ঈদের ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন।
টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে কেউ ফিরে যাচ্ছে, কেউবা কালোবাজারিদের দ্বারস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো কোনো প্রেক্ষাগৃহে দুই-তিন দিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। প্রদর্শক সমিতি ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বলছেন এ চিত্র আশাতীত।
নব্বই দশকের শেষভাগে দেশি চলচ্চিত্র মন্দাবস্থায় পতিত হলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় বিরল হয়ে পড়ে। এবার ঘটল ব্যতিক্রম ঘটনা। এই ঈদে মুক্তি পেয়েছে তিনটি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো- এমএ জলিল অনন্ত পরিচালিত 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা', বদিউল আলম খোকনের 'মাই নেম ইজ খান' এবং পিএ কাজলের 'ভালোবাসা আজকাল'। প্রথমটি ৩২ এবং শেষের দুটি ৭১টি করে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।
প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহেই দর্শক সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। তিনটি চলচ্চিত্রেরই ওপেনিং কালেকশন ছিল গড়ে শতকরা ৯৫ থেকে ১০০ ভাগ। 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' চলচ্চিত্রের প্রধান দুই অভিনয় শিল্পী হলেন অনন্ত ও বর্ষা, মাই নেম ইজ খান'এ শাকিব-অপু এবং 'ভালোবাসা আজকাল'-এ শাকিব-মাহী। ঢাকার মধুমিতা, বলাকা, রাজমণি, স্টার সিনেপ্লেঙ্সহ প্রায় প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের বিপুল উপস্থিতি। প্রতিটি শো হাউস ফুল।
ঢাকার মতো সারা দেশের একই চিত্র। হঠাৎ করে মৃতপ্রায় দেশি চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবন কীভাবে ঘটল। এ কথা জানিয়েছেন প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা ও প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো_
মিয়া আলাউদ্দীন
[সাধারণ সম্পাদক, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি] : ঈদের ছবির প্রতি এমনিতেই দর্শকআগ্রহ বেশি থাকে। তবে এবারের ঈদে তিনটি কারণে আশাতীত দর্শক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথমটি হলো_ গত এক যুগের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম ছবি মুক্তি পেয়েছে। দ্বিতীয়টি ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নির্মাণ ও প্রদর্শনের কারণে দর্শক ঝকঝকে ছবি এবং নিখুঁত শব্দ শুনতে পাচ্ছে। সর্বশেষ নির্মাতারা এখন গল্প ও নির্মাণে যত্নবান হচ্ছেন। ফলে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। এতে দর্শক এগুলো সাদরে গ্রহণ করছেন।
এটি শুভ লক্ষণ।
ইফতেখার নওশাদ
[কর্ণধার, মধুমিতা] : পরিমাণে কম হলেও নির্মাতারা সুস্থ ধারার পরিচ্ছন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টা করছেন। ফলে পরিবার নিয়ে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসতে পারছেন। এই ঈদের তিনটি চলচ্চিত্রই মানসম্মত। তা ছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এই ঈদে কম চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ায় বিপুল দর্শক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
শামসুল আলম
[ব্যবস্থাপক, আনন্দ] : এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রতিটি ছবির মানই ভালো। এ ছাড়া এগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নির্মিত। গল্পও ভালো। তাই তিনটি চলচ্চিত্রের প্রতি আশাতীত সাড়া মিলেছে। গত পাঁচ থেকে সাত বছর আনন্দ প্রেক্ষাগৃহে ঈদের দিনের কালেকশন ৫০ থেকে ৬০ হাজারের বেশি ছিল না।
এবার এর পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার টাকা।
কামাল উদ্দীন
[কর্মকর্তা, বলাকা] : এখন আবার দর্শক রুচি অনুযায়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। বাজেট, লোকেশন, গান, গল্প সবদিক দিয়েই মানসম্মত চলচ্চিত্র পাচ্ছে দর্শক। তা ছাড়া দীর্ঘ কয়েক বছর পর এবার কমসংখ্যক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। ফলে ব্যবসায়িকভাবে প্রতিটি চলচ্চিত্রই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
জাহিদ
[হিসাবরক্ষক, রাজমণি] : মানসম্মত ছবি নির্মাণ, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কমসংখ্যক চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ায় এবারের ঈদে আশাতীত সাড়া পাওয়া গেছে। দর্শক রুচির সঙ্গে চলচ্চিত্রগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। ফলে নির্মাতা, দর্শক ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা লাভবান হয়েছেন।
মেসবাহ উদ্দীন
[কর্মকর্তা, স্টার সিনেপ্লেঙ্] : নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চলচ্চিত্রটির প্রতি দর্শকআগ্রহ বেশি হওয়ায় দুই দিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কারণ অনন্ত জলিলের চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকআগ্রহ
এমনিতেই প্রচুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।