I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.
আজ ডে-অফ ছিল। তারপরও মেরিনা স্কুলে গেল। কিছু খাতা কাটতে হবে। বাসায় বসে করা যায়না, কেমন আলস্যতে পেয়ে বসে। এই স্কুলটা বেতন দেয় ভালোই কিন্তু অনেক বেশি খাটুনি।
একেকবার খাতা চেক করার পর সেসব আবার রি-চেকিং এর জন্যে অন্য টিচারের কাছে যায়। আজকাল প্রায়ই ভুলভাল হচ্ছে তার। সেদিন ক্লাস ইনচার্জ ডেকে নিয়ে বললেন আরো সতর্ক হতে। সহকর্মী মুক্তাকেও ডেকেছিলেন কোনও এক কাজে। সেও শুনলো সব।
বেশ অপমান লাগলো। মেরিনাকে নিয়ে অন্যদের কানাঘুষার শেষ নেই; সেটা সে জানে এবং মেনেও নিয়েছে। ফ্যামিলি প্রব্লেম থাকা সত্ত্বেও তার এত স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করাটা হয় তো বা দৃষ্টিকটু ঠেকে কারো কারো কাছে। তাছাড়া সমস্যাপীড়িত মানুষকে সমাজ দূর্বল দেখতে চায়। সেখানে মেরিনা ব্যতিক্রম হওয়াতে তাদের মেনে নিতে না-পারাটাই স্বাভাবিক।
"চা খাবে?" পাশে এসে বসলো শাহিদা। জিওগ্রাফি পড়ায়, নতুন চাকরি নিয়েছে। এখনও স্কুলের পলিটিক্সের খাতায় নাম লেখায়নি।
"কি করে খাব? সকালে তো এককাপ খেয়ে নিয়েছি। " স্কুলে এককাপের বেশি চা খাওয়ার নিয়ম নেই।
"ইস্। এরকম ছোটলোকি কি এমন নামকরা স্কুলে মানায়? আসলে এইসব মিডিয়ার কানে তুলে দেওয়া উচিত। " ঝট করে চারপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো মেরিনা। দেয়ালেরও কান আছে। প্রিন্সিপ্যালের তাঁবেদার কিছু টিচার যদি শুনে ফেলে তবেই হলো!!
"আস্তে।
আস্তে। যেসব বলে লাভ নেই সেসব না-বলাই ভাল। কেউ শুনে ফেললে তোমার আমার দু'জনেরই বারোটা বাজবে। " খাতার দিকে মন দেয় আবার মেরিনা।
"আরে কী হবে শুনলে? ২০০ টাকার জায়গায় নাহয় ১০০ টাকা ইনক্রিমেন্ট দেবে? আমি ওদের বেতনের থোড়াই কেয়ার করি।
" তা অবশ্য ঠিক। শাহিদা চাকরি করে শখের বশে। স্বামী ব্যবসায়ী, বাচ্চাকাচ্চা নেই। সময় কাটানোর জন্যই তার স্কুলে আসা। এই স্কুলের বেতন আদৌ তার জমা পড়লো কিনা সেটাই হয়তো খোঁজ নেয়না।
মেরিনার সেসব নয়। টাকার প্রয়োজন তার আছে। প্রকাশের কাছে মাসিক বরাদ্দের বাইরে চাওয়া যায়না। চাইলে সে দেবে কিনা, তা তার জানা নেই। সম্পর্কটা কেমন যেন রুটিনের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে অনেক বছর ধরে।
ফারিয়া স্কুলে পড়ার পর থেকেই তারা দুজনেই আরেকটা বাচ্চার জন্য তৈরী ছিল, কিন্তু হলোনা। দু'বছর হল ফারিয়া চলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তার পড়ার খরচের সিংহভাগই দেওয়া হয়েছে মেরিনার সঞ্চয় থেকে।
খাতা দেখা শেষ করে উঠে পড়লো সে। শাহিদাকে বিদায় দিয়ে ক্লাস ইনচার্জের ঘরে গেল।
