ঢাকা : বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির পেছনে বিচারকদের দায় আছে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, জজ সাহেবরা রায় ঘোষণার পর মাস দেরি করেছেন পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে। জামায়াতের রায় তো সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের দেয়া রায়ের মূল স্পিরিট কেউ গ্রহণ করেনি। এখন তাদের উচিত স্বপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমটো) সঙ্কট উত্তরণের পথ বলে দেয়া।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পর তাদের নিষিদ্ধ করতে আইন পাস করতে গড়িমসি করছে সরকার।
আর তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন করে ফেললেন। নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ না হলে এখন তো তাদের বলা উচিত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে আইন নেই। ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের নিজ কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ফেলানী হত্যাকাণ্ডের অন্যায় বিচারের প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনের রাস্তার নাম ‘কিশোরী ফেলানী সড়ক’ করার জোর দাবি জানান। এ সময় তিনি কথা বলেন আগামী নির্বাচনের ব্যবস্থা, দেশের সার্বিক রাজনীতি ও উন্নয়নের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে। বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কথা বলা হচ্ছে।
জজ সাহেবরা তো নির্বাচিত না। কিন্তু তাদের ওপর মানুষের বিশ্বাস আছে। আমেরিকাতে জজ সাহেবদেরকেও সংসদের মাধ্যমে পাস করিয়ে নিতে হয়। সেখানে জজ হওয়ার আগে তাদের বায়োডাটা সংসদে পেশ করা হয়। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, পার্লামেন্টের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে পারলে নির্দলীয় ব্যক্তিরাও তো সেখান থেকে নির্বাচিত হতে পারেন।
আজকে ৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। তারা ভোট কিনতে পেরেছেন বলে সম্মানিত হয়ে গেলেন। আর অন্য কেউ সম্মানিত না? গণতান্ত্রিক না? এটা হতে পারে না। সবাইকে যুক্তিবাদী হতে হবে। একজন নির্বাচিত হলেই তিনি গণতান্ত্রিক হয়ে যান না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মানেটা হলো আসলে একজন ন্যায়বান রেফারি। শেখ হাসিনা তো নিশ্চয়ই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চান। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে না- এই ভয় কেন? জয়ের জরিপ অনুসারে তারা নাকি জিতে যাবেন তাহলে একটা ন্যায়বান রেফারির অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের সমস্যা কি?
নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে তিনি একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এ সময়। বলেন, দেশের বিশিষ্টজনদের একটি তালিকা তৈরি করে তা পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টিভির মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। সাধারণ মানুষ তাদের কারও বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও কর ফাঁকির অভিযোগ থাকলে তা উত্থাপন করার সুযোগ পাবেন।
ওই তালিকার ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদে আলোচনা করে ২০ জনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে নিযুক্ত করবেন। সংসদের ওই আলোচনায় বিরোধী দলসহ স্পিকারের বিশেষ আমন্ত্রণে ড. কামাল, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আসম আবদুর রব, সিপিবি ও বাসদের প্রধান, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন তিনি।
এ চিকিৎসাবিদ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে শান্তি আনতে পারলে তো নন্দিত হবে। নিজেরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে গিয়ে দেশে সংঘাত সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগের কি লাভ? জনগণ কি কানে কানে বলে দিয়েছে যে, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। আওয়ামী লীগ তো অনেক কাজ করেছে।
