আমি নতুন কিছু পড়তে ভালবাসি
যাকাত ফরজ ঃ
কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীল অনুযায়ী এটা প্রমানিত হয় যে, যাকাতকে আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। ইসলামী শরীয়ার সমস্ত উৎস অনুযায়ী যাকাত ফরজ আইন। যেমন কুরআনের সূরা বাকারার ৪৩, ৮৩, ১১০, আন-নিসার ৭৭, আল-হজ্জ এর ৭৮, আন-নূর এর ৫৬, আহযাব এর ৩৩, মুজাদালার ১৩, মুযাম্মিলের ২০ নং আয়াতে আলাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন "নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর"।
যাকাত শুধু আমাদের উপরিই ফরজ করা হয়নি বরং পূর্ববর্তী নবীর উম্মতগনের উপরও যাকাতকে ফরজ করা হয়েছিল। যেমন কুরআনপাকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশের নবীদের কথা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে "আমরা তাদেরকে মানুষের নেতা বানিয়েছি, তারা আমাদের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করে, পথ প্রদর্শন করে।
আমরা অহীর সাহায্যে তাদেরকে ভালো কাজ করার, নামাজ কায়েম করার এবং যাকাত আদায় করার আদেশ করেছি, তারা খাঁটিভাবে আমার ইবাদত করতো-হুকুম পালন করতো। " সূরা আম্বিয়া-৭৩
এছাড়াও সূরা মায়েদার ১২এবং ৫৫নম্বর আয়াতে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
যাকাত ফরজ সম্পর্কে রাসূলুলাহর (সাঃ) হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। "হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ রাসূল (সাঃ) মুয়াজকে (রাঃ) ইয়েমেনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠাবারকালে নিম্নোক্ত নির্দেশ প্রদান করেন- হে মুয়াজ ! তুমি আহলে কিতাবের লোকদের কাছে যাচ্ছো। তাদের প্রথমে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল এই ঘোষনা দেয়ার আহ্বান জানাবে।
এই আহ্বান মেনে নিলে তাদের বলবে- আল্লাহ তাদের উপর দিন-রাতে পাঁচবার সালাত আদায় করা ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয় তাহলে তাদের জানাবে-আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন, যা তোমাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে তোমাদের গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হবে। " (বুখারী-মুসলিম)
অন্যত্র তিনি (সাঃ) বলেছেন "তোমাদের সম্পদের যাকাত পরিশোধ করো"। (তিরমিযি)
উপরে কুরআন ও নিচের হাদীস দু'টি যাকাত অকাট্যভাবে ফরজ হবার কথা প্রমান করে।
যাকাত অস্বিকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষনা ঃ
আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পরে বলেছেন "তারা যদি কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করে খাঁটিভাবে ঈমান আনে এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাইয়ে পরিণত হবে।
" সূরা তাওবা-১১
অর্থাৎ শুধু কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করা এবং ঈমান আনার কথা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়, সে যে কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করেছে এবং প্রকৃতপক্ষে ঈমান এনেছে, তার প্রমানের জন্য যথারীতি নামাজ আদায় করা ও যাকাত দেয়া অপরিহার্য। অতএব তারা যদি তাদের এরূপ বাস্তব কাজ দ্বারা এ কথার প্রমান পেশ করে, তাহলে নিশ্চই তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই, অন্যথায় তাদেরকে ভাই মনে করাতো দূরের কথা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও বন্ধ করা যাবে না।
এতো গেলো কুরআনের কথা। এবার রাসূলের (সাঃ) সাহাবাদের দিকে তাকাই। রাসূলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর কিছু লোক কালেমা এবং নামাজ, রোযা মেনে নিয়ে কেবল যাকাত দিতে অস্বিকার করে।
তাদের বিরুদ্ধে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তিনি ঘোষনা করে দেন "যে ব্যক্তি নামাজ থেকে যাকাতকে বিচ্ছিন্ন করবে, আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। " এর কারণ হলো এই যে "ঈমানদার লোকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং তারা আল্লাহর সম্মুখে মাথা নতকারী হয়ে থাকে। " সূরা মায়েদা-৫৫
যেহেতু ঈমানের অন্যতম শর্তই হচ্ছে যাকাত প্রদান, সেহেতু যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে তাদের ঈমান থাকতে পারে না, তারা অবশ্যই কাফের।
এ সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে- "হযরত আব্দুলাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- লোকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আমি আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, মুহম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল ও সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। " বুখারী ও মুসলিম
এ হাদীস থেকেও যাকাত অস্বিকার করার পরিণতি সু-স্পষ্ট হয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।