!!
ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ লাজুক। নিজের চাওয়াটা বা ইচ্ছেটা চেচিয়ে বলা তো দুরের কথা ফিসফিস করে বলতেও লজ্জা হত আমার।
প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে আমি ছিলাম আজব ধরনের আজ হয়ত নিশাতের প্রেমে পড়ে তার বাচ্চা-কাচ্চার বাবা হয়ে ঘরসংসার সাজিয়ে ফেলতাম দুদিন পরই আবার মুক্তা বা জেরিনকে নিশাতের আসনে বসিয়ে দিতাম। অথচ এতকিছুর পরও আমার নায়িকারা জানতই না আমার ভালোবাসার কথা!
কারন? ঐ যে লজ্জা!
আমাদের কলেজের বেঞ্চগুলো ছিল অন্যরকম। ছেলে মেয়ে যে যেখানে ইচ্ছা বসতে পারত।
মিতা আমার নজরে পরে গেল প্রথম সপ্তাহতেই। ওকে দেখে মনে হয়েছিল এই মেয়ে আমার না হলে ফাসি বা বিষ যায় একটা হোক না কেন আমার কোনো আপত্তি নেই। মিতার জন্য তখন আমি পাগলপ্রায়। খুব সকালে কলেজে এসে আমি বসে পরতাম তার পিছনের বেঞ্চে। তার চুলের ঘ্রাণে ডুবে আমার পড়া কোথায় হারাত কে জানে।
মাতাল আমি তখনও লাজুক। বলতে পারছি না কিছুই। অবশ্য মেয়েরা একটু বেশীই চালাক হয়। মিতা একদিন সরাসরিই জিজ্ঞেস করে ফেলল, তুমি কি চাও?
আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম, কই কিছু না তো।
একটা দীর্ঘশ্বাষ ফেলে সে বলল, ভুল করো না।
গল্প উপন্যাসে হয়ত কলেজের ফাস্ট বয়ের প্রেমে পড়ে মেয়েরা। কিন্তু বাস্তবে নয়। আমি তখন শুনতে পেলাম মিতা আমাদের এক সিনিয়রের সাথে প্রেম করছে। মরীয়া আমি তখন ভুলটি করলাম।
কতক্ষন চুপ থেকে মিতা বলল, জীবনটা খুব কঠিন।
তুমি ভুল করলেও আমি ভুল করতে পারি না। প্রাইভেট পড়িয়ে দিন যাবে না।
আমি কি খুব অপমানিত হয়েছিলাম? মনে হয় না। কারন এর চেয়েও অনেক বড় অপমান আমাকে সইতে হয়েছে জীবনে। মানুষের মন খুব অদ্ভুত।
কিছু স্মৃতি সহজে ভুলা যায় না। অনেকটা ছোট মাছের কাটার মত। সহজে নড়ে না বরং বারবার তার বিরক্তিকর উপস্থিতি জানান দেয়। এ ঘটনার পর আমি অনেক অন্তর্মুখী হয়ে পরলাম। এর মাঝে আমি বুয়েট থেকে বের হলাম একজন সিভিল ইন্জিনিয়ার হিসাবে।
আমি মেয়ে মানুষ থেকে দুরে থাকি। ড্রিংক করি না কোনও পার্টিতে যায় না। আমার বউ আবার বিপরীত মেরুর। ওর সাথে আমার কিভাবে সম্পর্কটা টিকল তাই আমি বুঝি না। বুয়েট এর ছেলেরা হয় অনেক স্মার্ট।
কিন্তু আমি সেই আগের মতই। আমার দশ বছরের ছেলের ভাষায় "গেয়ো" আর আট বছরের মেয়ের ভাষায় "ক্ষ্যাত"।
পাস করার পর বছর দুয়েক আমি একটি প্রতিষ্টানে কাজ করেছি। তারপর নিজেই একটি ফার্ম খুলে বসি। সাফল্য ধরা দিতে আমার বেশী সময় লাগে নি।
আমি এখন আছি রহিমপুরে। আমার নতুন জুট মিলটার উদ্বোধন করতে। বিকালে সাধারনত আমি চুপচাপ বসে থাকি। এ সময় কেউ আমাকে বিরক্ত করে না। কিন্তু আমার ম্যানেজার রাশেদ সামনে এসে দাড়িয়ে থাকাতে অবাক হলাম আমি।
-কোনো সমস্যা?
