি পদক্ষেপ জীবনের গতিকে করেছে তরান্বিত। বহু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে তিনি এগিয়েছেন সামনে।
জীবন সাগরের তরঙ্গাঘাতে তিনি টলটলয়মান হয়েছেন তবে কখনো হাল ছাড়েননি।
একজন মানুষ কত বড় লম্বা চওড়া তাতে কারো কিছু এসে যায় না। দুনিয়ায় তার কতখানি প্রভাব প্রতিপত্তি তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ সাধারণ মানুষের নেই। কিন্তু একজন সত্যিকারের গুণী মানুষের সমাদর না করাও একধরনের মানসিক কার্পণ্যতা বলে আমি মনে করি। আমাদের চার পাশে এমন কিছু মানুষ আছে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাদেরকে সমাজের সামনে তুলে ধরা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান তেমনি একজন গুণী ব্যক্তি
মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে অবলোকন করতে বলেছেন। সেই প্রেরণা বুকে নিয়ে তিনি বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। বিদেশে প্রায় ২৩ বছর চাকরি করেছেন। ফলে এই গুণীর অভিজ্ঞতার পাল্লাটা অনেক ওজনের। তাই তাঁর সুলিখিত ও জ্ঞানগর্ভ পুস্তকগুলো পাঠে উপকৃত হবে দেশের মানুষ।
সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় তিনি একজন সুপন্ডিত। লিখেছেন প্রায় সাহিত্যের সব শাখায়। তার কাছ থেকে শিল্প-সাহিত্যে সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয়ে নবীন সাহিত্যানুরাগী লেখকগণ উপকৃত হতে পারেন অনায়াসে।
১৯৩৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর (৩ পৌষ, সোমবার ১৩৪৪) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদ থানার চরনরিনা গ্রামের মাতুলালয়ে মা মোছাম্মৎ আছুদা খাতুনের কোলে জন্ম নিয়েছিলেন আজকের এই কৃতি সন্তান মুহম্মদ মতিউর রহমান। পরিবারের প্রথম ছেলে সন্তান হওয়ার কারণে নানা বাড়িতে শিশু মতিউর রহমান ছিলেন খুবই আদরের।
ছোটবেলা থেকে মতিউর রহমান ছিলেন, ভাবুক, চিন্তাশীল ও সাহসী। স্বাধীনচেতা হিসেবে বেড়ে ওঠার পেছনে তার পরিবারের বিশেষ করে তার পিতার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। লেখকের দাদা মুনশী ওয়াহেদ আলী পন্ডিত একজন শিক্ষক ও সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মুহম্মদ মতিউর রহমান বরাবরই ছিলেন মেধাবী। স্কুলে ভালো রেজাল্টের জন্য স্কুলের শিক্ষকদের প্রশংসা অর্জন করেন।
তার পৈত্রিক নিবাস শাহজাদপুর থানার চর বেলতৈল গ্রামে। পিতার নাম আবু মুহম্মদ গোলাম রববানী, দাদী মোছাম্মৎ রমিছা খাতুন, দাদার পিতা মুনশী আবু হানিফ। দাদা-দাদি, পিতা ও চাচা সকলেই আজীবন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বনেদি মুনশী পরিবারটি এক সময় বিদ্যাচর্চা ও শিক্ষাদানের কাজে সুখ্যাতি অর্জনের ফলে ‘পন্ডিত বাড়ি' হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর নরিনা মধ্য ইংরাজি স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
১৯৫৬ সনে পোতাজিয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, ১৯৫৮ সনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬০ সনে বিএ পাস করেন। অতঃপর ১৯৬২ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্ম জীবনে তিনি ১৯৬২-২০০৯ সন পর্যন্ত যে সব গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তা হচ্ছে, প্রাক্তন অধ্যাপক, উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ- সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা। প্রাক্তন সহকারী সম্পাদক, নিয়মিত বিভাগ, ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামস, ঢাকা। প্রাক্তন অন্যতম সম্পাদক, বাংলা বিশ্বকোষ প্রকল্প, ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামস, ঢাকা।
প্রাক্তন অধ্যাপক সা'দৎ কলেজ করোটিয়া, টাঙ্গাইল। প্রাক্তন সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রাম, ঢাকা। প্রাক্তন সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ, দুবাই চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রাক্তন প্রফেসর ও বাংলা বিভাগের প্রধান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা। ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বিভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠক।
তিনি যে সমস্ত পুরস্কার পেয়েছেন, প্রবাসে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৬ সনে ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল', দুবাই কর্তৃক স্বর্ণপদক (১৯৯৬)। ‘বাংলাদেশ আধ্যাত্মিক কবিতা পরিষদ', ঢাকা প্রদত্ত পদক-২০০৪।
