মিতা হক,
আপনার শ্রদ্ধেয় জননী আজো জীবিত আছেন কিনা জানি না, থাকিলে আমার খুব জানিতে ইচ্ছা করিতেছে তিনি আপনার এই বাঙালী হইবার সূত্র হালফিল অনুসরণ করিতেছেন কিনা। উনাকে আমার বিনীত সালাম জানাইবেন।
তবে আপনার সূত্রমতে কবি সুফিয়া কামাল এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও আর বাঙালী রহিবার দাবী করিতে পারিবেন না। উনাদের জন্য বড়ই মনঃকস্ট হইতেছে। এই ব্যাপারে সামনে বিশদ আলোকপাত করিবার আশা করিতেছি।
কিন্তু মিস্টি সংগীত ছাড়িয়া হঠাৎ টক ঝালের প্রতি আপনার এহেন আসক্তির কারন বোধগম্য হইতেছে না! আমরা তো জানিতাম যে গানের শিল্পীরা টক হইতে যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বই বজায় রাখিয়া চলেন পাছে গলা দিয়া শুকরের মত ঘোৎ ঘোৎ শব্দ বাহির হইয়া পরে! আপনি কি ইহাকে 'মিথ্' হিসাবে ধরিয়া ভুল প্রমান করিতে চাহিয়াছিলেন? পারিয়াছেন কি?
আপনি হয়ত ভুলিয়া গিয়া থাকিবেন যে, যেই মানুষ গুলি ১৯৭১ এ যুদ্ধ করিয়া এই দেশটি কে পাক হানাদার বাহিনীর হাত হইতে মুক্ত করিয়াছিলো সেই সব সাহসী মানুষদের জননী, ভগিনী, আত্মজা, ভার্যা সকলেই শাড়ি সালোয়ার কামিয পড়িয়া মাথায় কাপড় দিয়া তাঁদের পতি, ভ্রাতা, পিতা ও সন্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া যুদ্ধ করিয়াছিল দেশ কে স্বাধীন দেখিবার নিমিত্তে। ধর্ম আমাদের বাঁধা হইয়া দাড়ায় নাই। পোষাক আমাদের দুরে সরাইয়া রাখে নাই। জাতি হিসাবে তখনো আমরা এক ছিলাম এবং অদ্যাবধি আছি।
তবে আপনাদের দৌরাত্মে তাহা বোধহয় আর হইয়া উঠিল না।
এমনিতেই আমাদের বিভাজনের শেষ নাই তাহার উপর আপনি মাত্রই যে অনাবশ্যক আবর্জনার স্তুপটি সভ্য সমাজে ডাউনলোড করিলেন তাহা ইউটিউব ও ব্লগের মাধ্যমে আপলোডেড হইয়া অন্তর্জালে এক বিশাল অন্তর্জালার সৃস্টি করিয়াছে সমগ্র বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের মনে। ইহার 'রিপ্ল ইফেক্ট' অবশ্যই আপনার কাছে পৌছাইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস।
খুব ছোটবেলায় আমাদের খেলাঘরে বেগম সুফিয়া কামাল আসিয়াছিলেন। ভাল আবৃতির কারনে তিনি আমাকে গাল টিপিয়া আদরও করিয়াছিলেন। তখন আমার আইফোন ছিল না বলিয়া একটি ছবি তুলিয়া রাখিতে পারি নাই বিধায় আপনাকে দেখাইতে পারিলাম না যে কায়েদে আজম কে আব্বা আব্বা ডাকিয়া অস্থির হওয়া স্বাধীনতা পরবর্তী এই বিশিস্ট বাঙালী কবি মাথায় ঘোমটা দিয়া আসিয়াছিলেন।
জাহানারা ইমাম ঘোমটা টানিয়া মুখ মুছিতে মুছিতে জানিতে চাহিয়াছিলেন তাঁর 'ক্যান্সারের সংগে বসবাস' বইটি কেমন লাগিয়াছে? কি উত্তর দিয়াছিলাম তাহা আর আজ মনে পড়ে না তবে এইটুকু মনে পড়ে যে মুগ্ধ হইয়া তাঁহার দিকে তাকাইয়াছিলাম কিছুক্ষণ।
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেতা মাথায় ঘোমটা দিয়া চলাফেরা করেন। আপনার মত ফোঁটা ও দেন না খোটা ও দেন না। তবে তো উনারা কেহই বাঙালী না!
আচ্ছা বেগম রোকেয়া কি বাঙালী আছিলেন? না মনে হয়। ছবি দিলাম একখানা, দেখিয়া কহিবেন।
এইক্ষণেই আপনি হয়ত বলিয়া উঠিবেন যে ইহারা তো সব মুসলমান বাঙালী, আসল বাঙালী না। আমি জানিতাম এমন কিছু ঘটিবে তাই খুঁজিয়া বাহির করিলাম কিছু 'আসল' বাঙালীর ছবি। দেখিয়া চক্ষু জুড়াইবেন।
মিতা হক, আমার মাতা এবং ভগ্নী উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়াছেন বোরকা পড়িয়া। কর্মক্ষেত্রেও সফলতা লাভ করিয়াছেন।
আমার ভগিনী'র হরিহর আত্মা অন্যধর্মীয় সুহৃৎটিও ঘোমটায় নীচে উনার রেশম সদৃশ কেশরাজী লুকাইয়া শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করিয়াছেন।
বাঙ্গালী হইবার সাথে শাড়ী, ঘোমটা, কপালে ফোঁটা, দাড়ি, টুপি'র কি সম্পর্ক আমি বুঝিতে অক্ষম।
আপনার এই হঠকারি বক্তব্যে আপনি শুধু আমার জন্মদাত্রীকে ই আজ অসম্মান করিলেন না আপনি আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ও অপমান করিলেন। আপনি আমার প্রতিবেশী হিন্দু পরিবারটির গালেও চপেটাঘাত করিলেন।
মিতা হক, আপনার বাজার যদি পড়তির দিকে হয় তাহা হইলে বিনা সংকোচে এই সামুতে একটি পোস্ট ঝুলাইবার ব্যবস্থা করিতে পারেন।
সামু'র সদস্যবৃন্দ সম্পদশালী না হইলেও উহাদের বিশাল হৃদয় বিদ্যমান। সাহায্যের অভাব হইবে না। বিকাশ এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা হইতে অর্থ সাহায্য আসিয়া যাইবে। একাউন্ট নাম্বারটি দিলে আমি আমার ছাত্রদের নিকট হইতেও কিছু চাহিয়া পাঠাইতে পারিব।
আপনি একজন গুণী শিল্পী।
নিজের গলার যত্ন আপনার নিজেরই লইতে হইবে। টক্ হইতে দুরে থাকিবেন, অন্যথায় কন্ঠস্বর বদলাইয়া যাইবার ঝুকি থাকিয়াই যাইবে। আসা-যাওয়ার পথের ধারে ই পড়িয়া রহিবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।