আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণপিটুনি

মুক্তচিন্তার পথিক

গত শুক্রবার রাজধানীর কদমতলীতে গণপিটুনিতে মৃত্যু ঘটেছে ৫ জনের। অভিযোগ যে তারা ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। অপরাধী হলেও গণপিটুনিতে কারো মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নেয়া যায় না। এতে করে মানুষের চরম অসহিষ্ণুতা এবং অপরাধীর শাস্তির ব্যাপারে বিদ্যমান আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতাই প্রকাশ পায়। কদমতলী থানার পুলিশ কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, ভোররাতে প্রায় ১৫ জনের একটি ডাকাত দল রায়েরবাগ খানকা শরিফ রোড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এ সময় এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা ডাকাত দলকে ধাওয়া করে। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় ‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে’। মাইকে ঘোষণা শুনে এলাকাবাসী চারদিক থেকে ডাকাতদের ঘিরে ফেলে এবং ৭ জনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। নিহত ৫ জনের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং ৪ জনকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, গত দুই মাসে রায়েরবাগ এলাকায় ৬ থেকে ৭টি ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় হাবিবনগর সমাজকল্যাণ সংসদের সদস্যরা নিজ উদ্যোগে ‘ডাকাতি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করে। ওই কমিটি রাতে এলাকায় পাহারা দেয়। তারাই প্রথম শুক্রবার রাতে সন্দেহভাজন এ দলটিকে ডাকাত বলে ধাওয়া করে। পত্রিকায় রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ দলের গ্রেপ্তারকৃত একজন স্বীকার করেছে যে, এ দলটি বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে থাকে।

রায়েরবাগ এলাকাটিতে বাড়িগুলো একটু ফাঁকা থাকায় তারা ডাকাতির জন্য এ এলাকাটি বেছে নেয়। ঐ দিন তারা ২৫ জন সদরঘাট এলাকায় জড়ো হয়ে ৩টি ট্রাকের মালামাল লুটের উদ্দেশ্যে বাসে যাত্রাবাড়ী যায়। সেখানে ব্যর্থ হয়ে রায়েরবাগ এলাকায় ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয়। এ বক্তব্য সত্য হলে, ধরে নেয়া যায় যে রাজধানীর আশপাশের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র সক্রিয় আছে, যারা ট্রাক লুট থেকে পাড়া-মহল্লায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। মোটামুটি নির্ভয়েই তারা যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালায়।

গত মাস দুয়েকে ৬-৭ টি ডাকাতির ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগজনক। এতে করে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থাই ফুটে ওঠে। ঐ এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অতীষ্ঠ হয়েই নিজ উদ্যোগে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। অর্থাৎ নিজেদের নিরাপত্তার বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন। এটা অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

তবে এর অর্থ এই নয় যে তারা আইন হাতে তুলে নিয়ে নিজেরাই শাস্তি বিধান করবেন। যে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই বেআইনি এবং গুরুতর অপরাধ। এ দেশে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে চোর-ছিনতাইকারী সন্দেহে কেউ আটক হলে প্রথমইে সে গণপিটুনির শিকার হয়। নিরপরাধ লোকজনও এ অবস্থার শিকার হন। অনেক সময়ই গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

একটা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলাÑ কী নিষ্ঠুর অমানবিক ব্যাপার। মানুষ কেন এতোটা উন্মত্ত হয়ে ওঠেÑ এটা ভাববার বিষয়। হতে পারে, প্রতিকারহীন অপরাধের শিকার মানুষ যখন কোনো অভিযুক্ত অপরাধীকে সামনে পায় যখন তার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। আবার যখন মানুষ মনে করে আটক অপরাধীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিলে সে সমুচিত সাজা পাবে না কিংবা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বা আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসবে তখন সে নিজেই আইন হাতে নিয়ে সাজা নিশ্চিত করতে প্রবৃত্ত হয়। যদিও এ ধরনের প্রবণতা কোনোভাবেই প্রশ্রয় পাওয়া ঠিক নয়।

এই প্রবণতা দূর করতে অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের শতভাগ আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভুক্তভোগী মানুষ যদি নিশ্চিত হন যে, অপরাধী ধরা পড়লে তার শাস্তি হবেই, তাহলে তিনি যেমন আশ্বস্ত থাকবেন, তেমনি অপরাধীরাও সতর্ক হতে বাধ্য। এভাবেই নির্মূল হতে পারে অপরাধ প্রবণতা, একই সঙ্গে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা। সামনে ঈদ। এ সময় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

তাই এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করার বিকল্প নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.