তিনি ছাত্র জীবনে কবি শামসুর রাহমানের বাড়িতেই থেকেছেন। কিন্তু প্রভাবিত হননি শামসুর রাহমানের আদর্শে। বরাবরই ইসলামী আদর্শ আশ্রিত সাহিত্য রচনায় ব্রত থেকেছেন।
সেকাল থেকে একাল এবং চিরকালের জন্য অর্থাৎ সারা জীবনের জন্য তিনি কুরআনকেই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যর মানদন্ড মেনে চলেছেন। তারই প্রতিফলন দেখা যায় তার রচনায়।
সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো সাহিত্যও আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে। সাহিত্যের নানা আঙ্গিক রয়েছে। গল্প উপন্যাস কবিতা প্রবন্ধ নাটক ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি নানা মাধ্যমে অধিকাংশ লেখক তাদের সৃষ্টিকে তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমানও এর ব্যতিক্রম নন। তিনিও সাহিত্যের প্রায় সকল মাধ্যমে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তার সাহিত্যধারা কতটা উচ্চ পর্যায়ের তা সময়ই একদিন বলে দেবে। কবিতা দিয়ে সাহিত্যের সীমানায় পথ চলা শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি একাধারে লিখেছেন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, জীবনী, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণসাহিত্য, স্মৃতিকথা। করেছেন অনুবাদও।
বিচিত্র জীবনের বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতা তার এই সাহিত্য সৃষ্টিতে রসদ যুগিয়েছে। কবি আল মাহমুদ প্রায়ই বলে থাকেন, ‘মিয়া! লিখতে হলে দেখতে হয়। দেশ বিদেশ ঘুরতে হয়। আমি জীবনে যখনই ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি তখনই সবকিছু পিছনে ফেলে চলে গেছি দেশ হতে দেশান্তরে। ' বলা বাহুল্য অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান বিদেশে অবস্থানকালে কবি আল মাহমুদসহ দেশের অনেক নামি-দামি লেখককে নিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল, দুবাই'-এর মাধ্যমে তিনি এই গুণী ব্যক্তিদের সম্বর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরার সাথে সাথে বাংলাদেশী লেখকদেরও তিনি নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশ্বমানের লেখক ও নেতৃবৃন্দের সাথে হাত মিলিয়ে দিয়েছেন তাদের। এই তালিকায় যারা ছিলেন তারা হলেন, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, কবি আল মাহমুদ, কথাশিল্পী অধ্যাপক শাহেদ আলী, নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ, গবেষক আবদুল মান্নান তালিব, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ। আকাশের মতো উদার ও বড় মনের মানুষ না হলে এটা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
পৃথিবীর বহু দেশ তিনি ঘুরেছেন। ভ্রমণ বিলাসী অনেকেই ঘুরেন, এটা আশ্চর্যের কিছু নয়। ব্যতিক্রম মুহম্মদ মতিউর রহমান। তিনি যেখানেই গেছেন সেখানেই শিল্প সাহিত্যের রসদ খুঁজে বেড়িয়েছেন। সেই সাথে ইউরোপ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বড় শহরে অসংখ্য সাহিত্য আসর বসিয়েছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদসহ বড় লেখকদের জীবন ও কর্ম বিদেশী ও প্রবাসীদের সামনে মেলে ধরেছেন অকৃপণভাবে। এই যে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার নিরন্তর প্রচেষ্টা এটাই তাকে অনেক বড় করেছে। কারণ গুণী লোকেরাই গুণের কদর বোঝে।
এ পর্যন্ত প্রায় লেখকের ৩৫টির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ১. সাহিত্য কথা (১৯৭০), ২. ভাষা ও সাহিত্য (১৯৭০), ৩. সমাজ সাহিত্য সংস্কৃতি (১৯৭১), ৪. মহৎ যাদের জীবন কথা (১৯৮৯), ৫. ইবাদতের মূলভিত্তি ও তার তাৎপর্য (১৯৯০), ৬. ফররুখ প্রতিভা (১৯৯১), ৭. বাংলা সাহিত্যের ধারা (১৯৯১), ৮. বাংলা ভাষা ও ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন (১৯৯২), ৯. ইবাদত (১৯৯৩), ১০. মহানবী (স) (১৯৯৪), ১১. ইসলামের দৃষ্টিতে ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি (১৯৯৫), ১২. মহানবীর (স) আদর্শ সমাজ (১৯৯৭), ১৩. ছোটদের গল্প (১৯৯৭), ১৪. ঋৎববফড়স ড়ভ ডৎরঃবৎ (১৯৯৭), ১৫. বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য (২০০২), ১৬. মানবাধিকার ও ইসলাম (২০০২), ১৭. ইসলামে নারীর মর্যাদা (২০০৪), ১৮. রবীন্দ্রনাথ (২০০৪), ১৯. স্মৃতির সৈকতে (২০০৪), ২০. মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ মহানবী (স) (২০০৫), ২১. মাতা-পিতা ও সন্তানের হক (২০০৬), ২২. ফররুখ প্রতিভা (পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৮), ২৩. ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার (২০০৮), ২৪. সংস্কৃতি (২০০৮), ২৫. বাংলাদেশের সাহিত্য (২০০৮) ২৬. সাহিত্যচিন্তা (২০১০), ২৭. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (২০১০), ২৮. হাজার বছরের বাংলা কবিতা (২০১০), ইউরোপ আমেরিকার পথে জনপদে (২০১০)।