৪০০০ ডাক্তারকে তারা চাকরি দিয়েছে। সমস্যা হলো ওই ডাক্তাররা গ্রামে থাকেন না। প্রধানমন্ত্রী কঠোর ভাবে নির্দেশ দিতে পারেন অবশ্যই গ্রামে তিন বছর থাকতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ মেডিকেল কলেজের আসন ২০০০ বাড়িয়ে দিক। ক্ষমতায় এলে ভাল কাজ করবো- এই কথা না বলে এই তিন মাসে কাজ করে দেখালেই তো মানুষ ভোট দেবে।
তাতে নিজের ক্ষমতায় থাকতে হবে কেন? আওয়ামী লীগ কাজ করেছে অনেক। কিন্তু লুটপাট আর দুর্নীতি হয়েছে ব্যাপক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৬৪টি জেলা করেছেন। আপনারা দেশকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ১০টি বিভাগ ঘোষণা দেন। তাহলে গ্রামীণ উন্নয়ন হবে।
এতে স্থানীয় সরকারে বিএনপি, আওয়ামী লীগ সবাই কিছু কিছু এলাকায় বিজয়ী হবে। কম্যুনিস্টরাও দু’একটা আসনে বিজয়ী হতে পারে। তাহলে আমরা দেখতে পারবো তারা বাস্তবে জনগণের জন্য আসলে কিছু করতে পারেন কিনা।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব বললেন তিনি জেলখানায় আছেন। তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হলেন কেন? চেয়ারের জন্য? সরকার তাকে ফ্রি খাওয়া-চিকিৎসা দেবে সে জন্য? এটাও এক ধরনের দুর্নীতি।
এটা হচ্ছে মানসিক দুর্নীতি। তিনি নিজে স্পিকার থাকা অবস্থায় জজ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সমালোচনা করলেন, অন্যায় করেছেন বলে ভর্ৎসনা করলেন। তিনিই প্রেসিডেন্ট হয়ে তাকে আপিল বিভাগের জজ হিসেবে মনোনয়ন কিভাবে দিলেন?
যারা তৃতীয় শক্তির কথা বলেন, তারাও তো কলকাতা, বোম্বে, ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসা নেন। আমি তো আমার চোখের অপারেশন আমার নিজের হাসপাতালেই করেছি সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ করে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জয়ের মতো লোক নির্বাচন করবে, ভাল কথা।
কিন্তু তার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে এলে ভাল হয়।
সংসদসহ বিভিন্ন ফোরামের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করার পক্ষে মত দেন তিনি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতা প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘ, বৃটেন, আমেরিকা কেন মধ্যস্থতা করবে? কেন নিজেদেরকে অপমানিত করবো? দুই নেত্রী কি ১০০টা লোকও বাছাই করতে পারছেন না? একজন লোকও বিশ্বাস করতে পারছেন না? দেশের সমস্যা অনেক। সমাধানের জন্য কোন কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা প্রয়োজন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংবিধানটা আমূল পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতি সব শেষ করা যাবে না।
কিন্তু গরিব মানুষের ওপর দুর্নীতি তো বন্ধ করা যায়। নগর আর গ্রামের মানুষের বৈষম্য কমাতে হবে। এটা করতে না পারলে স্বাধীনতা অর্থহীন থেকে যাবে।
তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়ে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃতীয় শক্তির কথা তো বলছেন বামপন্থি, কম্যুনিস্টরা। তারা সারাজীবন জনসম্পৃক্ত বিষয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে জনগণকে কি দেবেন সে ব্যাপারে আমাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। তারা তো এখনও একটা ইশতেহার দিতে পারেননি। তারা সংবিধানের কি পরিবর্তন আনবে, স্বাস্থ্য খাতে কি করবেন? বহুজাতিক কোম্পানিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? দুর্নীতি কমানোর জন্য তাদের নীতি কি হবে? গণতন্ত্রের বুনিয়াদ, নারী ক্ষমতায়ন, ইসলামী পারিবারিক আইন, ট্রানজিট, তিস্তা, ট্যাক্স ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্রায়ন, সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধে তারা কি করবেন তা তো স্পষ্ট করেননি। তিনি বলেন, তৃতীয় শক্তির কথা যারা বলেন, তারা তো সিগারেট খান। তাহলে এই ক্ষতিকর বিষয় কিভাবে মোকাবিলা করবেন?
ধর্মীয় রাজনীতির প্রশ্নে তিনি বলেন, হাসিনা যদি ঘোষণা দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর সকালে কোরআন শরীফ পড়তে পারেন, মতিয়া চৌধুরী যদি ঘোষণা দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন তাহলে হুজুরদের নির্বাচন করতে দোষ কোথায়? সবাই তো একই রকম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।