-না স্যার... মানে এক ভদ্রলোক কয়েকদিন ধরে এ সময় দাড়িয়ে থাকে। আপনার সাথে দেখা করার জন্য।
-তো?
-স্যার উনি বলল আপনাকে তিনি চিনেন।
কতক্ষন চুপ থেকে বললাম, ঠিক আছে পাঠাও উনাকে।
নিজের চেহারার প্রতি আমার সবসময়ই হীনমন্যতা কাজ করে যদিও তবু বলতে বাধ্য হলাম লোকটি সুপুরুষ বটে!মধ্যবয়সে এসেও অনেক স্মার্ট।
তবে পরিচ্ছদে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
বসতে বলে আমি বললাম, আপনাকে চিনি বলে তো মনে হচ্ছে না।
মৃদ হেসে লোকটি বলল, স্যার আমি মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে আমি বা আমাকে আপনি চিনেন না।
তাহলে এভাবে দেখা করতে আসলেন কেন? আমার কন্ঠে রাগ ফুটে উঠল।
-স্যার আপনি মিতাকে স্মরন করতে পারেন? আপনার সাথে কলেজে পড়ত।
একটু বললে ভুল হবে বেশ চমক খেলাম আমি।
-আপনি....
আমাকে থামিয়ে দিয়ে লোকটি বলল, স্যার আমি মাহফুজ ওর হাসব্যান্ড।
-আচ্ছা! সে কেমন আছে?
-ভাল স্যার।
-আপনি আমাকে স্যার ডাকছেন কেন?
-আসলে স্যার আমি আপনার কাছে সাহায্যপ্রার্থী। আমার একটা চাকরির খুব দরকার।
তাই আপনার কাছে আসা।
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। কতক্ষন চুপ থেকে বললাম, আসলে এই মুহুর্তে আমাদের কোনো লোক দরকার নেই তাছাড়া আপনি মিতার হাসব্যান্ড আপনাকে তো যেখানে সেখানে বসানো যায় না।
-স্যার আমার কিছু একটা হলেই হবে। মিতা খুব আশা নিয়ে আপনার কাছে আমাকে পাঠিয়েছে।
চোখ বন্ধ আমার। ভাবছি আজ কি প্রত্যাখান করব নাকি মহত্ত্ব দেখাব।
-স্যার আমি নাহয় মিতাকে আসতে বলি। দুপুরে তো আপনি রুমে একাই থাকেন। ঐসময়!
আমি চোখ মেলে সরাসরি উনার দিকে তাকালাম।
চোখ নামিয়ে পা দিয়ে মাটি ঘষতে লাগল মাহফুজ সাহেব।
এ ধরনের প্রস্তাব পাওয়াতে আমি অভ্যস্থ কিন্তু নেওয়াতে নয়। কিন্তু আজ কি হল কে জানে। হয়ত কোনো খেলায় জয়ী হওয়ার নেশা চাপল মাথায়।
আমি দৃঢ়স্বরে বললাম, ঠিক আছে ওকে আসতে বলুন।
দুপুরে। একা।
আমার দিকে ঝুকে মাহফুজ সাহেব বলল, জ্বী স্যার। তাহলে আমি এখন উঠি।
চলন্ত মিতার বরকে দেখে কেন জানি আমার মনে হল লোকটি এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়াতে অভ্যস্থ।
আমি সাধারনত ভোরের দিকে ঘুমাতে যাই। আজ সকালেও ঘুম আসছে না আমার। চাপা অস্থিরতা ফুটে উঠছে আমার শরীরে। সারাটা সকাল আমি পায়াচারি করে কাটালাম। খুব চেষ্টা করছি মিতার মুখটা চোখের সামনে ফুটাতে।
পারছি না আমি। ঠিক বারোটায় দরজায় শব্দ হল। আমি জানি মিতাই এসেছে। এ সময় আর কারো আসার কথা নয়।
আমার পা কাপছে।
শরীর ঘামছে। দরজা খুলতে পারছি না আমি। বুঝতে পারছি না আজ আমি কি হব। পাপী নাকি কাপুরুষ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।