৯। টিউ
আমাদের স্কুলে বছরে দু একবার কেয়ামত লেগে যেত। যখন একেবারেই বাচ্চা ছিলাম,মানে ইনফ্যান্ট কিংবা প্রথমশ্রেণীর ছাত্র ছিলাম তখন বুঝতাম না এই কেয়ামতের কারণ আসলে কি ছিল। কেবল স্কুলে গিয়ে একটা গগনভেদী বিলাপ সিনিয়রদের মুখে শুনতাম,"ওই টিউ আইছে রে,পালা পালা। "টিউ জিনিসটা কি কোন বস্তু নাকি কোন বিদঘুটে প্রাণী সেটা বুঝার সাধ্য ছিল না।
তবে একটা জিনিস বুঝতাম যে টিউ সঙ্গে করে ইনজেকশন বা ওই জাতীয় কিছু একটা নিয়ে আসে এবং তার প্রতি ভীতির সঞ্চার হওয়ার প্রধান কারণ এটাই। আরেকটা জিনিস বুঝতাম এবং মানতাম যে যদি "টিউ আইছে" এ জাতীয় কিছু কর্ণমূলে প্রবেশ করে,ফার্স্ট এন্ড ফোরমোস্ট ডিউটি হল স্কুল থেকে ভাগতে হবে। মোটকথা টিউ আসা মানে স্কুলে রীতিমত ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যাওয়া।
ক্লাস থ্রি ফোরে উঠার পর ভুকাবুলারির কিছুটা উন্নতি সাধন হল। বুঝলাম টিউ জিনিসটা আসলে একটা মানুষ,কোন বস্তু বা জন্তু-জানোয়ার নয়।
বাবাকে জিগ্যেস করে জানলাম,টিউ হল টি.ই. ও.(T.E.O.)মানে থানা শিক্ষা অফিসার(thana education officer)। বছরে দুই একবার স্কুল পরিদর্শনে আসতেন। হয়তোবা স্কুলে কোন একবার ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামে তিনি উপস্থিত ছিলেন,সেই থেকে পোলাপান ধরে নিয়েছে টিউ আসা মানেই সুঁই মারার আয়োজন।
টিউ নিয়ে আরও বেশ কয়েকটা কাহিনীর প্রচলন ছিল। অনেক দিন আগের ঘটনা।
তখন আমার জন্ম হয় নি। মুক্তা নামে আমার এক চাচাত বোন ছিল। একবার এক টিউ ওদের স্কুল পরিদর্শনে আসলেন। আমার ওই চাচাত বোনকে জিগ্যেস করলেন,"তোমার নাম কি?"ও ভয়ে ভয়ে বলল,"মুক্তা। "টিউ তখন ওকে ওর বাবার নাম জিগ্যেস করলেন।
ভয়ের চোটে বেচারা ওর বাবার নাম বেমালুম ভুলে গেল। আমার চাচার নাম মানে ওর বাবার নাম ছিল ইয়াকুব আলি খান। অনেক চেস্টাচরিত্র শেষে মুক্তা আপা জবাব দিলেন,"আমার বাবার নাম ইয়াকুব নবী। "
আরেকটা কাহিনী শুনেছি আমার প্রাইভেট টিউটর হানিফ ভাইয়ের কাছ থেকে। উনাদের সময় নাকি একটা বদমার্কা টিউ আসতেন যিনি ক্লাসে ঢুকে ঢুকে পড়া জিগ্যেস করতেন।
উনারা যখন ফোরে পড়েন,তখনকার ঘটনা। টিউ উনার এক ক্লাসমেটকে (নাম ছিল প্রোবাবলি নাজিমুদ্দিন,উনারা নাইজগা বলে ডাকতেন) ছয়য়ের ঘরের নামতা বলতে বললেন। ছয় ছয় ছত্রিশ পর্যন্ত ঠিক ছিল,ছয় সাততা বেয়াল্লিশ বলতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। ওই নাইজগা ভাই টিউ সাহেবকে দেখে বেয়াল্লিশ শব্দটা বেমালুম ভুলে গেলেন। উনাদের ক্লাস টিচার তখন তাড়া দিলেন,"ক..ক..তাড়াতাড়ি ক।
না পারলে প্যাঁদানি দিমু। "প্যাঁদানির ভয়ে উনি বলে ফেললেন,"ব্যাঙচল্লিশ। "
এই সিরিজের আগের লেখাগুলো...
আমৃত্যু শৈশব চাই ১
আমৃত্যু শৈশব চাই ২
আমৃত্যু শৈশব চাই ৩
আমৃত্যু শৈশব চাই ৪
আমৃত্যু শৈশব চাই ৫
আমৃত্যু শৈশব চাই ৬
আমৃত্যু শৈশব চাই ৭
আমৃত্যু শৈশব চাই ৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।