আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হীনমন্যতা নাকি আধুনিক বাঙালিয়ানা !

তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু; তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে; তুমি যেই এসে দাঁড়ালে - কেউ চিনলো না, কেউ দেখলো না; সবাই সবার অচেনা।

কবিতা, গান, নাটক, নৃত্যকলা, ছোটগল্প কিংবা গল্প - সাহিত্যের কোন ক্ষেত্রেই বাঙালি বা বাংলাদেশী; এদের চাষাভূমির পরিমান নেহায়েৎ কম নয়। তবু এক আনন্দদায়ক অস্থিরতায়, মডার্নিজমের ছলে অনুকরনীয়তার স্বাদ পেতে আমরা বোধহয় খুব ভিক্ষুকমনা। একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা যখন এই নেশায় বিভোর থাকে, তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা নিঃস্ব মানুষগুলোর লোলুপ চোখগুলোকে দোষ দিয়ে লাভ কী? অনেক ছলাকলার পর প্রসঙ্গত বক্তব্যে আসি। কুয়েট (খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), আমার শিক্ষাঙ্গন।

বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, ঢাবি, মেডিকেল কলেজ বা শাবিপ্রবি- এরা সকলেই একই কাতারের বিদ্যাপীঠ। এখানকার ছাত্রদের নিশ্চয় জাতির পরবর্তী কর্ণধার হিসেবেই গণ্য করা হয়! কিন্তু অভিভাবকশ্রেণীর কিছু বেবোধসম্পন্ন মানুষের কারণে এরাই হয়তো জাতির নৌকাটিকে মাঝ দরিয়ায় ডুবাবে। আজ টিভিরুমগুলোতে যত হাততালি আর উল্লাসধ্বনি শুনলাম, বাংলাদেশের জাতীয় দল হারলেও তার সমপরিমাণ দুখী মানুষের হাহাকার শুনবো কিনা সন্দেহ! সেখানে শীতার্ত ভুখা মানুষের কষ্টে কাঁদবার পরিমাণ যে আরও নগণ্য হবে, সেটা চোখবুজে আন্দাজে ঢিল মেরে বলা যায়। আর্মি স্টেডিয়ামে কিং খান এসেছে। তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কারোরই সন্দেহ নেই, আমারও না।

এমনকি তার অভিনীত সকল ছবিই আমার দেখা। তবু ব্যক্তিপূজার মতো কোন ব্যক্তিত্ত্ব তার বেলায় খাটে কি না- তা ভাববার বিষয়। আমাদের দেশে উনি আসবেন, জনগণকে নাচাবেন, কষ্টকর দিনগুলোর মাঝে একঝলক আনন্দের সুরা বর্ষণ করবেন- খুবই ভালো কথা। মারহাবা। তাকে দোষারোপ করছি না।

কিন্তু এই মহান কর্ণধারেরা কি একথা চিন্তা করেন, যে দেশে তেল-গ্যাস-কয়লা রক্ষার্থে অনুষ্ঠিত লংমার্চের খবর কোন মিডিয়ায় আনা হয়না, যে দেশের সঠিক ইতিহাস এখনো আমাদের জানাশোনার বাইরে, যে দেশের হতদরিদ্র জীবনগুলোর কোন কোনটি কনসার্ট চলাকালে হয়তো ধরাধাম থেকে বিতাড়িত হয়েছে, যে দেশে জনতার টাকা ব্যয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিনদেশী বেয়ারাপনায় উন্মত্ত হয়ে বহির্বিশ্বে পাড়ি জমায়- সেইই দেশে, দেশীয় গণমাধ্যমে শাহরুখের কনসার্ট সরাসরি সম্প্রচারের মানবিকতা কতটুকু? আজ যদি পল্লীগীতি, লালনগীতি, জীবনমুখী, গণমুখী, গণসঙ্গীত বা মাহমুদুজ্জামান বাবু, সায়ান, জহির রায়হান ... এমনি আরো কিছু মানুষের কোন অনুষ্ঠান হয়- তবে এই কর্ণধারেরা কি তা উপলব্ধি করতে চায়? চায় না, কারণ তারা উপভোগের নেশায় মত্ত! আজই রবীন্দ্রসরোবরে শিমুল মোস্তফা কবিতা আবৃত্তি করে গেলেন। সেখানে কয়জন কর্ণধার ছিলেন? সেই খবর মিডিয়ার কোথায়? সম্প্রচার কোথায়?! লালন, শরৎ, রবীন্দ্র, নজরুল, এমনকি তাহের, ভাসানী, বঙ্গবন্ধুও যদি আজ ফিরে আসেন ভুলে, তাহলে হয়তো তারাও লজ্জায় দ্বিতীয়বার মৃত্যুর স্বাদ পেতে চাইতেন! আমজনতার দোষ কি করে দিই? যেখানে ডাখতার, ইন-জানোয়ারদের এই দশা! দারিদ্র্যের লজ্জায় রেললাইনে মাথা পেতে দেয়া লোকটার দিকে আমরা ফিরেও তাকাই না, অথচ ঠিক তার পাশেই যদি একটাকার আধুলি পড়ে থাকে; আমাদের লোভাতুর চোখ তা তুলে নিতে ভুল করে না! শীত এসেছে, মানুষ নামক কিম্ভূত প্রাণগুলোর কষ্ট বাড়ছে, কেউ মরছে, কেউ লাখটাকায় ভিনদেশী মদ খাচ্ছে- এসবই এখন স্বাভাবিক। এসবই হয় হীনমন্যতা, নতুবা আধুনিক বাঙালিয়ানা! অরণ্যে রোদনে অযাচিত কষ্ট দেয়ার জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি কর্ণধারবৃন্দ ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.