আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যে আস্থা রেখে আওয়ামী লীগের এবার অন্তত সভ্য আচরণ করা উচিত



বিজয়ের ঊনচল্লিশ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ রাজনৈতিক আর মিডিয়া নৈরাশ্যের এক বিষাদ-যমুনা। সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে পুঁজি করে ধণুক ব্যবসার মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিদিন। ওয়াশিংটন এবং গোলকের অন্যান্য ক্ষমতা কেন্দ্রের নেতারা তাদের চলমান মিথ্যার বেসাতিতে উইকীলিক্সের সত্য হামলায় হতচকিত। শুধু ঘুম ভাঙ্গেনি বাংলাদেশের টপ প্লেয়ারদের।

এহচ্ছে জেগে জেগে ঘুমানোর অবিমৃষ্য আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা অবিসংবাদিত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা, ৩০ লাখ শহীদ, শরণার্থী কিংবা ধর্ষিতা মায়েরা সবাই ছিলেন বাংলার আমজনতা। কাজেই মুক্তিযুদ্ধকে মনোপোলাইজের যে আওয়ামী আত্মভরিতা তা আউটডেটেড এবং সুইসাইডাল। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ছাড়া বাকি সব বাংলাদেশী বাংলাদেশ পন্থী এই সহজ সত্য আওয়ামী লীগ যত তাড়াতাড়ি বোঝে ততই বাংলাদেশের সভ্যতা যাত্রা দ্রুতগামী হয়।

গত বিএনপি জামাত প্রো-তালিবান শাসনের সময় জাতির জনককে ইতিহাস থেকে মুছে দেবার হীন প্রচেষ্টার সময় আওয়ামী লীগের কোন সাহায্য বা প্রণোদনা ছাড়াই বিবিসি শ্রোতাজরীপে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর পালকটি জিতে নেন। এরপর জাতির জনকের মর্যাদার বিষয়ে আওয়ামী লীগের অতি স্পর্শ কাতরতা হাস্যকর। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা, যত দিন যাবে বাংলাদেশ তার পর্বত প্রতিম কিংবদন্তীর সাক্ষী হতে থাকবে। এখন পর্যন্ত তাঁর ব্যাপারে আমজনতার আক্ষেপ, উনি বাঙ্গালীর অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধটা জিতে দেবার সুযোগ পেলেন না। উনি বাঙ্গালীর মুক্তির প্রতীক এটা গোটা পৃথিবী জানে।

বিটিভি বা আমার দেশ বা নয়া দিগন্ত বিএনপি জামাত আমলে বঙ্গবন্ধুকে আড়াল করার চেষ্টা করলে তাতে বাংলাভাষী গোলকের কিইবা এসে যা, কোটি কোটি বাঙ্গালীর বুকে যে নাম গর্বের অক্ষরে উতকীর্ণ তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য কোন দলীয় ততপরতা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। বরং বাঙ্গালী জাতিকে সভ্য জীবন নিশ্চিত করতে পারলে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর লিগ্যাসীর আরেকজন সফল নেত্রী হিসেবে সুচিহ্নিত হবেন। তাই বাংলাদেশটা আওয়ামী লীগের নয়, আমজনতার এই বাস্তব বোধোদয় এই মুহূর্তে খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে প্রধান সংকট হচ্ছে ক্রেডিট গোজ টু হুম। কাজলরেখা গল্পের কাঁকন দাসীরাই ক্ষমতা কাঠামোতে।

অন্যকে ক্রেডিট দেয়া বা ক্রেডিট শেয়ারের কোন মনোভাব আমাদের সংস্কৃতিতে অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশের সব সাফল্য দেশ রত্ন ও তার আওয়ামীলীগের, বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের সব সাফল্য আপোষহীন নেত্রী ও তার বিএনপি-জামাতের। আর ব্যর্থতার দায় তারা একে অন্যের ঘাড়ে ফেলে ৯১ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটিদিন নষ্ট করেছে প্রতিহিংসায় আর লোভের চর দখলের বাকশিয়াল বনাম ধানশিয়াল ক্যানিবালিজমে। দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র মায়া দয়া থাকলে কেউ কাজ ফেলে কামড়া কামড়িতে সময় নষ্ট করেনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডটি কোন স্থানীয় বিষয় নয়।

কিউবা বা রুশবান্ধব মুজিব দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন পুঁজিবাদের জন্য মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা বিগব্রাদারদের দেশীয় অনুচরদের কয়েকজনকে ফাঁসি দিয়ে জাতির জনক হত্যার বিচার পেয়েছি বলে আত্মতুষ্টি পাচ্ছি। এরপর অন্ধকার গ্রামে যেটা হয়, জাতির জনক হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করছি কোন প্রমাণ ছাড়া। এহচ্ছে কাজ ফেলে ক্যাচালে সময় নষ্টের রেসিপি। জিয়াউর রহমানের দায় যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুনর্বাসন।