"আপা, আমি আসি। খাতাগুলো কাল একসাথে জমা দিয়ে দেব। " ফোনে কথা বলতে বলতে তাচ্ছিল্যের সাথে হাত নেড়ে সম্মতি জানালেন ইনচার্জ আসমা। কেমন একটা গা-জ্বালা ভাব নিয়ে ধীরপায়ে স্কুল থেকে মেরিনা বেরিয়ে এলো।
রিক্সা করে ফিরে আসার পথে মেরিনা ভাবছিল আহসানকে ফোন দেবে কীনা।
এই ভরদুপূরে ঘরে ফিরে কিছু করার নেই। বাসায় পাঁচজন ছাত্র পড়তে আসে বিকেলে। হাতে দু'ঘন্টার মত সময়, আহসানের সাথে কাটানো যায়। নিজের অজান্তেই হাসি পেয়ে গেল তার। প্রথমদিন মেরিনাকে দেখে কী চমকেই না গিয়েছিল সে।
ছেলের পরীক্ষার রিপোর্ট কার্ড নিতে এসে ক্লাস টিচার-কে দেখে সে এতটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল যে পুরোটা সময় কোনও কথাই বলতে পারেনি। সহকর্মী ইশরাত যখন তার কাছে ক্লাসের কাজ দেখিয়ে যাচ্ছিল তখনও সে অপলক তাকিয়ে ছিল কেবল মেরিনার দিকেই। অস্বস্তি হয়েছিল খুব। এতবছর পরেও আহসানকে দেখে মেরিনার মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল আগের মত। হৃদয়ের উচ্ছ্বাসটা আড়াল করে রাখতে তারও কম কসরত করতে হয়নি।
সেদিন ছুটির পর স্কুল থেকে বেরিয়ে নিজের অজান্তেই এদিক ওদিক তাকিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছিল মেরিনা। তার ধারণাকে ঠিক প্রমাণ করে রাস্তার উল্টোদিকের একটা ফটোকপির দোকান থেকে বেরিয়ে এল আহসান। সেই পুরোনো দিনের মত তার মুখে রাজ্যজয় করা হাসি; মেরিনা ফিরে গেল কলেজে-পড়া দিন গুলোতে। অকারণেই আরক্ত মুখ ঢাকার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল সেদিন।
রিক্সা আটকে আছে ট্রাফিকে।
ফোনে আহসানের নাম্বার ঘুরিয়ে মেরিনা শুনতে লাগলো, ডায়াল টোনের বদলে সেট করে দেওয়া গানের সুর। মনে হলো যেন ইয়ান্নির রেইনমেকার। শুনতে শুনতে লাইন কেটে গেল; ফোন রিসীভ হলোনা ঐ প্রান্ত থেকে। ভালই হয়েছে; কিছুক্ষণ ফোনটার দিকে তাকিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে ভাবলো মেরিনা। হঠাৎ ক্লান্তি এসে ভর করলো তনুমনে।
এমনটা হয় তার প্রায়ই। একমনে পথ চলতে চলতে সহসাই ক্লান্ত লাগে। যেন মনে হয় "আর কত?"
ব্যাগের ভেতর থেকে ফোনটা বেজে উঠলো।
-হ্যালো।
-কেমন আছ মেরি? ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিল, তুমি কল করেছিলে, টের পাইনি।
-কেন, সাইলেন্ট কেন?
-মিটিং এ ছিলাম। ডেস্কে ফিরে এসে চেঞ্জ করতে ভুলে গিয়েছিলাম...। কেমন আছ?
-ভাল। তুমি?
-আছি কোনওরকম।
এরপর আর কোনও কথা খুঁজে পায়না দু'জনে।
এত কথা জমা রয়ে গেছে গত ২০ বছরের অদেখায়, কোনটা ফেলে কোনটা বলতে হবে, আদৌ বলা দরকার আছে কীনা...দুজনেই ভাবতে লাগলো কানে ফোন ধরে রেখে।
(শেষ) (সমাপ্তি) (ইতি)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।