অ আ ক খ গ ঙ
এখন আমার সামনেও একটা সাপ ফেনা তুলে চেয়ারে বসে আছে। সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন। আজ আমি এই সাপটার সাক্ষাৎকার নিব!।
তো চলনে দেখি তিনি কী বলেন।
: আছেন কেমন?
: ভালো।
সরি, হ্যান্ডশেক করতে পারলাম না। আমার হাত নেই, পাও নেই। আমি সরীসৃপ তো। আমাদের রক্ত শীতল। পা নেই তো কি হয়েছে, আমরা বুক ঘষটে ঘষটে ঘন্টায় ১৫ কিমি চলতে পারি।
: থাক, দূরেই থাকুন, নয়তো কামড় দিলে আমি শেষ!
: মন মেজাজ খারাপ হলে কামড় দিতেই পারি। তবে আমি কামড় দিলে লাভ নেই, আমার বিষ নেই। কামড় দিলে পিঁপড়ের কামড়ের মত ব্যথা পাবে। একটু রক্ত বের হবে, ব্যস। তবে আমার বড়ভাই কিং কোবরার এক কামড়ে একটা হাতিকে নয়তো ২০ জন মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে।
: ও, আপনারা তাহলে দুই ভাই?
: না, আমার পুরো পৃথিবী ৩০০০ হাজার আত্মীয় আছে। একেবারে পেনসিল সাইজের আছে, আবার ৭ মিটার দৈর্ঘ্যেরও আছে।
: আপনারা কি একসঙ্গে থাকেন?
: নাহ, আমিতো থাকি বাংলাদেশে। আমার সাথে এই দেশে থাকে গোখরা, রাজগোখরা, কালকেউটে, অজগর, সুতানলী, লাউডগা, শঙ্খচূড় এরকম আরও অনেকে। এছাড়াও বাইরের দেশে বিখ্যাত হলো অ্যানাকোন্ডা, র্যাটল স্নেক, ভাইপার।
অ্যানাকোন্ডাকে নিয়ে তো বেশ কয়েকটা সিনেমাও বানানো হয়েছে। অ্যানাকোন্ডা একসঙ্গে আস্ত একটা শুকর খেয়ে ফেলতে পারে।
: আপনি নিজে কী খান?
: আমি খাই ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখি এইসব। তবে আমরা যাই খাই, একেবারে আস্ত গিলেই খাই। চাবাই না।
: আপনি থাকেন কই?
: আমরা বেশিরভাগ সময় পানিতে থাকলেও থাকি কিন্তু ডাঙায়। আমরা নিজেরা বাসা বানাতে পারি না, এক্ষেত্রে আমরা ইঁদুরের বাসা ভাড়া নেই। ওরা বাসা বানিয়ে রেখে দেয়, আমরা সেখানে সপরিবারে থাকি।
: এমনিতে কেমন জায়গায় থাকতে পছন্দ করেন?
: স্যাঁতসেতে, পানির ধারে, ডিম পাড়া যায় এবং খাবার পাওয়া যায় এরকম জায়গায়। তবে আমরা দুটো দেশ খুবই অপছন্দ করি।
একটা হলো নিউজিল্যান্ড, আরেকটা হলো চীন। জেনে অবাক হবে, নিউজিল্যান্ডে কোন সাপ নেই। আর চীনারা সাপ খেতে খুবই পছন্দ করেতো ফলে..।
: আপনারা মানুষকে কামড়ান কেন?
: এমনিতে কিন্তু আমরা বেশ লাজুক। সারাদিন রোদে গা এলিয়ে ঘুমাই নয়তো সাঁতার কাটি।
বরং মানুষরাই আমাদের বিরক্ত করে, আমাদের বসবাসের জায়গা নষ্ট করে। আমাদের জ্বালালেই আমরা ছোবল দেই নয়তো ফনা তুলে ভয় দেখাই। এমনিতে মানুষ আমাদের খুবই প্রিয়। বিশেষ করে সুকুমার রায়। তিনি আমাদের নিয়ে চমৎকার একটা ছড়া লিখেছেন।
: তাই নাকি, কোনটা?
: কেন, বাবুরাম সাপুড়ে ছড়াটা শোননি? আমার ছানারা তো খুবই পছন্দ করে। ইদানিং আবার শুনলাম ছড়াটা নিয়ে একটা গানও বানানো হয়েছে। আর সাপুড়েদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। আমরা তো সাপুড়েদের সঙ্গে খেলা দেখাই। দেখোনা কেমন বীণার সুরে নাচি।
: আপনারা বুঝি গান বাজনা খুব পছন্দ করেন?
: আরে না, আমরা কি কানে শুনি নাকি? আমরা বারবার জিভ বার করি কেন জানো? ওই জিভ দিয়েই আমরা শব্দের কম্পন টের পাই। এতেই আমরা বুঝি শব্দের উৎস কোনটা।
: কিন্তু আপনারা তো কোন জামা কাপড় পরেন না, গায়ে কোন পশমও নেই। লজ্জা করে না?
: নাহ। আর আমরা তো প্রায়ই চামড়া বদলাই।
বদলাই মানে চামড়াটা পুরনো হয়ে গেলে খসে পড়ে, নতুন চামড়া উঠে। তবে লজ্জা লাগে অন্য কারণে।
: কী কারণ?
: এই যে এদেশের রাজাকারগুলো, তোমরা যখন রাজাকারের প্রতীকি ছবি আঁকো, তখন ব্যাটাদের মুখে দাও আমাদের জিভ। এটা খুবই লজ্জাকর এবং অপমানজনক। আমরা রাজাকার ঘৃণা করি।
সমগ্র সর্পজাতির পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
: সাপের নাকি মণি থাকে, কই, আপনার মনি তো দেখছি না?
: এটা এমনি একটা কথার কথা। তবে সাপের কাছ থেকে মূল্যবান যে জিনিসটা পাবে সেটা হলো সাপের বিষ। আমার তো বিষ নেই, তবে যাদের আছে তাদের বিষের ৯০ ভাগই হলো প্রোটিন। এটা দিয়ে অনেক দরকারি ওষুধ বানানো হয়।
: তো চলেন এক কাপ চা খাই!
: না , আমি চা খাই না। তবে দুধ খাই। শুনোনি, দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পোষা। হিহিহি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।