আতাউর রহমান কাবুল
আতাউর রহমান কাবুল
কাঠাল বাগান ঢাল সংলগ্ন ৩০৪/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে হেলে পড়া ও দেবে যাওয়া ৮ তলা ভবনটির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে দুই মাস আগে গিয়েছিলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহফুজ। অবশ্য ভবনটিতে কোন টু-লেট (ভাড়ার দেওয়ার বিজ্ঞাপন) ছিল না। মাস দুয়েক পরে ওঠা যাবে এমন প্রত্যাশায় প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন একটি বিল্ডিং দেখে স্ব-পরিবারে বসবাস করার নিজের বাসনাতেই খোঁজ নিচ্ছিলেন তিনি। নিচতলায় ভবনের দায়িত্বশীলদের সাথে বাড়ী ভাড়া বিষয়ে যখন দরদাম চলছিল- তখন উক্ত ভবনটি ভাড়া না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল তার পরিচিত স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। সে ব্যবসায়ীর সোজা কথা ছিল- ‘এই বিল্ডিংটি ভাড়া নিয়েন না, কারন কিছুদিন পর এমনিতেই এটা ধ্বসে পড়বে।
’ অর্থাৎ এলাকাবাসী জানত ভবনটি ছিল বেশ ত্রুটিযুক্ত এবং ঝুঁকিপুর্ন। আজ (৮ নভেম্বর ২০১০) সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে এমন অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
এলাকার তরুন ব্যবসায়ী তুষার এই প্রতিবেদককে জানালেন, ভবনটি নির্মানের শুরু তারা থেকেই দেখে আসছেন এটি তৈরিতে মালিক পক্ষের যথেষ্ঠ গাফলতি ছিল। নিচে যেখানে পাইলিং করার কথা সেখানে শক্ত বা মজবুত পাইলিং করাপ হয়নি। খুটিগুলি ছিল খুবই হালকা ও সরু।
এর জন্য ব্যবহƒত রড-সিমেন্টও নাকি প্রয়োজন মোতাবেক দেয়া হয়নি। এক পিলার থেকে আরেক পিলারের দুরত্ব ছিল অনেক বেশি।
আলিমুজাজামান নামে স্থানীয় একজন জানালেন, পুরো বিল্ডিংয়ের কাজ ৯০ ভাগ শেষ হবার পরও ফ্ল্যাটগুলো তেমন বিক্রি হচ্ছিল না। এরমধ্যে বাড়ীওয়ালা কিছুদিন পুর্বে হটাৎ বেঁকে যাওয়া ছাদ দেখেন। এরপর সি™দ্ধান্ত মোতাবেক অনেকে দুরত্বের পিলারের মাঝে মাঝে ইট দিয়ে আলাদা ইটের পিলার তুলে সেখানে কোনমতে লোহার বিম সেটে দিয়েছেন ছাদের সাথে।
ভবনটির ওপরের দিকটি ছিল খুবই ঝুকিপুর্ন। যেখানে দুই বা তিন ইউনিটের ফ্ল্যাট হওয়ার কথা সেখানে বেশি ইউনিট ছিল। ধারনা করা হচ্ছে, বেশি লাভের আশায় বেশি ফ্ল্যাটের জন্য বেশি দেয়াল তোলা হয়েছে ভবনের ওপরের দিকে। ভবনের ওপরের দিকে বেশি রুম তৈরি করায় ওপরের অংশ বেশি ভারী হয়ে গেছে। মোটকথা, প্রতিটি ফ্ল্যাটে রুমের পরিমান ছিল বেশি।
তাছাড়া সামনের বেলকুনি অনেক সামনের দিকে থাকলেও তার ওপর শক্ত পিলার ছিল না।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই এলাকায় গত এক দেড় বছরে আরো কয়েকটি বাড়ী দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরপর একই এলাকায় ১৬ তলা পর্যন্ত ভবন উঠছে। তাদের কথা, গত ৫/৬ বছর আগেও এই এলাকাটি ছিল গভীর খাদ। এদিক দিয়ে চলাচলের কোন রাস্তাও ছিলনা।
হটাৎ করেই এই এলাকাটি গত কয়েক বছরে ঘনবসতি এলাকা হিসেবে গড়ে উঠে। আশপাশেও অনেক বিল্ডিং গড়ে ওঠে। কয়েক বছর আগেও জায়গাটি ছিল গভীর পুকুর। সে হিসেবে ঐ এলাকাটি হাতিরপুল পুকুর পাড় বলে এক নামে পরিচিত।
গতকাল এসব বিষয়ে কথা বলতে ভবনের মালিককে পাওয়া যায়নি।
নিচতলায় যে নির্মান শ্রমিকরা থাকতেন তারাও লাপাত্তা। তবে এই ঘটনার পর অনেকেই এই এলাকার বাসাগুলো ছেড়ে দিবেন বলে এই প্রতিবেদককে তারা জানিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।