আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দীর্ঘশ্বাস

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

ক্লাস করার এক ফাকেই আড় চোখে জুলিকে দেখে নিল সাদিক। এরকম প্রতি ক্লাস এই বেশ কয়েকবার জুলি কে দেখে। সেটা জুলি না বুঝলেও ক্লাস এর সবাই সেটা জানে খুব ভাল মতই। ক্লাস এ জুলি ভাল মেয়ে হিসেবেই পরিচিত। সবার সাথে কথা তার তেমন হয় না।

খুব কম কথা বলে মেয়েটা। তারপর ও সবাই তাকে পছন্দ করে। আর এ দিকে সাদিক একটু দুষ্টু স্বভাবের হলেও জুলি এর সামনে সে সবসময় ভদ্র হয়েই থাকে। যখন জুলি ক্লাস এ থাকে ততক্ষন ক্লাস এ স্যার কি পড়ায় তা সাদিক এর কান অবধি যায় না। সব সময় তার মন পড়ে থাকে ডান পাশে বসা জুলির দিকে।

এদিকে জুলি এর সম্পর্ক এ তেমন কিছুই জানে না ক্লাস এর কেউ। কারণ জুলি বেশ দেরিতে ভর্তি হয়েছে অন্য সবার চেয়ে। শুধু সবাই জানে যে জুলি এসেছে ঢাকা এর বাহিরে থেকে। আর এ কয়দিন এ জুলি এর সাথে কারো তেমন ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় নি। ক্লাস শেষ করেই কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বাড়ির পথে হাটা দেয় সে।

এটা সবাইকে অবাক করে। সাদিক এর মানে বুঝতে পারে না। বেশ কয়েকদিন সে যেচে কথা বলেছে জুলির সাথে। কিন্তু কথা বলে বুঝেছে যে এই মেয়ে আসলে অন্যরকম। ছেলেদের সাথে বলতে সে তেমন একটা ইচ্ছুক না।

সাদিক কথা না বলার প্রতিজ্ঞা করলেও কি কারণে জানি তার বার বার কথা বলতে ইচ্ছা করে। আর ক্লাস এর সময় সাদিক চায় জুলির সাথে বসতে। কিন্তু এটা কোন মতেই সম্ভব হয় না। এভাবে যখন সেমিস্টার শেষ এর দিকে তখনই একটা সুযোগ পেয়ে গেল সাদিক। স্যার একটা বড় প্রোজেক্ট এর কাজ করতে দিয়েছেন।

আর এটা করতে হবে গ্রুপ করে। সাদিক ইচ্ছা করেই কোন গ্রুপ করে নি বা কোন গ্রুপ এ ঢুকতে চায় নি। কারণ সে চাচ্ছিল জুলি ও যাতে কোথাও না ঢুকে। এ দিকে সবাই যখন গ্রুপ করে ফেলেছে তখন সাদিক খেয়াল করল যে জুলিও কোন গ্রুপ এ ঢুকতে পারে নি। সাদিক মনে মনে বেশ খুশি হল।

উত্তেজনায় সে স্যার এর কাছে যেয়ে বলল যে সে কোন গ্রুপ পায় নি। স্যার যাচাই বাছাই করে দেখলেন যে ক্লাস এর ২ জন বাদে সবার গ্রুপ হয়ে গিয়েছে। সেই ২ জন হল সাদিক আর জুলি। স্যার আর কি করবেন। এই ২ জন কে এক গ্রুপ এ করে দিলেন।

সাদিক এতে খুশি হলেও জুলি তাতে খুশি হয়েছিল কি না সেটা বুঝা যায় নি। জুলির মধে যে জড়তা ভাবটা ছিল তা আসতে গায়েব হতে শুরু করল। তাদের প্রোজেক্ট এর প্রিপারেশন চলতে লাগল দ্রুত গতিতে। এমন কি তারাই ক্লাস এর সবার আগে কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। জুলি এখন সবার সাথেই প্রানবন্ত।

তার এমন পরিবর্তন সবার কাছে অবাক ঠেকল। তবে কারো অজানা ছিল না যে এটা হয়েছে শুধু মাত্র সাদিক কারণেই। এদিকে ক্লাস এর পর মাঝে মাঝে সাদিক ঘন্টার পর ঘন্টা কাম্পাস এ পার করে দিত। কেন করতো এরকম সেটা অজানাই ছিল সবার কাছে। এ সময় জুলিকেও দেখা যেত না আশেপাশে।

ইদানিং জুলি আর সাদিক পাশাপাশি বসে। তাদের মধ্যে কি চলছে কেউ অনুমান করতে পারছে না। এদিকে একদিন ক্লাস এ এসে বন্ধুদের সাদিক জানালো আজকে জুলিকে সে প্রপোজ করবে। এ কথা শুনে সবাই উল্লাস করতে লাগল। সবাই এটা শুনে উৎসাহ দিল সাদিক কে।

সাদিক তার পরিকল্পনা সবাইকে বুঝালো। সবাই খুশি হল তার পরিকল্পনা শুনে। এরই মধ্যে জুলি এসেছে ক্লাস এ। কিন্তু জুলির সাথে একটা ছোট ছেলেও এসেছে। ক্লাস এ এসেই জুলি সবার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে গল্প করতে লাগল।

সবাই যখন জিজ্ঞেস করল ছেলেটা কে তখন জুলির মনে পড়ল যে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় নি। সবার সাথেই জুলি পরিচয় করিয়ে দিল ছেলেটার। ছেলেটা হচ্ছে জুলির সন্তান!! এ কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকল শুধু সাদিক একরকম চিৎকার করে বলল - কি!!!! তখন জুলি বললো আমার বিয়ে হয়েছে আরো ৫ বছর আগে। মাঝে তার পড়াশোনা বন্ধ ছিল বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা এসব এর জন্য।

এখন তাই আবার শুরু করেছে সে। এ ব্যাপারটা কেউ মেনে নিতে পারছিল না কিন্তু তারপরও বাস্তব কে তো মেনে নিতেই হবে। আর তাই জুলির ছেলেটাকে পেয়ে সবাই তাকে আপন করে নিল। আর সাদিক!! হতাশা ভরা চাহনি নিয়ে সে কোনমতে ক্লাস রুম ত্যাগ করল।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।