ঈদের দিন চ্যানেল আইয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘মিরা ও তার দিন রাত্রি’ নাটকটি দেখছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয়ে নাটকটি শেষ হয় রাত ১১টার দিকে। প্রায় ৪ ঘন্টা যাবত চলা এই নাটকের দৈর্ঘ্য বড়জোড় ৪৫ মিনিট। যারা কখনও কোনো একসময় দেশীয় চ্যানেলগুলো ঘুরে এসেছেন তারা এইরকম সময়ের ব্যবহারের সাথে নিশ্চয়ই পরিচিত।
দেশীয় চ্যানেল বিমুখতার কারন হিসেবে আমরা প্রায়ই বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনকে দায়ী করি।
কিন্তু আপনি কখনও বিদেশী চ্যানেলের সাথে দেশীয় চ্যানেলগুলোর শৈল্পিকতা, নিয়মানুবর্তিতা, দক্ষতা তুলনা করে দেখেছেন?
বাংলা কোনো চ্যানেলের ৯টার কর্মসূচি দেখার জন্য আপনি নিশ্চিন্তে ১ ঘন্টা বা দেড় ঘন্টা পর উপস্থিত হতে পারেন। সময়মত কর্মসূচি কিভাবে শুরু করতে হয় তা আমাদের দেশের চ্যানেল কর্তৃপক্ষরা আজ পর্যন্ত শিখতে পারেনি!অতিকষ্টে প্রোগ্রাম যদিও একসময় শুরু হয় কিন্তু এরপর বিজ্ঞাপন দেখানো যেভাবে শুরু হয় তা দেখে দর্শক এই দ্বন্দে পড়বে প্রোগ্রামের মাঝে বিজ্ঞাপন নাকি বিজ্ঞাপনের মাঝে প্রোগ্রাম!২০মিনিট ধৈর্য ধরে অপেক্ষার পর মাত্র ৫ মিনিটের জন্য প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যদি আবারও বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করে এতে অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা যেমন নষ্ট হয় তেমনি অনুষ্ঠান দেখার আনন্দও মাটি হয়ে যায়।
অপরদিকে বিদেশী চ্যানেলে ৯টার কর্মসূচি ঠিক ৯টায়ই শুরু হয়। আধা ঘন্টা প্রোগ্রামে থাকে ১৩ মিনিটের বিরতি। বিদেশী চ্যানেলের এইরকম পরিচ্ছন্ন উপস্থাপন রেখে দর্শক কোন মুর্খতায় দেশী চ্যানেলের অনিয়ন্ত্রিত ও বিশৃঙ্খল কর্মসূচিকে নির্বাচন করবে?
লাক্স চ্যানেল আই সুপারষ্টার এর দ্বিতীয় পর্বের ফাইনালে শীর্ষ ৫ নিয়ে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল।
যেখানে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যকলাকুশলীরা বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন। তার কিছু অংশ তুলে ধরছি। এক প্রতিযোগীকে শাইখ সিরাজ প্রশ্ন করেছিলেন TSP সারের পুর্ণ নাম কি?TSP একটি বিখ্যাত সারের নাম। আমাদের দেশের ছাত্ররা ক্লাস এইটেই এর নাম মুখস্থ করে থাকে। Triple Super Phosphate।
এত সহজ প্রশ্নের উত্তর প্রতিযোগীটি দিতে পারল না। আরেকজনকে অভিনেত্রী কবরী খুব পরিচিত একটি প্রশ্ন করেছিলেন-যদি কোনো দুর্ঘটনায় আপনার স্বামী ও আপনার বন্ধুর চেহারা অদলবদল হয়ে যায় তাহলে আপনি কাকে স্বামী হিসেবে নির্বাচন করবেন?মাথায় সামান্য ঘিলু থাকলে এবং তা একটু নাড়াচাড়া করলেই এই প্রশ্নের উত্তর বের হয়ে আসত। যেহেতু একটা মানুষের সকল স্মৃতি,আবেগ ভালোবাসা মস্তিষ্কে অবস্থান করে সেহেতু স্বামীর মস্তিষ্ক ধারনকারীই হবে তার স্বামী। কিন্তু জবাবে তিন মাসের ট্রেনিংপ্রাপ্ত ভবিষ্যতের সুপারস্টার এই প্রতিযোগী জানালেন তিনি চেহারাকেই নির্বাচন করবেন। কারন চেহারাই মানুষের পরিচয়!কথায় আছে গাধা ঘোড়াকে পিটিয়েও মানুষ করা যায় না।
তিন মাস যাবত ট্রেনিং নেওয়ার পরও এদের বুদ্ধিদীপ্ত(!) জবাব শুনে আমি এই কথা নতুন করে অনুধাবন করলাম। এইসব প্রতিযোগীতা থেকে সুপারস্টার বের হয়ে আসে কিন্তু শিল্পী না!
বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করা,সেই দেশের খাওয়া আচার ব্যবহার নানা তথ্য নিয়ে নির্মিত একটি অনুষ্ঠান দেখাত যেখানে নোভা উপস্থাপনায় ছিল। নোভার ভাঙ্গা ভাঙ্গা দুর্বল ইংরেজী ও অদক্ষ উপস্থাপনা ছিল রীতিমত বিরক্তিকর!যেমন মালয়েশিয়ার এক রেষ্টুরেন্টে স্যুপ এর টেস্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করতে গিয়ে অনেক ইতঃস্তত করে which flavor শুধু এই দুইটি শব্দ মুখ থেকে বের করতে পেরেছিল নোভা!
G-ফ্যাক্টর নামক অনুষ্ঠানে আরেক মডেল নীরব এর উপস্থাপনাও ছিল বাংলাকে ইংরেজীর মত ইংরেজীকে বাংলার মত উচ্চারন ও রসকসহীন মুখোভঙ্গি দিয়ে যা ছিল বড়ই পীড়াদায়ক! এইসব অদক্ষ উপস্থাপকদের উপস্থাপনায় নিযুক্ত করে কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা কতটা নির্বোধ ও দায়িত্বহীন!
যদি বিদেশী চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়াও হয় তবুও নিজেদের এইরকম অপরিপক্ক কর্মসূচি দিয়ে দর্শকশ্রেনীদের আকৃষ্ট করা যাবে বলে কি আপনার মনে হয়?হাজারো অনুষ্ঠান নির্মান হচ্ছে বাড়ছে নাটকের সংখ্যা এগুলো ধারনের জন্য পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চ্যানেলের সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছে না সুন্দর শৈল্পিক সৃষ্টি,বাড়ছে না দর্শকের সংখ্যা। তাই অন্য দেশের সংস্কৃতিকে দোষারপ নয় প্রয়োজন প্রথমে নিজেদের খামখেয়ালী শোধরানো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।