© ২০০৬ - ২০১১ ত্রিভুজ
আস্তিক হিসেবে নাস্তিকদের প্রতি আমি কখনো রাগ-ক্ষোভ বা ঘৃনা অনুভব করি না। একজন মানুষ নাস্তিক হয়ে গেল মানে মানুষ হিসেবে খারাপ হয়ে গেল এধরনের চিন্তাভাবনাও আমার মাঝে নাই বরং নাস্তিকদের অনেক কাজকেই বেশ উদার মনে বোঝার চেষ্টা করি, যে কারণে কেউ নাস্তিকদের গালাগালি করলে বা ভুল বুঝলে খারাপ লাগে। ইসলাম আমাদের নাস্তিক, অমুসলিম ও সেক্যুলারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলে নাই সুতরাং শুধু শুধু নাস্তিক বা অমুসলিমদের আক্রমণ বা তাদের নিয়ে এত মাথা ব্যাথা করার কারণ খুঁজে পাই না। কিন্তু নাস্তিক, অমুসলিম ও সেক্যুলাররা বরাবরই ইসলাম ও মুসলমানদের আক্রমণ করার চেষ্টা করে থাকেন এবং করেও যাচ্ছেন, কেন এটা হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করেছি অনেকবার, এখনো বুঝে ওঠতে পারিনি।
নাস্তিক, সেক্যুলার এবং বিলুপ্তপ্রায় চেতনার মুসলমানদের বেশ কিছু কমন বৈশিষ্ট আছে যার ভেতরে অন্যতম একটি হচ্ছে এরা স্বঘোষিত মানবতাবাদী, মানে তাদের দাবী অনুযায়ী তারা মানবতার জন্য সব কিছু করেন, বলেন।
নিজেদের মানবতাবাদী প্রমাণ করতে এরা বিভিন্ন ধর্মের উপরে আক্রমণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপণ করেন যেটা আসলেই সাধুবাদ পাবার যোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আক্রমণটা যখন ইসলাম ও মুসলমানদের উপরে হয় তখন তারা আক্রমাণকারীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকেন। বাস্তব জীবনে ও ব্লগের এই ভার্চুয়াল পরিবেশে এর অনেক উদাহরণ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি ইসলামী ফাউন্ডেশনে ইসলাম সংস্কৃতির উপরে করা ন্যাক্কার জনক আঘাতের পক্ষে এদের ক্যাম্পেইনটা বেশ চোখে লাগার মত ছিলো।
নাস্তিক, সেক্যুলার, আধাচেতন আস্তিকরা ক্রমাগত যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে "ব্যালে নৃত্য" এমন কি ক্ষতি করলো যার জন্য প্রতিবাদ করা যেতে পারে।
ব্যালে ডান্স জিনিষটা ভাল না খারাপ বা খারাপ হলে কতটুকু খারাপ তা নিয়ে তর্কে যেতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু তারা এটাও জানেন যে ইসলাম ধর্মের সাথে এই বস্তুর কনফ্লিক্ট রয়েছে। মুসলমানরা গরু খায়, গরু জবেহ করে এবং এটা তাদের কাছে অবশ্যই তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোন মুসলমান যদি হিন্দুদের মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গরু জবেহ দেয়ার আয়োজন করে সেটা কতটুকু যুক্তযুক্ত কাজ হবে? গরু জবাই খুব সাধারণ ঘটনা বা 'এ আর এমন কী'- টাইপ বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?
আজকে কোন মুসলমান 'গরু জবাই' কে খুব স্বাভাবিক ঘটনা ও তার অধিকার মনে করে হিন্দুদের মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গরু জবাই করতে গেলে একজন মুসলমান হিসেবে আমি অবশ্যই প্রতিবাদ জানাবো। প্রতিবাদ জানাবেন এই নাস্তিক, সেক্যুলার ও চেতনালুপ্ত মুসলিম সম্প্রদায়ও।
ব্যতিক্রম শুধুমাত্র মুসলমানদের বেলা। মুসলমানদের ধর্মের বিরুদ্ধ কোন কাজ তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে করলে সেটার প্রতিবাদ না জানিয়ে উলটো মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ক্যাম্পেইন করাই সম্ভবত 'মানবতা'। মুসলমানদের আবার অধিকার কিসের, তাদের বেলায় 'মানবতা' টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলতে হয়।
মুসলমানদের জন্য 'মানবতা' টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলার অনেক উদাহরণ আমরা দেখেছি। সেক্যুলার তুরষ্কের কথাই ধরুন, ওখানে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইন করে হেডস্কার্ফ পড়া নিষেধ করা হয়েছে।
জোর করে স্কার্ফ পড়ানো মানবধিকার লঙ্ঘন দাবী করে একদম পড়ার অধিকারই হরণ করা হয়েছে। যদি কাউকে জোর করে স্কার্ফ পড়ানো মানবধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকে তাহলে কেউ স্কার্ফ পড়তে চাইলে বা হেজাব করতে চাইলে তাকে আইন করে বাধা দেয়াটাও কি মানবধিকার লঙ্ঘন নয়? কে জানে... মানবধিকারের সংজ্ঞাটা মনে হয় আরেকবার পড়ে দেখতে হবে। সম্প্রতি পৃথিবীর বহু সেক্যুলার দেশে মুসলমানরা এরকম বহু অধিকার হারিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডে মসজিদের মিনার বানানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর কোন নাস্তিক, সেক্যুলার ও আধাচেতন আস্তিককে সেটার প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। মন্দির বা গীর্জা বানানোর উপরে মুসলিম কোন দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে নিঃসন্দেহে আমরা তাদের মানবতাবোধের নমুনা দেখতে পেতাম।
শুধুমাত্র মুসলমানদের বেলাই নাস্তিক, সেক্যুলার, অমুসলিমদের 'মানবতা', 'অধিকার' আর 'কমনসেন্সের' বুলি অচল হয়ে যাচ্ছে... সেই প্রাচীন আমল থেকেই। অদূর ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে।
বিঃদ্রঃ মুসলমানদের বেলায় অনেকেরই চিন্তা করার ক্ষমতা স্থবির হয়ে যায়, তাই হিন্দুদের উদাহরণ টানলাম, কোন হিন্দু দয়া করে ভুল বুঝবেন না।
--
ইসলাম গ্রুপে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।