১০। বঠান স্যার
ক্লাস ফাইভে উঠার পর আমাদের স্কুলের এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পরতাম। স্যার আমাদের অংক পরাতেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি খারাপ ছিলেন না। স্পেশিয়ালি ডাকের অংকগুলো উনি বেশ যত্ন নিয়ে শেখাতেন।
তাছাড়া যারা ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ছিল,তাদের জন্য স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া মোটামুটি বাধ্যতামূলক ছিল। স্যারের নাম ছিল বোরহান উদ্দিন মল্লিক।
স্যারের কিছু গৎবাঁধা বুলি ছিল। যেমন কোন ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা বুঝাতে উনি একটা ছড়া ব্যবহার করতেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল তিনি বেশির ভাগ সময়েই অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই ছড়াটা বলতেন।
কেউ কোন কিছু আন্দাজে বললেই ওই ছড়াটা বলা শুরু করতেন। ছড়াটা ছিল মোটামুটি এরকম,
"আন্দাজে মারলাম ঢিল,
লাগল কলা গাছে,
হাঁটু ভাইঙ্গা রক্ত পড়ে
চোখ গেল রে বাবা। । "
কেউ কিছু ভুল উত্তর করলেই আমরা ধরে নিতাম,স্যার এখন মহাআগ্রহে তার স্বরচিত কিংবা সংগ্রহীত ছড়াখানা আবৃত্তি শুরু করবেন।
স্যারের মাসিক বেতন ছিল নব্বুই টাকা।
আমরা বলতাম,"স্যার,আপনি একশ টাকা করে নেন। নব্বুই টাকা আবার কেমন বেতন?"স্যার বলতেন,"তোরা কি বুঝবি?ঐকিক নিয়ম ঠিক মত করলে ঠিকই বুঝতি। "সারা জীবন কত ঐকিক নিয়ম,কত অপনয়ন-প্রতিস্থাপন করলাম,স্যারের নব্বুই টাকার ঐকিক রহস্য আজও ক্লিয়ার হল না।
স্যার ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিরাট ফ্যান। মাঝে মাঝেই বলতেন,"ষোলই আগস্ট সকালে যখন খবর পাইলাম বঙ্গবন্ধু আর নাই,আমার আড়াই হাত লম্বা তোয়ালে খানা কান্নায় ভিজে গেল।
"আমরা বলতাম,"স্যার,তোয়ালেটা আমাদের দেখান। "স্যার ক্ষেপে যেতেন,"আইজকালকার পোলাপান কোন কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। আরে গাধার দল,তোয়ালার দৈর্ঘ্য কোন বড় ব্যাপার না,শ্রদ্ধাটাই বড়। "
স্যার একদিন আমাদের সবাইকে নামের অর্থ শিখে যেতে বললেন। আমাদের যাদের অর্থপূর্ণ নাম ছিল,তারা সবাই মোটামুটি বলতে পারলাম।
কিন্তু সমস্যা বাঁধল গুটকো কে নিয়ে। গুটকোর আসল নাম ছিল ময়নাল,ও ময়নাল শব্দের মানে জানত। কিন্তু ওর ডাকনাম গুটকো মানে কি জানত না। জানবে কিভাবে?আদর করে এই নাম দিয়েছিল ওর দাদা,যে কিনা অনেকদিন আগেই পটল তুলেছেন। যাই হোক,আমরা আগে থেকেই প্ল্যান করে রাখলাম স্যারকে জিগ্যেস করব গুটকো শব্দের অর্থ কি?আমাদের প্রশ্ন শুনে স্যার খুব হাসলেন।
বললেন,"কিছু কিছু শব্দের মানে হয় না। গুটকো ওইরকম একটা শব্দ। "গুটকো তখন লজ্জায় লাল। তখন আমাদের আরেক সহপাঠী স্যারকে জিগ্যেস করল,"স্যার,বঠান মানে কি?এটার কি কোন অর্থ আছে?নাকি গুটকোর মতই অর্থ ছাড়া?"স্যার হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
উল্লেখ্য যে,আমাদের এলাকায় কিছু কিছু নাম অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিকৃত হয়ে যেত।
বোরহান স্যার,বোরহান স্যার করতে করতে স্যারের নাম ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বঠান স্যার হয়ে গিয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।