সেই সঙ্গে জাতির জনকের ব্যাপারে অনুশীলিত নীরবতা পালন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির এই ঐতিহাসিক সত্য গোপন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও তালিবানপন্থী মনোভাবের কারণেই গত নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা ঐতিহাসিক সত্যকে জয়যুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের সত্যে আস্থা রেখে এবার অন্তত সভ্য আচরণ করা উচিত ছিল। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে আর কোন রাজনৈতিক দল থাকবেনা, সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে দিগম্বর করতে হবে এই জিম্বাবুয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিণতি যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জানা প্রয়োজন। প্রথম আলোর মতিউর রহমান বা নোবেল বিজয়ী ইউনুসের বিরুদ্ধে গ্রাম্য কইয়াদিমু মিডিয়া ক্যাম্পেন চালিয়ে আমরা বুঝতে পারি জিয়া যেমন বঙ্গবন্ধুকে মিডিয়া ক্যু করে মুছে দিতে পারেননি, ইউনুস বা মতিকে মোছা ঐরকম অসম্ভব।

শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বয়স অনেক বেশী,কিন্তু আত্মকেন্দ্রিকতা ও বাস্তব বুদ্ধি শিশুদের মতো। বা বালিতে মুখ লুকানোর চেষ্টায় ব্যর্থ অস্ট্রিচের মতো। যখন যে দল ক্ষমতায় বাংলাদেশের মালিক যেন তারা,বাকি সব চাকরস্য চাকর। এই নির্বোধ দলীয় মনোভাব ঢাকা গ্রামের প্রতিটি পঞ্চায়েতী বৃত্তে। নিজেকে সবচেয়ে বড় ভাবা রোগ মূর্খ বাঙ্গালীর, নকল করে পাশ করা লোকজন নিজের মনোপলি ধরে রাখার জন্য ভন্ড পীরদের মতো আচরণ করবে এ আর নতুন কি।

জাতির জনক হিসেবে শেখ মুজিব সব সমালোচনার উর্ধে। বাংলাদেশের কোন নাগরিকের বঙ্গবন্ধুকে অসম্মানের কোন কারণ নেই। কারণ পতাকা ভূগোল জিতে দিয়েছেন তিনি আর কতো চাই। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সুফল ভোগকারীদের চোরের খনিতে বসে বঙ্গবন্ধু পেরে ওঠেননি লোভীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। যিনি হয়তো পারতেন, সেই তাজুদ্দীনকেও একঘরে করে ছিল কতিপয় মূর্খ হাতা।

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের প্রশাসন ভঙ্গুর হয়। কিন্তু আমজনতার ধৈর্য আদতেই কম। বাঙ্গালী এতো দ্রুত তার নেতার ওপর অনাস্থা এনে ফেলে যে মুজিবের মতো হীরা ফেলে নানারকম কাঁচ তুলে নেয়। বাংলাদেশ প্রশাসনে জিয়া-এরশাদ ছিলেন মন্দের ভালো, আর তাদের মসনদে বসিয়েছে যখন বিগব্রাদাররা তখন জলপাই শাসনের ম্যাজিক দেখতে হবে,দরিদ্র দেশের মানুষের নিয়তি তো ওইরকমি। হাসিনা খালেদার সুকৃতি তারা বাংলাদেশকে জলপাই শাসন থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন।

৯১-৯৬ সময়ে বিএনপি বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে চাঙ্গা করেছে, ৯৬-০১ সময়ে আওয়ামীলীগ কৃষিতে বাম্পার ফলন ফলিয়েছে। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ ফেলে রাজনৈতিক কোন্দলে সময় নষ্টের সংস্কৃতি চালু হয়। আমৃত্যু দেশ চালানোর নির্বোধ আকাশ কুসুম কল্পনার পরিণতি ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাপী জঙ্গীপশু মোতাতাজাকরণ। শেখ হাসিনা মিডিয়ার শক্তি দেখলেন। সারা দেশের মানুষ জেনে গেল বিএনপি-জামাতের ছায়া নৃত্যের খবর।

ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আওয়ামী লীগের গুণী নেতাদের পাশাপাশি কলাগাছদের আমজনতা ভোট দিল দেশ বাঁচাতে। এর পর আওয়ামী লীগের আর বিএনপি-জামাত নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে প্রতিদিন এতো হিংস্র হয়ে ওঠার কারণ ছিল না। ২০০১-০৬ বিএনপির শাসনামলের আওয়ামী সংস্করণ ২০১৩র নির্বাচনে তিরিশটি আসন নিয়ে আসবে,এতো বাংলাদেশ গণতন্ত্রে প্রমাণিত সত্য। ইতিহাসে নাতসী উত্তেজনার শীঘ্রপতন আমরা বার বার দেখেছি। তবুও আমাদের দম্ভের শেষ নেই।

একটা দেশ চালাতে একটা প্রশাসন লাগে,একটা কারখানায় যেমন ম্যানেজার লাগে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আদমজী জুট মিলের মতো। ম্যানেজারেরা ব্যস্ত দেশের মালিকানার লড়াইয়ে,এটি জব্বারের বলী খেলার চেয়েও জনপ্রিয়। কারখানার প্রতিটি চাকা যখন ঘরঘর করছে তখন ক্ষমতাসীন ম্যানেজারদের উচিত নিজের চরকায় তেল দেয়া। খালেদার সম্পদ, ইউনুসের নোবেল,মতিউর রহমানের প্রথম আলো এইসব চরকায় তেল দেয়ার জন্য আমজনতা আছে।

আপনারা বরং নিজের চরকায় তেল দিন। দেখুনতো পতাকাটাকে অর্থবহ করে তোলা যায় কিনা। হাজার বছর ধরে শোষণের দোজখের কড়াই থেকে আমজনতা মুক্তি চায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।