প্রতিদিন যা পড়ি পত্রিকার পাতায়, ভাললাগা-মণ্দলাগা সবই শেয়ার করি সবার সাথে।
ওয়াকিল আহমেদ হিরন,সমকাল
বিচার বিভাগ পৃথককরণের তিন বছরপূর্তি আজ। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনকারী বিচারকদের সমস্যার সমাধান গত তিন বছরেও হয়নি। তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। চাকরিতে পদোন্নতি, বয়সসীমা বৃদ্ধি, বেতন বৈষম্য দূর করা, নিরাপত্তাসহ নানা অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় সারাদেশের বিচারকরা অসন্তোষ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।
সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিচারকরা। তাদের বক্তব্য, বিচারকদের সমস্যা সমাধানে
এগিয়ে আসেনি কোনো সরকার। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও এ পর্যন্ত বিচারকদের সমস্যার সমাধান হয়নি। এর ফলে বিচারকদের মধ্যে অস্থিরতাও বিরাজ করছে। আর এসব কারণে বিচারকাজের গতিও শ্লথ হয়ে এসেছে।
এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সেখানে তারা বিচারকদের কাছ থেকে নিম্ন আদালতের সমস্যার কথা শোনেন। বিচারকরা আদালত কক্ষ (এজলাস), যানবাহন ও বিচারক স্বল্পতার সমস্যা আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
জানা যায়, নিম্ন আদালতে এজলাস সমস্যা দীর্ঘদিনের।
এক এজলাস ভাগাভাগি করে একাধিক বিচারককে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার জজ আদালতেই বেশ কয়েকটি এজলাস রয়েছে যেখানে দু'জন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এখানে অনেক বিচারকের খাসকামরা নেই। স্টোররুম বা অন্য কোনো কক্ষ খাসকামরা হিসেবে ব্যবহার করছেন বিচারকরা। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ১১ জন বিচারক রয়েছেন।
কিন্তু এজলাস রয়েছে মাত্র ৫টি। সিএমএম আদালতে এজলাস রয়েছে ১৮টি; কিন্তু বিচারক রয়েছেন ৩১ জন। বর্তমানে জজ আদালতগুলোতে পাঁচ শ্রেণীর বিচারক রয়েছেন। জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী দায়রা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজ। অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে সহকারী জজরা মুখ্য বিচারিক হাকিম, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ও বিচারিক হাকিমের দায়িত্ব পালন করছেন।
সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু সারাদেশের নিম্ন আদালতে বিচারকদের তুলনায় মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। দিন দিন আদালতগুলোতে মামলাজট বাড়ছে। বিচার বিভাগ পৃথককরণের তিন বছর পরও এসব সমস্যার সমাধান হয়নি।
পদোন্নতি : বিচারকদের অভিযোগ, যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিবিশেষের মর্জিমাফিক পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।
সিনিয়র বিচারকদের ডিঙিয়ে (সুপারসিট) জুনিয়র বিচারকদেরও পদোন্নতি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এমনও নজির রয়েছে, দু'জন হাকিম স্বামী-স্ত্রী হয়ে একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন চাকরি করে যাচ্ছেন। আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজের লোক না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ে বেশ কিছু পদ শূন্য আছে। অথচ পদোন্নতি দিয়ে এ খালি পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে না।
বিচারকদের অভিযোগ, এভাবে পদোন্নতি আটকে রাখলে জেলা জজ হওয়ার আগেই অনেক বিচারককে অবসরে যেতে হবে।
বেতন কাঠামো : ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও এখনও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়া হয়নি বিচারকদের। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল না দেওয়ায় বিচারকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বেশ কয়েকজন বিচারক বলেন, বিচারকদের বর্তমান বেতন নিয়ে সৎভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন গঠন করা হয়।
এ পে-কমিশনকে সহায়তা করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কারিগরি সহায়তা কমিটিও গঠন করা হয়। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
চাকরির বয়স : বিচারকদের দাবিগুলোর মধ্যে বয়স বাড়ানোর দাবিটি অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের চাকরির বয়স বাড়ানো হলেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।
বদলির নীতিমালা : বদলির ক্ষেত্রে নীতিমালা থাকলেও অনেক সময়ই তা অনুসরণ করা হয় না। প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে, এক স্থানে তিন বছর কাজ করলে বদলি করা হবে। তাছাড়া পদোন্নতি পেলে, কোনো অভিযোগ থাকলে বা বিচারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বদলি করার নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচারকদের বাসস্থানের সুবিধা এবং জ্যেষ্ঠ বিচারকদের পরিবারের দিকে খেয়াল রেখে বদলি করা হতো। বর্তমানে এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে বিচারকরা অভিযোগ করেন।
নিরাপত্তাহীনতা : ঝালকাঠিতে জঙ্গি বোমায় দুই বিচারক নিহত হওয়ার পর বিচারকরা নিরাপত্তার জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে বেশ ক'টি দাবি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু সব দাবি এখনও পূরণ হয়নি। জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকরা গানম্যান পেলেও অতিরিক্ত জেলা জজ ও অন্য বিচারকরা এখনও পাননি।
যানবাহন : জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক ছাড়া নিম্ন আদালতের অন্য বিচারকদের যানবাহনের ব্যবস্থা করতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সব বিচারকের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় জানিয়ে দেওয়ায় বিচারকরা ক্ষুব্ধ।
অনেক আদালতের বিচারকরা ভাড়া করা গাড়িতে যাতায়াত করেন।
বাসস্থান : বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের বাসস্থান নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজও বিচারকদের বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিটি জেলায় কর্মরত সব বিচারককে একই স্থানে বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি ছিল বিচারকদের। কিন্তু এখনও সে দাবি পূরণ হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।