লেখকের অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ইরান (১৯৬৯), ইরাক (১৯৬৯) ও আমার সাক্ষ্য (১৯৭১)। সম্পাদনা করেছেন, প্রবাসী কবিকণ্ঠ (১৯৯৩), প্রবাসকণ্ঠ (১৯৯৪), স্বদেশ সংস্কৃতি (সাময়িক পত্রিকা- ১৯৯৮), ফররুখ একাডেমি পত্রিকা (১৯৯৮-), ভাষা সৈনিক সংবর্ধনা স্মারক (২০০০) ইত্যাদি।
এছাড়া বেশ কিছু গ্রন্থ অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সমকালীন বাংলা সাহিত্য, কিশোর গল্প, আরব উপসাগরের তীরে, বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা, মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্য-রত্ন ঃ জীবন ও সাহিত্য, আশির দশকের কবি ও কবিতা, নানা প্রসঙ্গ প্রভৃতি।
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমানের অন্য আরেকটি দিক আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, তা হলো দেশ বিদেশের যেখানেই তিনি সাহিত্য আসরের গন্ধ পেয়েছেন নাগালের মধ্যে থাকলে সেখানে ছুটে গেছেন।
নিয়মিতভাবে তিনি বাংলা সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র, সিএনসি, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, স্বদেশ সংস্কৃতি সংসদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ফররুখ একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সাহিত্য আসরে অংশগ্রহণ করেছেন।
আমরা দেখেছি কবি সাহিত্যিকরা সাধারণত ঈর্ষা পরায়ণ হয়ে থাকে। একজন আরেক জনকে সহ্য করতে পারেন না। অধ্যাপক মতিউর রহমান ছোট বড় সব ধরনের লেখককেই মর্যাদা দিয়ে থাকেন। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী অনেক কবিকে তিনি বিশেষভাবে পুরস্কৃত করেছেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কথাশিল্পী আতা সরকার, কবি ও ছড়াকার সাজজাদ হোসাইন খান, কবি মতিউর রহমান মল্লিক, কবি গোলাম মোহাম্মদ, কবি সোলায়মান আহসান, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি হাসান আলীম, কবি মোশাররফ হোসেন খান, কবি মুকুল চৌধুরি প্রমুখ। তিনি বরাবরের মতো এখনো অধিকাংশ সাহিত্য আসরে উপস্থিত থেকে নবীন লেখকদের লেখা পর্যালোচনা করে তাদেরকে উৎসাহিত করছেন প্রতিনিয়ত।
তিনি একাধারে লেখক, সাহিত্য সংগঠক ও সংস্কৃতি কর্মী। তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানের জনক। আবার কর্মী বা দায়িত্বশীল হিসেবে কাজ করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠানে।
তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে যে সব দায়িত্ব পালন করেন তা হলো ঃ সাধারণ সম্পাদক, ‘পাবনা জেলা সাহিত্য পরিষদ' (১৯৫৮-৬০), সম্পাদনা পরিষদের সেক্রেটারি ‘আমাদের দেশ' মাসিক পত্রিকা, পাবনা (১৯৫৮-৬০), সম্পাদক, ‘ফজলুল হক হল বার্ষিকী', ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১-৬২), প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘পাক সাহিত্য সংঘ' ঢাকা (১৯৬১-১৯৭১), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ‘পাকিস্তান তামদ্দুনিক আন্দোলন' (১৯৯৬), কেন্দ্রীয় শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা, ‘পাকিস্তান শাহীন ফৌজ' (১৯৬৩-৬৭), কেন্দ্রীয় সভাপতি, ‘পাকিস্তান শাহিন ফৌজ' (১৯৬৭-১৯৭১), প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘স্বদেশ সংস্কৃতি সংসদ', ঢাকা (১৯৭৩-১৯৭৭), প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল' দুবাই (১৯৮১-১৯৯৬), সভাপতি, ‘ইসলামিক কালচারাল সেন্টার' দুবাই (১৯৮৩), কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৯৮৩-৯৬), সভাপতি-বাংলাদেশ সাহিত্য সম্মেলন, দুবাই (১৯৯০-১৯৯৬), প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৯৯৩-৯৬), সভাপতি, স্বদেশ সংস্কৃতি সংসদ, ঢাকা (১৯৯৭-২০০২), প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন' ঢাকা (১৯৯৯-), প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শাহজাদপুর ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, সিরাজগঞ্জ, উপদেষ্টা, হিলফুল ফুজুল, সিরাজগঞ্জ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আহম্মদ নগর ইসলামী পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা (১৯৯৯-২০০৬) প্রভৃতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।