আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ইসি তবু অনড়

দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে (নির্বাচনী) আচরণ বিধিমালা সংশোধন করা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখেও নড়ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে আন্দোলনের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে আচরণবিধি সংশোধন যেমন প্রয়োজন, তেমনি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন উপযোগী আচরণবিধি করতে গিয়ে সুবিধা পাচ্ছে সরকারি দল। আর অসুবিধায় পড়ছে প্রধান বিরোধী দলসহ ১৮ দলীয় জোট। এরই মধ্যে ইসির তৈরি আচরণ বিধিমালা ও আরপিও সংশোধন নিয়ে সুশীল সমাজ এবং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে।

এমনকি আচরণবিধি ইস্যুতে ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে বিরোধী দল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই নিজেকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিচ্ছে বিরোধী দলকে। আর তাই বিরোধী দলের আন্দোলনের তীর যাচ্ছে ইসির দিকেই। আচরণবিধি অনেকটাই ইসির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে আচরণবিধি সংশোধন করলে সমালোচনা হতো না বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা।

জানা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচনী আচরণবিধিতে আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২০ মন্ত্রী বা মনোনীত ব্যক্তিকে বিশেষভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সুবিধা দিতেই সংশোধন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এরই মধ্যে বিএনপি আচরণবিধি সংশোধন ও আরপিও সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে সচিবালয় থেকে আচরণবিধির খসড়া করা হয়েছে। সেখানে ভারতের নির্বাচন কমিশন থেকে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে। এতে নির্বাচনের সময় দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাকে প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আরচণবিধি সংশোধন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সুপারিশও করা হয়েছে।

কিন্তু কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এদিকে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে বিধিবিধান সংশোধন করা হলে ইসির বিরুদ্ধেও আন্দোলনে যাবে। তাই সরকার ও বিরোধী দল অর্থাৎ দুই পক্ষের মন রক্ষা করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দুই কূল রক্ষার কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো সমঝোতায় না আসায় ইসির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।

তাই যত তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে ততই ভালো। কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসিকে দুই ধরনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

ইসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোন ধরনের সরকারব্যবস্থার অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে তা ঠিক না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে নির্বাচন কমিশন সঠিক করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে না। সাংবিধানিক সংস্থা হলেও প্রচলিত সংবিধান মানতে বাধ্য ইসি।

তাই সংবিধানের আলোকে আচরণবিধি সংশোধন করতে হলে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এমনটাই ধরে নিয়ে কাজ করতে হবে। কেননা সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বিরোধী জোট শুরু থেকেই এ পদ্ধতি বাতিলের জন্য আন্দোলন করে আসছে। কাজেই সংবিধান মোতাবেক আচরণবিধি পরিবর্তন করলে তা বিরোধী দল মেনে নেবে না এবং আন্দোলন ইসির বিরুদ্ধেও শুরু করবে।

এদিকে সরকারের অবস্থানেও কোনো পরিবর্তন নেই। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করবে না। আবার আচরণবিধি সংশোধন না করলেও নির্বাচন করতে পারবে না ইসি। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রায় প্রতিদিন এ নিয়ে বৈঠক করেও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের মনোনীতদের (মন্ত্রী) নির্বাচনী প্রচারণা করার সুযোগ দিয়ে কমিশন আচরণবিধি করলে নির্বাচনে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' নষ্ট হবে। আর নির্বাচন হবে বৈষম্যমূলক। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা সংশোধন করার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ করা উচিত। এ ছাড়া এ ধরনের আচরণবিধি দিয়ে নির্বাচন করলে দেশে সংকট সৃষ্টিও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সাবেক এই কমিশনার বলেন, বিএনপি আরপিও প্রত্যাখ্যান করেছে।

কিন্তু দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যদি আরপিও সংশোধন করা হতো তবে সমালোচনা হতো না।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.