আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমৃত্যু শৈশব চাই ১১


১১। চোর সমগ্র লেখার শিরোনাম দেখে আমার চরিত্র সম্পর্কে কোন প্রশ্ন তুলবেন না,প্লিজ। মূলত শৈশবে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি চৌর্যবৃত্তি দর্শন এবং শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আজও সেসব ঘটনা মনে পরলে হাসি চেপে রাখা দায় হয়ে পড়ে। ক্লাস ফোরে পড়ি তখন।

এক রাত্রিবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল,প্রচন্ড টয়লেট চেপেছে। বড়টা না,ছোটটা। মাকে ডাকলাম। মা বললেন,"উঠে লাইট জ্বালাও,আমি উঠতেছি। "লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখি ইলেক্ট্রিসিটি নেই।

হ্যারিকেন ধরানো ছিল,ওইটা নিয়েই দরজা খুলে বের হলাম। ঘর থেকে একটু দূরে গিয়ে মাত্র বসেছি,হঠাত দেখি আমাদের বাড়ির ঢুকার প্রবেশপথে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। মনে মনে আল্লাহ্‌র নাম নিতে নিতে চোখ বুজলাম। ভাবলাম,হয়তো ঘুমের ঘোরে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।

আবার চোখ খুল্লাম। নাহ,তাও দেখি ওই জিনিসটা ওখান থেকে নড়ে নাই। আমি "আম্মু,ভুত..." বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। পরের দিন সকালে উঠে আমার ভূতদর্শনের বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে পেলাম। আমাদের পাশের বাড়িতে চোর বাবাজী সিঁদ দিয়েছেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয়,যে ঘরে সিঁদ দিয়েছেন,ওইটা অই বাড়ির খাবার ঘর। অর্থকড়ি বা স্বর্ণালঙ্কার কিছুই পায় নি চোর বাবাজী। ওই বাড়ির চাচী বিভিন্ন ধরণের আঁচার-চাটনী তৈরি করে রেখেছিলেন অই ঘরে। আমরা গিয়ে দেখি সব কয়টা আচারের বয়াম খালি,চোর মিয়া সারারাত বসে বসে আচার খেয়ে আমার গিনেজ বুকে স্থান করে নিলেন। আমাদের তিন ভাইবোনের একটা ছোট্ট বাগান ছিল।

ফুলের মধ্যে গাঁদা,লাল গোলাপ আর দোপাটিই ছিল উল্লেখযোগ্য। কোত্থেকে একদিন আমাদের এক আত্মীয় একটা কাল গোলাপ গাছের কলম দিয়ে গেলেন,যেটা নাকি বুনলে তিন মাসের মধ্যেই ফুল ধরে। গাছ লাগানো হল,আমাদের তো উৎসাহের অন্ত নেই। ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে আমাদের অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই কয়েকটা কলি ধরল। আমরা বোধ হয় বেহেশতি বাগানের ফুল পেলেও এত আনন্দ পেতাম না।

যাই হোক,২১শে ফেব্রুয়ারি এল। তখন একটা প্রচলন ছিল,নাইন টেনে পড়ুয়া ছাত্ররা বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানাত এবং গ্রাম ঘুরে ঘুরে ফুল সংগ্রহ করে মিনারে পুষ্পার্ঘ প্রদান করত। যথারীতি আমাদের বাড়িতেও এল,আমার বড় আপু বলল,"তোমরা সব ফুল নিয়ে যাও,প্রব্লেম নাই। কিন্তু কাল গোলাপের কলিগুলো নিও না। "কিন্তু ওই পোলাপানগুলা তো নাছরবান্দা,ওরা কাল গোলাপ নিবেই।

শেষ পর্যন্ত আপুরই জয় হল,পোলাপানরা হার মেনে নিয়ে চলে গেল। আমাদের চরম আরাধ্য কাল গোলাপ অক্ষত রইল। ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে উঠে দেখি,আপু মন খারাপ করে বসে আছে। তড়িঘড়ি করে বাগানে গিয়ে দেখি,কাল গোলাপ তো দুরের কথা,ফুল তো দুরের কথা,একটা গাছও অবশিষ্ট নেই। দেশপ্রেমী লুটেরারা আমাদের বাগানের সব ফুলগাছ কোদাল দিয়ে সমূলে উৎপাটন করে নিয়ে গেছে।

একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখলাম,দুই চোর ধরা পড়েছে এবং তাদের একটা চালের উপর তুলে রাখা হয়েছে। কি যে একটা সিন,নিচ থেকে লোকজন খাবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে,যেন বান্দরকে কলা খাওয়াচ্ছে। এক চোরের বাড়ি ছিল পার্শবর্তী একটা গ্রামে,চোরের গার্জিয়ানকে ডেকে আনা হল। উনি খুব অনুনয়-বিনয় করে চোরের হয়ে মাফ চাইলেন। চোরকে চাল থেকে নামানো হল।

এরপর যে দৃশ্যের অবতারণা আমি এ জনমে ভুলব না। চোর তার গার্জিয়ানের সাথে প্রথমে কদমবুসি,তারপর কোলাকোলি করল। তার ভাবখানা এমন ছিল,যে সে বাবরের মত এই মাত্র পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করলেন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।