আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমৃত্যু শৈশব চাই ৫



৫। মোসলমানি মোসলমান পুরুষ হিসেবে জন্মালে বাল্যকালে কয়েকদিনের জন্য খুব একটা কষ্টকর সময় কাটাতে হয়। নিশ্চয় বুঝেছেন আমি কোন সেই দুর্বিষহ মুহূর্তের কথা বলছি। উফ্,এখনো ভাবলে গা শিউরে উঠে। হ্যাঁ ভাই,আপনি ঠিক ধরেছেন।

আমি মোসলমানির কথাই বলছি। গ্রামে কোন হাসপাতাল ছিল না। হাসপাতাল দূরে থাক,কোন এমবিবিএস ডাক্তারই ছিল না। তাই মোসলমানির মত একটা ছোটখাট অপারেশন চালানোর জন্য কিছু পেশাদার লোকের বন্দোবস্ত ছিল। এদেরকে বলা হত হাজাম।

হাজামরা সাধারণত শীতের মৌসুমে আসত। এর কারণ দুইটা। একটা কারণ হল বছরের বাকি সময় হাজামরা অন্য কোন ক্ষেতি কাজে ব্যস্ত থাকে। আর দুই হল শীতের সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারীর দিকে পোলাপানদের স্কুল বন্ধ থাকে। হাজামরা পারিতোষিক নিত খুব অল্প।

এক সের চাল কিংবা নতুন একটা গামছা পেলেই সন্তুষ্ট থাকত। দেখা যেত,এক হাজাম কোন এক পাড়ায় ঢুঁকে ওই পাড়ায় যত নাবালক ছেলে থাকত,সবাইকে সাক্ষাৎ মোসলমান বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত হত। হাজাম আসতেছে এমন খবর ছড়ালেই ভিকটিমরা পালানো শুরু করত। কেউ ধানের ডোলের ভিতর,কেউ গাছে উঠে,কেউ নদীতে ডুব দিয়ে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করত। কোমলমতি পুংশিশুদের মনে এমন ভীতির সঞ্চার ইহজনমে আর কখন হয় কিনা সন্দেহ।

বাবু নামের আমার এক পাড়াত দোস্ত ছিল। ও খুব ভাল দৌড়াতে পারত। ওর বাপ আর চাচারা কোন ভাবেই ওকে পাকড়াও করে হাজামের পিড়িতে বসাতে পারছিল না। অবশেষে উনারা ঝাকি জালের শরণাপন্ন হলেন। ঝাকি জাল ছুঁড়ে বাবুকে বন্দী করা হল।

খৎনা পরবর্তী সময়টা আরও ভয়ঙ্কর। জীবনে প্রথম লুঙ্গি পরার অভিজ্ঞতাটা তখনই হয়। ওটাকে ঠিক লুঙ্গি পরা বলা যায় না,বরং লুঙ্গি ধরা বলা ভাল। লুঙ্গির আল ধরে পা ফাঁক করে হাঁটার যে মর্মান্তিক পদ্ধতি;যে জানে সেই বুঝে। বিশেষত এই ব্যাপারটা নিয়ে যখন নানা-নানি-দাদা-দাদী সম্পর্কীয় আত্মীয়রা রঙ-ঢং করা আরম্ভ করে,তখন মাথাই শুধু একটা চিন্তাই থাকে,"ইশ...কবে যে বড় হবো?" আমৃত্যু শৈশব চাই ১ আমৃত্যু শৈশব চাই ২ আমৃত্যু শৈশব চাই ৩ আমৃত্যু শৈশব চাই ৪


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।