আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যপ্রাচ্যের সাফাই গাইতে এসে ইউরোপের ছিদ্রান্বেষণ....? নাকি ভুল রিপোর্টের বিকৃত তাফসীর?

নাচতে জানি না

মাহিরাহী নামের একজন ব্লগার দেখলাম একটা পোস্ট দিয়েছেন ইউরোপে কর্মস্থলে নারীদের যৌন নির্যাতনের কিছু পরিসংখ্যান তুলে দিয়ে। তার পোস্টটি বিশ্লেষণ করার আগে আসুন রিপোর্টটি একটু ঘেঁটে দেখি: ২০০৪ সালে প্রকাশিত এই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট কর্মস্থলে নারী ও পুরুষের ওপর যৌন নির্যাতন ও অধিকারের সমতা বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরে। সংক্ষেপে বিষয়গুলি হলো, 'যৌন নির্যাতন' বলতে আসলে কি বোঝায়, দেশওয়ারী কি কি আইন আছে, আইনগুলির প্রয়োগে প্রতিটি সদস্য দেশে কি কি ব্যবস্থা আছে, নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করনে এই দেশেগুলির সরকার কি ব্যবস্থা নিতে পারে... ইত্যাদি। রিপোর্টের মূল সুরটিই হলো নারী ও পুরুষ যাতে কর্মস্থলে আত্মসন্মান নিয়ে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকারগুলি কি ভাবে সাহায্য করতে পারে। এবার আসুন কর্মক্ষেত্রে 'যৌন হয়রানি' বলতে আসলে কি বোঝায়: কর্মক্ষেত্রে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বলতে একজন কর্মীর প্রতি অন্য কর্মী বা কর্মকর্তার যৌন ইঙ্গিত, কাজ, শব্দোচ্চারন, দাবি ইত্যাদি বোঝানো হয়।

উদাহরন হিসেবে অনাকাঙ্খিত রসিকতা, মন্তব্য, ভঙ্গি কিংবা ক্রমাগত প্রেমের প্রস্তাব, হাত বা শরীর স্পর্শ করা ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়। এবার দেখুন উক্ত রিপোর্ট থেকে নাকি মাহিরাহি পেয়েছেন কিছু পরিসংখ্যান। প্রথম পরিসংখ্যানটি আসুন দেখি আমরা: অস্ট্রিয়ায় কর্মস্থলে শতকার ৮০ জনের মত মহিলা জীবনে একবার কিংবা একাধিকবার বিভিন্ন মাত্রার যৌন নির্যাতনের শিকার হন। Click This Link তার মতে যেহেতু জীবনে একবার হলেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অস্ট্রিয়ায় মহিলা কর্মীরা, সুতরাং ইসলাম ভালো এবং ইসলাম / বোরখা খারাপ নয়। (অন্ততঃ তার পোস্টের মূল সুর এটাই) তিনি এবং তার তোষনকারী জনতা এই বিষয়টা পুরো ভুলে গেলো, যে ইউরোপে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে এসব বিষয়ে।

সংঘটিত অপরাধ নিয়মতান্ত্রিকভাবে রিপোর্ট হয়, এবং এর সুরাহাও হয়। অর্থ্যাৎ আইন রয়েছে, এর প্রয়োগ ও রয়েছে। তিনি যে মধ্যপ্রাচ্যের হয়ে সাফাই গাইতে এলেন, আসুন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন মোতাবেক একটি তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র ইয়েমেনের অবস্থা দেখি। ইয়েমেন: ১৯৯০ সালের সংবিধান মোতাবেক সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকার কথা, কিন্তু ১৯৯৪ সালেই এর কাটাছেড়া করে 'ডিস্ক্রিমিনেশন' বিষয়ে সম-অধিকার মুছে ফেলে। ফলে নারী এখন শরিয়ার মাধ্যমে পুরুষের অধীনে অসংখ্য অসম আইন দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে।

ইয়েমেনের আইনি ব্যবস্থা এখন শরিয়ার অধীনে যেখানে নারীর সম-অধিকারই নেই। বিশেষত বিয়ে, সম্পত্তি ও সন্তান বিষয়ক আইনগুলি মোটা দাগে নারী-বিদ্বেষী, যেমনটা ইসলাম করে থাকে অন্যান্য শরিয়া ভিত্তিক ইসলামী দেশগুলিতে। বিস্তারিত এখানে: Click This Link উপসংহার: মাহিরাহি এবং সমমনা ইসলামী প্রচারকদের প্রতি বাংলাদেশের সাধারন জনগনের একধরনের প্রচ্ছন্ন বিরক্তি ও ঘৃনা রয়েছে। কারন পরকাল ও সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে এরা (মোল্লাতন্ত্র ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিনিধিরা) মানুষের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে চলে। যেখানে পুরো জাতি আজ ইভ টিজিঙের মতো নারী বিদ্বেষী আচরনের বিরূদ্ধে একতাবদ্ধ, সেখানে এরা ইউরোপের উদাহরন দেখিয়ে বলতে চায় দেখো সেখানেও নির্যাতন আছে।

অথচ তাদের বক্তব্যে যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে, সে বিষয়ে বাকিরা বিভ্রান্ত। ইউরোপে নারী পুরুষের সম অধিকার বিদ্যমান এবং যৌন হয়রানির মতো ক্রিমিনাল একটিভিটি বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু ইসলাম ভিত্তিক রাষ্ট্রে নারীর সে অধিকারই নেই। নারী এখানে দাসী এবং পুরুষের ইচ্ছার অধীন। সুতরাং হয়রানি বিষয়ক পরিসংখ্যানের প্রশ্নই আসে না।

আমাদের বুঝতে হবে, আমরা আসলে কোন ধরনের রাষ্ট্র চাই, ন্যায্য রাষ্ট্র, নাকি কল্পিত ইশ্বর ভিত্তিক অসম অধিকারের রাষ্ট্র।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.