আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবাদী শিক্ষক মিজানুর রহমান, প্রতিবাদী মা এবং রূপালী রাণীর মৃত্যুর মিছিল আমাদের অভিসম্পাত না দিক !

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

১. 'সাইজ কতো' টাইপ এর মন্তব্য পথে-প্রান্তরে শুনেনি, এমন তরুণী খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে ! সঙ্গে চলে অনুমান, এতো... এতো.. এতো... হঠাৎ করে উড়ে আসে, -'ছুঁতে ইচ্ছা হয়... !' এরকম কোন শব্দ ! তরুণীর হৃদয় ফালি হয় । পায়ের নিচের মাটি ফালি হয়না । হলে সেই মাটিতে সে ডুব দিতো , ফিরতো না আর ! ২. পথে-ঘাটে, বাস যাত্রীর ভিড়ে, দর্জি দোকানে, লম্বা কোন কিউতে , জনারণ্যের মেলাতে, নারীর স্তন, পাছা..এরকম স্পর্শকাতর জায়গা বিকৃত পুরুষ ছুঁয়ে দেয়নি, এরকম পরিবেশ থেকে বেঁচে আসা কোন সৌভাগ্যবতী নারীর কথা জেনে, সৌভাগ্যবান হতে চাই ! ৩. শৈশবে কাছের আত্মীয় (চাচা, খালু, ফুফা, কাজিন) দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীর সংখ্যা নেহাৎ কম না । আমরা তাদের কথা জানতে পাইনা । জনে জনে এসে তারা জানিয়ে যায়না ।

এমনকি নিজের মা-বাবাকেও এই লজ্জার কথা তারা জানাতে পারেনা প্রায় সময় ! জানতে পাবেন, আপনার খুব কাছের (মেয়ে) বন্ধুটিকে আন্তরিকভাবে জিজ্ঞেস করুন ! ৪. প্রাপ্ত বয়স্কা নারী পুলিশের আশ্রয়ে পুলিশ কর্তৃক সম্ভ্রম হারিয়ে, আত্মহনন করে প্রাণে বেঁচে যান ! পাঁচ- সাত বছরের কিশোরী ধর্ষীতা হয়ে প্রাণ হারায় । আবার কোন কিশোরী বখাটের যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথার গ্লানি সইতে না পেরে পুকুরে ঝাপিয়ে ডুবে মরে ! ৫. লুলুপ গৃহশিক্ষক কর্তৃক যেমন ছাত্রী লাঞ্ছিত হয় । কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃকও ছাত্রী লাঞ্ছিত হয় । খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে , খুব বেশী খোঁজার কষ্ট না করেই এরকম শিক্ষকের তালিকা করা যাবে । জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকের কথা নিশ্চয় আমরা বিস্মৃত হইনি ।

বিস্মৃত হলেও , আশ্চর্যের কিছু নেই ! আমাদের গোল্ডফিশ মেমোরি ! ৬. তারপরও একজন শিক্ষক মিজানুর রহমান নিজ ছাত্রীদের বখাটে কর্তৃক যৌন হয়রানীর প্রতিবাদে প্রাণ দিয়ে, আমাদের পথ দেখিয়ে যান । আমাদের বলে যান,- সব শিক্ষক পশু না, কেউ কেউ পশু ! একজন মা প্রতিবাদের বিনিময়ে প্রাণ বিলিয়ে বলে যান, প্রাণের বিনিময়ে হলেও প্রতিবাদী হবার দরকার আছে ! ১৬ বছরের রূপালী রাণী তার বিরুদ্ধে কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদে আত্মহত্যা করে সেই মৃত্যুর মিছিলকে আরো শোকাতুর করে তোলেন । আমাদের তখন প্রার্থনা, এই মৃত্যুর মিছিল আমাদের অভিসম্পাৎ না দিক ! কারণ, আমরা প্রতিবাদী না, আমরা প্রতিবাদ করতে জানিনা ! ৭. সব কিছু সয়ে নেবার পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ ! আমাদের চোখের সামনে কোন দুস্কৃতি মানুষের পেট এপোড়-ওপোড় করে দিলে, সেই দৃশ্য হয়তো আমাদের তাড়িত করে, তবে খুব কম সময় । এসিডে ঝলসানো, অন্য কারো বোনের মুখ দেখে আমাদের হয়তো ভাবনা হয়, এই ঝলসানো মুখ আমার বোনেরও হতে পারতো ! কিন্তু পরক্ষণেই, আমাদের ভীরুতার জয় হয় । আমরা আশান্বিত হবার ভান করি, - 'নাহ্, আমার বোনের, আমার কন্যার বেলাতে এরকম ঘটবে না ! আদতে এভাবেই আমরা আমাদের রক্ত প্রবাহকে বরফ শীতলতার সঙ্গে বিনিময় করে নিয়েছি ! এই পৃথিবী কেবল পুরুষের না, বরং নারীরও, অর্থাৎ মানুষের পৃথিবী ।

মানুষের পৃথিবী থেকে বিকৃত পুরুষের জন্য নারী অবাঞ্চিত হতে পারেনা । পুরুষের বিকৃত মানসিকতার বিপরীতে পুরুষ এবং নারীর সংঘবদ্ধ প্রতিবাদই, সময় এবং সমাজকে বদলে দিতে পারে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.